Home পৌরাণিক কাহিনী এমন কথা প্রচলিত ছিল যে এই সৌরভ ব্যবহার করলে রাজা অন্দরমহলে তাঁর রাণীর কাছে ছুটে আসতেন।

এমন কথা প্রচলিত ছিল যে এই সৌরভ ব্যবহার করলে রাজা অন্দরমহলে তাঁর রাণীর কাছে ছুটে আসতেন।

by banganews

বৈচিত্রময় এই জীবজগৎ । ঈশ্বরসৃষ্টই হোক বা মহাজাগতিক কিছু ঘটনাসৃষ্টই হোক , জীব জগতে বাস করা প্রতিটি প্রাণের রয়েছে বিশেষত্ব ও নিজস্বতা। প্রকৃতির এই ভাণ্ডার যেকোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনে জাগায় বিস্ময়, আনন্দ ও আগ্রহ।

বহু প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় নারীরা নানারকম ফুল ও প্রাকৃতিক জিনিসের নির্যাস দেহ সৌরভ হিসেবে ব্যবহার করত । এর মধ্যে অন্যতম হল কস্তুরী।
এমন কথা প্রচলিত ছিল যে এই সৌরভ ব্যভার করলে রাজা অন্দরমহলে তাঁর রাণীর কাছে ছুটে আসতেন। আর পুরুষ রাজরাজারা এই সুপারীর মতো একটা কস্তুরী সব সময় নিজের কাছে রাখতো এতে দেহ থেকে এক মনোরম সুগন্ধ বের হোত । কিন্তু কি এই কস্তুরী তা অনেকেরই জানা নেই। কস্তুরী হোল মৃগনাভি। এটি মূলত পুরুষ হরিণের পেটে অবস্থিত সুগন্ধী গ্রন্থি নিঃসৃত সুগন্ধীর নাম। যদিও সব মৃগনাভিতে সুগন্ধ হয় না । মিলন ঋতুতে পুরুষ হরিণের পেটের কাছের কস্তুরী গ্রন্থি থেকে সুগন্ধ বের হয়, যা হরিণীকে অনিবার আকর্ষণ করে ৷ ঋতুর শেষে তা হরিণের দেহ থেকে খসে পরে যায় ৷ সেটা সংগ্রহ করে রোদ শুকিয়ে কস্তুরী তৈরি করা হয় ৷

আরও পড়ুন স্থাপত্য- ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ খাজুরাহোর কান্দারিয়া মহাদেব মন্দির

 

“মাস্ক ডিয়ার” নামে পরিচিত লাজুক স্বভাবের এই হরিণ এর দেখা বিশেষত হিমালয় পর্বতমালার উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে মেলে। শারীরিক গঠনের দিক থেকে বিচার করলে এই মৃগ অনেক বেশি সুন্দর। তারা ছাগলের চেয়ে বড় নয়, পা অতি সরু,মাথা সুন্দর এবং চোখ চমৎকার উজ্জ্বল । সৌন্দর্যকে এক অনন্য মাত্রা দেয় গজদন্ত। গায়ের সম্মোহনী গন্ধ প্রকৃতির এক অভিশাপই বটে এদের কাছে। শিকারির থেকে প্রাণ বাঁচানো দুরুহ হয়ে পড়ে। তাই প্রকৃতির রেক আশীর্বাদে এরা ক এক লাফে চল্লিশ ফুট স্থান অতিক্রম করিতে পারে। দুর্ভাগ্যের কথা হল জনশ্রুতি আছে অনেক সময় এরা নিজেরা বুঝতেই পারেনা এই গন্ধ ততাদের নিজেদের শরীরে রয়েছে তখন সে পাগলের মতো ছুটতে থাকে এই সুগন্ধির সন্ধানে। আবার কোন হরিনের যদি এই গন্ধ যুক্ত নাভি হোত সে সারা বন সৌরভে মাতিয়ে তুলতো এমনকি সে নিজেও এর গন্ধে পাগল হয়ে যেত এবং মৃত্যমুখী হয়ে যেত । সুতীব্র এই সৌরভ সংগ্রহ করাও কঠিন। ঐ গন্ধ অনেকে সহ্য করিতে পারে না; কেউ কেউ গন্ধ দ্বারা বিহ্বল হয়ে পড়ে, এবং অনেকের চোখ, নাক, মুখ হইতে প্রচুর জল বেরিয়ে আসে। এমন অবস্থায় এই সৌরভ প্রাণঘাতী ও হতে পারে।

মহাভারতের এক বিশেষ পর্বে এই মৃগনাভির কথা উল্লেখ আছে। প্রাচীন ভারতের অন্যতম মহাকাব্য রচনার পিছনে মৃগনাভির সুগন্ধের এক বিশেষ ভূমিকা আছে। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব। তাঁর জন্মকথা বিশ্লেষণ করলেই পাওয়া যাবে মৃগনাভির উল্লেখ।

আরও পড়ুন রহস্যময় কৈলাস মন্দিরের কিছু অজানা কাহিনি

 

সত্যবতী হলেন মহাভারতে বর্ণিত হস্তিনাপুরের কুরুরাজ শান্তনুর মহিষী। তিনি কৌরব ও পাণ্ডবদের প্রপিতামহী এবং তিনি বেদব্যাসের জননী । মৎস্যরূপিণী অপ্সরা অদ্রিকার কন্যা হবার কারণে সত্যবতীর গায়ে তীব্র মাছের গন্ধ ছিল। তাই তার আরেক নাম ‘মৎস্যগন্ধা’। এজন্য কেউ তার কাছে আসতে চাইত না। তিনি যমুনার বুকে নৌকা চালানো আর জেলেনীর কাজ করতেন। কিন্তু রূপে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়া। এমনকি ঋষি পরাশর তার নৌকায় উঠে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন ও মিলন প্রার্থনা করেন। একদিকে সত্যবতীর মনে ছিল সমাজ ও কুমারীত্ব হারানোর ভয়। অন্যদিকে পরাক্রমশীল ঋষিকে প্রত্যাখান করলে জুটতে পারে অভিশাপ। তখন পরাশর তাকে বলেন তার পুত্রলাভ হলেই তিনি আবার কুমারী হয়ে যাবেন এবং মুনির আশীর্বাদে তিনি রাণী হবেন। এর পর আর মিলনে বাধা রইল না। মিলনপূর্বে ঋষির বরে সত্যবতীর শরীরের দুর্গন্ধে মৃগনাভির সৌরভে রূপান্তরিত হল। মিলনের ফলে জন্ম হল ব্যাসদেবের। মহর্ষি পরাশরের ঔরসজাত ব্যাসদেব জন্মের সাথে সাথেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হন এবং মায়ের অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করেন। জ্ঞানান্বেষী এই ঋষিই বেদকে চার ভাগে ভাগ করেন ও মহাভারত রচনা করেন।

You may also like

Leave a Reply!