Home পৌরাণিক কাহিনী তাঞ্জাভুরের বৃহদেশ্বর মন্দির : মন্দিরের ভেতর আছে ৫ মিটার লম্বা নৃত্যরত শিবের মূর্তি।

তাঞ্জাভুরের বৃহদেশ্বর মন্দির : মন্দিরের ভেতর আছে ৫ মিটার লম্বা নৃত্যরত শিবের মূর্তি।

by banganews

একাদশ শতাব্দীতে ১০০৩ থেকে ১০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তামিল রাজা প্রথম রাজরাজ চোল দ্বারা নির্মিত তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুরের বৃহদেশ্বর মন্দির শুধু যে নানা ঘটনার সাক্ষী তা নয় সমগ্র ভারতবাসীর গর্বের কারণ ও বটে। এটি গোটা বিশ্বের মধ্যে গ্রানাইট পাথরে তৈরি প্রথম মন্দির। কাবেরী নদীর তীরে অবস্থিত, মহাদেবকে সমর্পিত এই মন্দির পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য শিল্প গুলির মধ্যে অন্যতম। দ্রাবিড় স্থাপত্য রীতির অনুকরণে প্রস্তুত এই বিশাল ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের পরতে পরতে মিশে আছে ভারতের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। ইতোমধ্যেই এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর তকমা দিয়েছে ইউনেসকো ‘গ্রেট লিভিং চোলা টেম্পলস’ নামে। ১৯৫৪ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ১০০০ টাকার নোটে ছিল বৃহদেশ্বর মন্দিরের প্রতিরূপ।

আরও পড়ুনখুলে গেল শ্যাওড়াফুলির নিস্তারিণী কালীমন্দির

১.৩ লাখ গ্রানাইট পাথর থেকে ইন্টারলক বা পাজল পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির অর্থাৎ দুটি পাথরকে একসাথে ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়নি প্লাস্টার বা সিমেন্ট। পাথরকে ধাপে ধাপে সাজিয়েই আজ থেকে ১০০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির যা তখন রাজরাজেশ্বর মন্দির নামেও পরিচিত ছিল। কালের প্রভাব লন্ডনের বিগ বেন, পিসার হেলানো মিনার এর মতো ইমারতেও পড়েছে। কিন্তু বৃহদেশ্বর মন্দির আজো ঋজুভাবে দণ্ডায়মান। মন্দিরের বিস্তৃত মূল তলদেশ মন্দিরের ঋজুতার আসল কারণ। দক্ষিণ ভারতীয়রা অন্তঃ থেকে বিশ্বাস করেন যে মন্দির তৈরির পিছনে কোনো অপার্থিব শক্তির হাত নেই। রয়েছে শিবভক্তদের নটরাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও কঠোর পরিশ্রম। তাই শস্য শ্যামলা তাঞ্জাভুর ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রাপ্ত স্থান ।

তাঞ্জাভুরের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোন পাহাড়। শোনা যায় তাই ৩০০০ হাতি নিয়োগ করা হয়েছিল বহু দূর থেকে পাথর বয়ে আনার জন্য। মন্দিরের মুখ্য মিনার যা গোপুরম নামে পরিচিত তাঁর উচ্চতা ২১৬ ফুট। মন্দিরের মাথায় রয়েছে ৮১ টন ওজনের একটি পাথর যার নাম কুম্বম। এই বিশাল ওজনের পাথরটিকে কি করে মন্দিরের চূড়ায় তোলা হল আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্র ছাড়া তা এক বিস্ময় বটে। শোনা যায় মন্দিরের নীচ থেকে চূড়া অবধি একটি ৬ কিলোমিটার লম্বা ঢালু স্তর বসানো হয়। বহু শ্রমিক, হাতি, ঘোড়ার সাহায্যে এটিকে যথাস্থানে বসাতেই লেগেছিল ৬ বছর! মন্দিরের নিচে রয়েছে ১০০ ও বেশি ভূগর্ভস্থ পথ যা চোল প্রাসাদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে যুক্ত। পূজা অর্চনার বিশেষ দিনে রাজপরিবারের মানুষরা এই পথ ব্যবহার করতেন। মন্দিরের স্থাপত্যের আরেক আশ্চর্যের দিক হল গোপুরম এমন ভাবে তৈরি যাতে দিনের বেলা এর ছায়া কোনো সময় মাটিতে পড়ে না!

আরও পড়ুন রহস্যময় কৈলাস মন্দিরের কিছু অজানা কাহিনি

 

মন্দিরের ভেতর আছে ৫ মিটার লম্বা নৃত্যরত শিবের মূর্তি। মন্দিরের কারুকাজে ফুটে উঠেছে সে সময়ের সমৃদ্ধি ও জীবনবোধ। বৃহদেশ্বর মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব হলেও পাশাপাশি মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে চন্দ্র, সূর্য, দক্ষিণ মূর্তির বিশালাকার নানা চিত্র আঁকা রয়েছে। এখানে আট মিটার লম্বা ‘অষ্ট-দিকপালক’-র-( ইন্দ্র, অগ্নি, যম, বরুণ, নৈঋত, বায়ু, ঈশান, কুবের) মূর্তি রয়েছে। এছাড়া মন্দিরের ছাদে রয়েছে রঙিন তৈলচিত্র। প্রাচীন তৈলচিত্র গুলিতে ব্যবহার করা হয়েছিল প্রাকৃতিক রং। মন্দিরে রয়েছে শিবের বাহন নন্দীর একটি মূর্তি (দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট এবং উচ্চতা ১৩ ফুট) যা একটি মাত্র পাথর কেটে বানানো।

আমাদের গর্বের বিষয় যে এই অপূর্ব অতূলনীয় স্থাপত্য ৬ টি ভূমিকম্প উপেক্ষা করেও আজও তার ঐতিহ্য নিয়ে সগৌরবে বিদ্যমান।

You may also like

Leave a Reply!