Home বঙ্গ ভারতের একমাত্র আদিবাসী মহিলা আর জে শিখা মান্ডির গল্প

ভারতের একমাত্র আদিবাসী মহিলা আর জে শিখা মান্ডির গল্প

by banganews

 

কলকাতা থেকে প্রায় একশো সত্তর কিলোমিটার দূরে জঙ্গল আর মন্দিরে ঘেরা সুন্দর ছোট্ট জেলা ঝাড়গ্রাম। কলকাতার যান্ত্রিক জীবনের চেয়ে অনেক শান্তির এই ছোট্ট শহরের বেলপাহাড়িতে জন্ম ভারতের প্রথম আদিবাসী মহিলা আর জে শিখা মান্ডির। প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের মাতৃভাষা সাঁওতালি হলেও এই ভাষা যথাযথ মর্যাদা কখনোই পায়নি। একমাত্র আকাশবাণী ছাড়া আর কোনো বেসরকারি রেডিও চ্যানেলই সাঁওতালি ভাষায় অনুষ্ঠান হয় না। তাই শিখা সাঁওতালি ভাষাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ঝাড়গ্রামে রেডিও মিলন এর এফএম চ্যানেলই হোস্ট করে চলেছেন সাঁওতালি ভাষার একটি অনুষ্ঠান।

আরো পড়ুন – একদিন হোটেলে এঁটো থালা ধুয়েছেন, আজ রোজগার করেন মিনিটে ২০০০ টাকা ৷ 

শিখা ঝাড়গ্রামের মেয়ে হলেও পড়াশোনা করেছেন কলকাতায়। কলকাতায় জেঠুর বাড়িতে বড়ো হওয়া শিখা স্কুল শেষ করে পরিবারের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর যখন তিনি চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সেই সময় তাঁর হঠাৎ করেই আর জে হওয়ার সুযোগ আসে। যদিও সাধারণ বাড়ির ছেলে মেয়েদের কাছে আজও আর জে হওয়ার রাস্তাটা সহজ নয়। চাকরি না স্বপ্ন এই দ্বন্দ্বের মাঝেই শিখা নিজের ছোটোবেলার স্বপ্নকে গুরুত্ব দেন। চেনা রাস্তায় না হেঁটে ঝাড়গ্রামের ফিরে আসেন স্বপ্নের টানে। এর পরের গল্পটা রূপকথার মতো আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
শিখাকে প্রথমবার তাঁর করা অনুষ্ঠান জোহার ঝাড়গ্রামের কথা জানতে চাওয়া হলে শিখা বলেন, ‘সানাম ক ইঞা জোহার আর দুলেড়ঃ’ যার বাংলা হল ‘সবাই কে আমার নমস্কার ও ভালবাসা’ এই কথাগুলি প্রথমবার উচ্চারণের সময় তিনি বুঝতেই পারেননি যে এটা স্বপ্ন না সত্যি। ছোটো থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর অনুষ্ঠান শুনে বড়ো হওয়া শিখার কাছে নিজের মাতৃভাষায় শো হোস্ট করাটা স্বপ্নের চেয়ে কম কিছু ছিল না। শিখা সবসময় চেয়েছিলেন সাঁওতালি ভাষা ও তার রীতিনীতি সকলের মাঝে পৌঁছে যাক। শিখার অনুষ্ঠিত শো টি আস্তে আস্তে এতটাই পরিচিত পেয়েছে যে এক ঘন্টার অনুষ্ঠানটিকে বাড়িয়ে দুঘণ্টা করা হয়েছে। রেডিও মিলন থেকে জানানো হয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ প্রতিদিন শিখার এই শো টি শোনেন।সপ্তাহে পাঁচদিন অনুষ্ঠিত আর জে শিখার এই শো টিতে সাম্প্রতিক সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয় কিন্তু ভাষাটা সাঁওতালি। শিখা অনেকের অনুপ্রেরণা কিন্তু শিখার অনুপ্রেরণা কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আর জে মীরের অনুষ্ঠান শিখার খুব ভালো লাগে। মীর শিখার কথা জানতে পারলে তিনি শিখাকে আগুনের শিখার সঙ্গে তুলনা করে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এরকম শিখাকে জ্বালিয়ে রাখা সকলের কর্তব্য।

আরো পড়ুন – ওয়েবসিরিজ লালবাজার মুক্তি পাচ্ছে এই জুনেই

স্বপ্নকে সঙ্গী করে কিভাবে সাফল্যে পৌঁছানো যায় তার অন্যতম উদাহরণ হলেন শিখা। আজকের যুবসমাজ যখন সাফল্যের দৌড়ে স্বপ্ন ভুলতে ভুলতে ক্লান্ত ঠিক তখনই শিখার গল্প অনেককেই সাহস জোগায়। ভারতের প্রথম আদিবাসী মহিলা আর জে শিখার গল্পটাও কিন্তু সহজ ছিল না। পরিবারের বাধা,চেনা পরিচিত ছকের বাইরে কিছু করার চেষ্টা, নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর হাতছানি সব কিছু ছুঁড়ে ফেলে নতুন ভাবনা ভাবতে শিখাও ভয় পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি থেমে যাননি। শিখার গায়ের রঙ থেকে বেড়ে ওঠার প্রতিমুহূর্তে শুনতে হয়েছে বিদ্রুপ। আজকের যুগেও ফর্সা হওয়ার ক্রিম, সাবানের বিজ্ঞাপনের মাঝে হীনমন্যতায় ভোগা অনেক মেয়ের কাছেই শিখা সত্যিই তাঁর নামের মতোই উজ্জ্বল।

You may also like

Leave a Reply!