জেলা পূর্বমেদিনীপুর, শহর তমলুক। এই শহরেই বিরাজ করেন আমার আপনার সকলের মা, দেবী বর্গভীমা। একান্নটি শক্তিপীঠের প্রথম এই পীঠে সতীর বাম গোড়ালি পড়েছিল। দেবী এখানে ভীমরুপা ‘কপালিনী’ ও তার ভৈরব হলেন সর্বানন্দ। কথিত আছে মহাভারতের সময় ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের রাজত্বকালে রাজার নির্দেশ অনুযায়ী এক জেলেনি রাজার নির্দেশে রোজ জ্যান্ত শোল মাছ নিয়ে যেতেন রাজবাড়িতে। একদিন রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন সবকটি মাছ মরে গেছে, পাশেই ছিল একটা জলাশয়, সেই জলাশয়ের জল মাছের উপর ছিটিয়ে দিতেই মাছগুলো আবার বেঁচে উঠেছিল। এই অতিলৌকিক ঘটনার কথা রাজা জানতে পারেন। এরপর রাজা সেই জলাশয়ের পাশে বেদির উপর একটি বিগ্রহ দেখতে পেয়েছিলেন। রাজা বুঝতে পারেন এই দেবী জাগ্রতা এবং এই জলাশয়ের জলের দৈবগুণ আছে। তখন রাজা তাম্রধ্বজ এই পবিত্র জলাশয়ের পাশে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আজ মা বর্গভীমার মন্দির নামে পরিচিত। আজও এই মন্দিরে কালীপূজোতে শোল মাছ দিয়ে ভোগ করা হয়। এই মন্দির স্থাপন নিয়ে আরও একটি কাহিনি কথিত আছে, শোনা যায়, ধনপতি সওদাগর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কাহিনি থেকেই আমারা আন্দাজ করতে পারি এই মন্দিরের প্রাচীনত্ব। মা বর্গভীমা তমলুকের এই মাতৃমন্দিরে এক হাজার বছরের বেশী সময় ধরে বিরাজ করছেন।
মায়ের রূপ নিয়ে মতবিরোধ দেখা যায়, কেউ বলেন কালী, কেউ বলেন উগ্রতারা, কেউ আবার বলেন মা ভীমাদেবী। হাজার বছরের বেশী সময় ধরে মা দুর্গা, মা কালী, মা জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করে আসছেন ভক্তরা। পণ্ডিতেরা বলে থাকেন দেবী ভক্তদের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ দান করেন তাই দেবী বর্গভীমা নামেই পরিচিত। তমলুকের মানিকতলা মোড় থেকে অনতিদূরে মায়ের মন্দির। নাটমন্দির, যজ্ঞ মন্দির, জগমোহন ও মূল মন্দির রয়েছে এখানে। মূলমন্দিরের গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরে নির্মিত দেবীর মূর্তি।
আরো পড়ুন –
দেবী কৃষ্ণবর্ণা, মুক্তকেশী ও করালবদনা। চতুর্ভুজা দেবীর ডানদিকের দুটি হাতে আছে খড়্গ ও ত্রিশূল, বাম হাত দুটিতে খর্পর ও নরমুণ্ড। দেবীর মাথায় সোনার মুকুট ও সর্বাঙ্গে নানান অলঙ্কার। শোনা যায় মায়ের মন্দির স্বয়ং কালাপাহাড়ও ভাঙতে পারেননি। দীপান্বিতা কালীপূজোর দিন মায়ের মন্দির প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। কালীপূজোয় সারারাত খোলা থাকে মায়ের মন্দির। কালীপূজোর নৈবেদ্য আসে তমলুকের রাজবাড়ি থেকে।
প্রাচীন শাস্ত্রে এই মন্দিরের কথা আমরা দেখতে পাই, শাস্ত্র অনুযায়ী “কপালিনী ভীমারূপা বামগুলফো বিভীষিকে”। প্রাচীনকালে তাম্রলিপ্ত বন্দরকে বিভীষক বলা হত। এছাড়া কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের লেখাতেও মা বর্গভীমার উল্লেখ পাওয়া যায়।