Home পৌরাণিক কাহিনী ‘চৈত্রী মীনাক্ষী তিরুকল্যাণম’ আসলে কি? আসুন জেনে নিই..

‘চৈত্রী মীনাক্ষী তিরুকল্যাণম’ আসলে কি? আসুন জেনে নিই..

by banganews
ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির হল মীনাক্ষী মন্দির। ভারত মানেই বৈচিত্র্য আর এই বৈচিত্র্যকেই আরও সৌন্দর্যময় করতেই যেন এই সুনিপুণ মন্দিরের সৃষ্টি। দক্ষিণভারতের তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরের ভাইগাই  নদীর তীরে পার্বতীর মীনাক্ষী এবং শিবের সুন্দরেশ্বর রূপের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মন্দিরটি। পুবের এথেন্স নামে পরিচিত মাদুরাই শহরের অন্যতম আকর্ষণ হল রং আর স্থাপত্যের অপূর্ব মিশ্রণে তৈরি এই মীনাক্ষী মন্দিরটি।
        তামিল পুস্তক “তিরুবিলৈয়তরপুরাণম”-এ উল্লিখিত কথা ও কথিত জনশ্রুতি অনুসারে, রাজা মলয়ধ্বজ পাণ্ড্য এবং তার স্ত্রী কাঞ্চনমলৈ সন্তান প্রাপ্তির আশায় একবার একটি যজ্ঞ আয়োজন করেন৷ তাদের প্রার্থনায় ভগবান সন্তুষ্ট হলে যজ্ঞের আগুন থেকে জন্ম হয় এক পরমাসুন্দরী রাজকন্যার যার নাম রাখা হয় মীনাক্ষী। লোকমুখে শোনা যায় যে, মীনাক্ষী বড়ো হয়ে দেবতা শিবকে বিবাহ  করেন এবং সুখে শান্তিতে মাদুরাই শহরে বাস করতে থাকেন। মনে করা হয়, এই রাজকুমারী মীনাক্ষীর নামানুসারেই পরবর্তীকালে দক্ষিণ ভারতের ঐতিহাসিক মীনাক্ষী মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। পাশাপাশি বলা হয়, দেবরাজ ইন্দ্র শিবলিঙ্গ প্রাপ্তির পরই এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়।
        ঐতিহাসিকদের মতে, মীনাক্ষী মূল মন্দিরটি মুসলিম হানাদার মালিক কাফুরের হাতে লুন্ঠিত হয়। মালিক কাফুর মন্দিরটি লুঠ করে প্রায় ধ্বংস করে দেন। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক বর্তমান। পরবর্তী সময়ে  বিশ্বনাথ নায়কের তত্ত্বাবধানে মন্দিরটির সংস্কার হয়। মন্দিরের বর্তমান কাঠামোটি ওনার দ্বারাই তৈরি করা হয়েছিল।
      বর্তমানে মন্দিরটিতে ১৪টি গোপুরম তথা প্রবেশমিনার রয়েছে৷ এগুলি মোটামুটি ৪৫-৫০ মিটার অবধি উচু। চত্বরে বহুসংখ্যায় ভাস্কর্যখচিত স্তম্ভ রয়েছে, যার মধ্যে সহস্রস্তম্ভযুক্ত “আয়িরক্কল” দালান অন্যতম৷ এছাড়াও রয়েছে শুকপিঞ্জর মন্ডপ, কর্ণিক মন্ডপ, নব মন্ডপ ইত্যাদি৷ এছাড়াও সাড়ে চারহাজার থাম এবং বারোটি চূড়া মিলিয়ে প্রায় পঁয়তাল্লিশ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত এই মীনাক্ষী মন্দিরটি। এই চূড়া গুলির মধ্যে সবথেকে উঁচু চূড়াটির উচ্চতা হল 170 ফুট। মাদুরাই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মীনাক্ষী মন্দিরের চূড়াটি লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের চূড়াগুলি প্রায় সবই পিরামিড আকৃতির। অনেকেই মনে করেন,মিশরের পিরামিডের মতোই মীনাক্ষী মন্দিরে রয়েছে অনেক অশুভ শক্তির চিত্রপট। আবার কেউ কেউ বলেন নিঁখুত জ্যামিতিক আকার বিশিষ্ট এই চূড়া গুলি কৈলাস শিব মন্দিরের আদলে তৈরি। এই সব চূড়াগুলি মিলিয়ে তৈরি হয় একটি চূড়া এবং সেই চূড়া হিমালয়কে নির্দেশ করে।
      এছাড়াও মীনাক্ষী মন্দিরের গাত্রে বিভিন্ন ধরনের কলাশিল্প এবং ভাস্কর্য লক্ষ্য করা যায়। এই শৈল্পিক নিদর্শন গুলিতে ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভাস্কর্যগুলি প্রায় সবই এনামেল রঙ দ্বারা আবৃত। তবে হলুদ বা পোড়া ইঁটের ব্যবহার ও খুঁজে পাওয়া গেছে। একমাত্র মীনাক্ষী মন্দিরের গায়েই হিন্দুদের প্রাচীন দেবী জাঙ্গুলির মূর্তি বসানো আছে যা আর ভারতের কোথাও দেখা যায়না।
      বর্তমানে  মন্দির কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় পনেরো হাজার পুণ্যার্থী এবং পর্যটক মন্দিরটি দেখতে এবং শিব পার্বতীর আশীর্বাদ নিতে আসেন। পর্যটকদের কাছে মীনাক্ষী মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল থিরুমালাই নায়কের স্ত্রীর নির্দেশে তৈরি করা আস্থা শক্তি মন্ডপটি। পুণ্যার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে এই মন্ডপের সামনে দিয়েই যেতে হয়। এছাড়াও তামিল বর্ষপঞ্জীর প্রতি মাসের নিয়মানুসারে মীনাক্ষী মন্দিরে নির্ধারিত কিছু অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে৷ কিছু কিছু অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শনার্থীর ভীড় হয়, সেগুলির মধ্যে বারোদিন যাবৎ চলাকালীন সুন্দরেশ্বর মীনাক্ষী বার্ষিক বিবাহ অনুষ্ঠানের দিন গড়ে প্রায় দশলক্ষ ভক্ত সমাগম ঘটে৷ অনুষ্ঠানটিকে স্থানীয় ভাষায় “চৈত্রী মীনাক্ষী তিরুকল্যাণম” বলা হয়ে থাকে৷ মীনাক্ষী মন্দির দর্শনের জন্য তাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়টি হল বাংলার চৈত্র এবং ইংরেজীর এপ্রিল মাস।

You may also like

Leave a Reply!