Home পৌরাণিক কাহিনী স্থাপত্য- ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ খাজুরাহোর কান্দারিয়া মহাদেব মন্দির

স্থাপত্য- ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ খাজুরাহোর কান্দারিয়া মহাদেব মন্দির

by banganews

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর প্রাচীন নগরী হল খাজুরাহো। মধ্যপ্রদেশের কিছুটা উত্তরদিকে তৎকালীন বুন্দেলখন্ড এবং বর্তমান ছত্রপুর জেলাতে অবস্থিত খাজুরাহো। দ্বাদশ শতকে তৈরি হওয়া এই মন্দির নগরীর 85 টি মন্দিরের মধ্যে কালের স্রোতে প্রায় 25 টি মন্দির এখনো টিকে আছে। খাজুরাহোর মন্দির গুলি সাধারণত হিন্দু নগররীতির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের প্রতীক।

আরো পড়ুন – দেবজি মহারাজ মন্দিরের ভূতের মেলা

খাজুরাহোর মন্দির গুলির মধ্যে কান্দারিয়া মহাদেবের মন্দিরটি হল সর্ববৃহৎ এবং স্থাপত্য-ভাস্কর্য সমৃদ্ধ মন্দির। বুন্দেলখন্ডের চান্দেল বংশের হিন্দু রাজা বিদ্যাধরের রাজত্বকালে তৈরি হয়েছিল এই অপূর্ব শিল্পকলা। মনে করা হয় 950 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1030 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রানাইট পাথরের ভিতের ওপর বেলেপাথরের মন্দির। পাহাড়ের আকৃতিতে তৈরি এই মন্দিরটিতে প্রস্তরখণ্ড গুলি ধাপে ধাপে বসিয়ে বানানো হয়েছিল এই মন্দির। কান্দারিয়া মন্দিরটি প্রায় 6500 বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং 31 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট। 840 টি মূর্তি দিয়ে সাজানো এই মন্দিরটি খাজুরাহোর অন্যতম আকর্ষণ। এই প্রতীকী মূর্তি গুলি দিয়ে সাধারণত তৎকালীন জীবনযাত্রা দেখানো হয়েছে। কান্দারিয়া মন্দিরের গাত্রে খোদিত যৌন ভাস্কর্য রচনার পেছনে তৎকালীন ধারণা ছিল যে এইরকম ভাস্কর্য থাকলে মন্দিরে বজ্রপাত হয়না। তাছাড়া চান্দেল রাজারা মধ্যভারতের বনচারী জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত থাকায় তাঁদের মধ্যে এই ধরনের রীতি প্রচলিত ছিল। কান্দারিয়া মন্দিরের মূল দেবতা শিব হলেও এখন পূজার্চনা হয় না।

কথিত আছে যে সংস্কৃত শব্দ খর্জুর বা খেজুর থেকে খাজুরাহোর নামকরণ করা হয়েছিল। শোনা যায় মন্দিরের প্রবেশপথে দুটি সোনার খেজুর গাছ ছিল। আবার এই নিয়ে ভিন্নমতও প্রচলিত আছে, কেউ কেউ বলেন শিবের প্রতীকী নাম থেকে খাজুরাহোর উৎপত্তি। হিন্দুপুরাণ মতে খাজুরাহো শিব পার্বতীর বিবাহের স্থান।

আরো পড়ুন – ভারতের একমাত্র আদিবাসী মহিলা আর জে শিখা মান্ডির গল্প

ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী, দিল্লির মুসলিম সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক ত্রয়োদশ শতকে খাজুরাহো দখল করেন। প্রায় অষ্টাদশ শতক অবধি খাজুরাহো মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল। এই সময় সিকন্দর লোদী প্রচুর মন্দির ধ্বংস করেন। দীর্ঘদিন অবহেলা ও অযত্নে বাকি মন্দির গুলি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে পরে অনেক মন্দিরের সংস্কার সাধন হয়েছে। 1986 সালে খাজুরাহোর মন্দিরসমূহ ‘ভারতের অন্যতম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান’ হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে।

খাজুরাহোর বৈচিত্র্যে এবং ব্যাপ্তি বিশাল। খাজুরাহোর কান্দারিয়া মন্দিরে ছাড়াও আরও অসংখ্য মন্দির আছে যেগুলো শুধু ধর্মাচরণের জন্য নয় স্থাপত্য- ভাস্কর্যের জন্যও সমানভাবে প্রসিদ্ধ।

You may also like

Leave a Reply!