Home পৌরাণিক কাহিনী চলতি কথায় সবাই আমরা সুন্দরী নারী দেখলে বলি অপ্সরা। আসলে কারা এই অপ্সরা ?

চলতি কথায় সবাই আমরা সুন্দরী নারী দেখলে বলি অপ্সরা। আসলে কারা এই অপ্সরা ?

by banganews

নাচে-গানে পারদর্শী স্বর্গের এই উপদেবীরা হিন্দু এবং বৌদ্ধ পুরাণ অনুসারে মেঘ এবং জল থেকে উদ্ভুদ্ধ নারী আত্মা। সংস্কৃত শব্দ অপ্ ( বাংলা অর্থ জল বা পানি) হতে এদের উৎপত্তি তাই এদের অপ্সরা বলা হয়। ইন্দ্রের সভা গায়িকা ও নর্তকী হিসেবে পরিচিত এই নারীরা ঋগ্বেদ অনুযায়ী গন্ধর্বের স্ত্রী। গন্ধর্বরা হল পুরুষ আত্মা যারা আংশিক ভাবে পাখি বা ঘোড়া। এরা সুরে পারদর্শী। গন্ধর্বদের বাদ্যযন্ত্রের তালেই অপ্সরারা নৃত্য পরিবেশন করে। দু’ধরনের অপ্সরা আছেন— লৌকিক এবং দৈবিক। মায়াবলে নিজ দেহের আকার পরিবর্তনে সক্ষম উপদেবীরা দেবতা ও মানবকে প্রলুব্ধ করেন বলে পুরাণে উল্লেখ আছে। অর্থবেদ অনুসারে এরা পাশা খেলায় খুব পারদর্শী ছিল। তাই তাঁরা জুয়া খেলায় ভাগ্য নির্ধারণ করেন।

আরও পড়ুন ৩৪০ বছরের পুরোনো তেহট্টের কৃষ্ণরায় মন্দিরের স্নানযাত্রা

অপ্সরাদের রানি রম্ভা হলেও উর্বশী সবচেয়ে নামী অপ্সরা । বেদে একমাত্র উর্বশীর নামেরই উল্লেখ রয়েছে। উর্বশীর কি ভাবে জন্ম হয়েছে তা নিয়ে নানা ধরনের মত প্রচলিত আছে। শোনা যায় নর ও নারায়ণ এই দুই মুনিবর এক দীর্ঘ তপস্যায় রত ছিলেন। তাঁদের তপস্যার প্রবলতা আশঙ্কা জাগিয়েছিল ইন্দ্রের মনে। ইন্দ্র ভেবেছিলেন এই দুই ভ্রাতা তাঁর সিংহাসন কেড়ে নিতে চায়। গভীর তপস্যা স্বর্গ মর্ত পাতালের উষ্ণতা ভয়ঙ্করভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইন্দ্র নিজে তাঁদের সামনে উপস্থিত রয়ে তাঁদের বর প্রদান করতে চাইলেও তাঁদের ধ্যান ভঙ্গ হল না। মায়া ও সম্মোহনের বল প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হলেন ইন্দ্র। তাই অন্য এক বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন দেবরাজ। ইন্দ্রের আদেশে কামদেব তাঁর স্ত্রী রতি ও অন্য দুই অপ্সরা রম্ভা ও তিলোত্তমা উপস্থিত হলেন নর নারায়ণের ধ্যান ভঙ্গ করতে। অপ্সরারা সম্মোহিনী নৃত্য শুরু করলেন এবং কামদেব সমস্ত পুষ্প প্রস্ফুটিত করলেন শীত ঋতুতেই। অবিচল মুনিবর এর মধ্যে নারায়ণ ইন্দ্রের অভিসন্ধি বুঝে নিলেন। ইন্দ্রকে নিজের ক্ষমতা বোঝাতে তিনি স্থির করলেন এমন এক অপ্সরার জন্ম তিনি দেবেন যে স্বর্গের অপ্সরাদের থেকেও সুন্দরী। নিজের উরুতে আঘাত করে তিনি জন্ম দিলেন এক অপ্সরার। উরু থেকে জাত বলে সেই অপ্সরার নাম উর্বশী। নর নারায়ণের স্বর্গের সিংহাসনে আরোহণে কোন ইপ্সা ছিল না। তাই উর্বশীকে তিনি ইন্দ্রের সভায় প্রেরণ করেন।

আরও পড়ুন সমুদ্রের ভেতরে ঠিক 1.5 কিলোমিটার গেলে দেখা পাওয়া যায় এই মন্দিরের। নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির।

ঋগ্বেদে উর্বশীর প্রেমকাহিনী সম্পরকেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। উর্বশী প্রেমে পড়েন রাজা পুরূরবার। পুরূরবার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রাজসভায় উর্বশীর নৃত্যের ছন্দ ভঙ্গ হয়। ইন্দ্র উর্বশীকে অভিশাপ দেন। তাই স্বর্গলোক ছেড়ে তাঁকে পৃথিবীতে মানবী রূপে বাস করতে হয়। উর্বশী নতমস্তকে তা মেনে নেন ও তাঁর এক মনোবাসনা পুরণ করতে দেবরাজকে অনুরোধ করেন। তিনি পুরূরবার স্ত্রী রূপে ধরাতলে আসতে চান। দেবতা ইন্দ্র তার এই মনোবাসনা পুরণ করেন কিন্তু এখানে ইন্দ্র কয়েকটি শর্ত দিয়ে দেন। শর্তগুলো অনেকটা এই রকম যে- দিনে তিনবার পুরূরবা উর্বশীকে আলিঙ্গন করতে পারবেন। উর্বশীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে পুরূরবা কখনো উর্বশীর সাথে মিলিত হতে পারবেন না এবং উর্বশী কখনো পুরূরবাকে নগ্ন অবস্থায় দেখতে পারবেন না। পুরূরবার স্ত্রী হিসেবে উবর্শী বহু বছর পার করার পর একদিন দেবকুলের ষড়যন্ত্রে নগ্ন অবস্থায় রাজাকে দেখে ফেলেন উর্বশী। ফলে তাঁকে আবার ফিরে যেতে হয় স্বর্গলোকে। উর্বশীকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন পুরূরবা। কাতর স্বামীকে সান্ত্বনা দিতে উর্বশী একমাত্র বছরের শেষ রাতটি একসাথে কাটাতেন। সারাজীবন উর্বশীর সাথে থাকার জন্য পুরূরবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। এরপর উর্বশী ও পুরূরবা এক সাথে আবার বসবাস শুরু করলেন।

You may also like

Leave a Reply!