মন্দির মানেই পবিত্র স্থান, ভগবানের বাস। মানুষ মনের শান্তি পেতে যেকোনো সমস্যায় ছুটে যান মন্দিরে। ভারতের বেশ কিছু মন্দির আছে যেখানে শুধু ভগবানের বাস নেই, ঘটে চলেছে নানান অদ্ভুত ঘটনা বলি। এরকমই একটি মন্দির হল দেবজি মহারাজ মন্দির। আরও রহস্যময় ঘটনা হল এই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হওয়া ভূতের মেলা। রথের মেলা, গাজনের মেলা আমাদের সবারই জানা,কিন্তু ভূতের মেলা? ভোপাল থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরে মালাজপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম বেতুল। এই বেতুলে অবস্থিত দেবজি মহারাজ মন্দিরেই অনুষ্ঠিত হয় চারশো বছরের পুরোনো এই অদ্ভুত মেলা। সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই অদ্ভুত মেলা প্রত্যক্ষ করার জন্য এই মন্দিরে উপস্থিত হন।
আরো পড়ুন – সমুদ্রের ভেতরে ঠিক 1.5 কিলোমিটার গেলে দেখা পাওয়া যায় এই মন্দিরের। নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির।
ভারতবর্ষের নানা অঞ্চলে ভূতপ্রেত তাড়ানোর জন্যে ঝাড়ফুঁকের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও ভূতের মেলা একটি অদ্ভুত ঘটনা। দেবজি মহারাজ মন্দিরের এই মেলাটি সাধারণত প্রতিবছর পৌষ পূর্ণিমা থেকে বসন্ত পঞ্চমী পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। বহুপ্রাচীন কাল থেকে এই মন্দিরে ঝাড়ফুঁক চলে আসছে। গুরু দেওজি সন্ত মহারাজের সমাধির সামনে প্রতিদিন বিকেল বেলা আরতির পর অশুভ আত্মাকে তাড়িয়ে মানুষদের সুস্থ করা হয়। কথিত আছে গুরু দেওজি সন্ত একজন অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন রাজপুরোহিত ছিলেন। শোনা যায় তিনি বালিকে চিনিতে, পাথরকে নারকেলে, কাদাকে ফসলে পরিবর্তিত করতে পারতেন। অশুভ শক্তি কে বিতাড়িত করার অদ্ভুত ক্ষমতাও তাঁর ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতিতে গ্রামবাসীরা একটি সমাধি মন্দির তৈরি করে এবং সেখানেই প্রায় দুই দশক ধরে ঝাড়ফুঁক কলে ভূত তাড়ানো চলছে। আরতির পর সাধারণ দর্শনার্থীরা ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে এবং ভূতে ধরা মানুষেরা ঘড়ির কাঁটার দিকে মন্দিরটি পরিক্রমা শুরু করেন। এই পরিক্রমার সময় গুরু মহারাজের নামে মন্ত্রোচ্চারণের মাঝেই মন্ত্রঃপুত জল ছিটানো হয়। এরপরেই ভূতে ধরা মানুষেরা পাগলের মতো আচরণ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এই মন্দিরে সাধারনত ভূতে ধরা মহিলারাই আসেন। 2019 সালে এখানে প্রায় এক হাজার মহিলাকে ঝাড়ফুঁক করা হয়।
বিভিন্ন বিজ্ঞানমনস্ক এবং প্রগতিশীল মানুষ এই প্রথা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বারবার। মনোবিদরা মনে করেন, এই ভূতে ধরা মানুষ গুলি মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং এই রীতি চলতে থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু বহু সচেতনতা মূলক প্রচারের পরও এই প্রথা বিলোপ করা সম্ভব হয়নি। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এই ধরনের অদ্ভুত ঘটনা যে ঘটে চলেছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সে যাইহোক ভূতের মেলা ঘটনাটি বেশ মজার এবং চাইলে একবার ঘুরে আসাই যায় বেতুল থেকে।