শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বিখ্যাত পুজো এবং ঐতিহ্যবাহী পুজো। এই পুজো শতাব্দীপ্রাচীন পুজোও বলা চলে। কিন্তু শোভাবাজার রাজ পরিবার আদপে দুটোভাগে বিভক্ত। বড় তরফ ও ছোট তরফ। দুই পরিবারের দুটি ভিন্ন ভিন্ন বাড়ি এবং দুটি বাড়িতেই দুটি ভিন্ন দুর্গাপুজো হয়। বড় তরফ মূলত শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দত্তক পুত্র গোপীমোহন দেবের বংশধরেরা।আর ছোট তরফ হল, রাজা নবকৃষ্ণের নিজ পুত্র রাজকৃষ্ণ দেবের বংশধরেরা। রাজা নবকৃষ্ণ ১৭৫৭ সালে বড় তরফের বাড়িতেই প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। তবে পরবর্তীকালে তিনি ছোট তরফের বাড়িতেও পুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তীকালে রাজকৃষ্ণ দেবের হাত ধরেই বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই পুজো।এই হল শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস। এই বাড়ির পুজো এই বছর ২৬৫ তম বছরে পা রাখল। তবে এ বাড়িতে মা পূজিতা হন বাড়ির মেয়ের রূপেই।
এ বাড়ির কিছু নিয়ম নীতি আছে। আর সেসব নিয়ম সময়ের কারণেই ফিকে হয়ে যেতে বসেছে। যদিও এ বছর রাজবাড়ির পরিবারের লোকেরা আবার পুরনো রেওয়াজ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন। মায়ের সাজ পর্ব শেষ হয় ষষ্ঠীতেই। মায়ের পুজো এবছর আবার আগের মতোই সোনার গিনি দিয়ে হবে। সপ্তমীর সকালে আবার নহবতখানা থেকে সানাইয়ের রাজকীয় সুর পাওয়া যাবে । আগের রীতি মেনে সানাই বাজিয়েই চলবে পুজো। সপ্তমীর ভোরে ১০৮ ঘড়া গঙ্গাজল গোলাপ জল সিদ্ধি মধু কেশর জল দিয়ে স্নান করানো হবে কলাবউকে । পঞ্চপ্রদীপ দিয়ে আরতি। রাজবাড়ির বংশধর দেবরাজ মিত্রের হাত ধরলেই ফিরল শোভাবাজার রাজবাড়ির পুরনো রীতি।
আরো পড়ুন
কিন্তু কেনই বা বন্ধ হয়েছিল এই পুরনো রীতি? দেবরাজ মিত্রর বক্তব্য, বেশ কয়েক পুরুষ কখনও অর্থনৈতিক কখনও বা অন্যান্য পারিবারিক জটিলতার কারণে এই পুরনো রীতিগুলি একরকম বাতিল করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিবারের সদস্যরাই আবার পুরনো রীতির সাথে বর্তমানকে পরিচয় করিয়ে দিতে চান।
তাই আবার শোভাবাজার রাজবাড়িতে ফিরতে চলেছে পুরনো নিয়মকানুন। শোভাবাজার রাজবাড়ি ঐতিহ্যের যে গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও তা ফিকে যাতে না হয় তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন পরিবারের বর্তমান প্রজন্মরাই।