Home পৌরাণিক কাহিনী কৃষ্ণ-গুরু সন্দীপনি

কৃষ্ণ-গুরু সন্দীপনি

by Webdesk

মথুরায় কংসবধ হয়ে গেল। বসুদেব নন্দন কৃষ্ণ আর বলরামের যজ্ঞোপবীত ধারণও হল। প্রথামাফিক এবার তো গুরুগৃহে যেতে হবে। পরা অপরা দুই বিদ্যাই শেখার প্রয়োজন। গুরু ব্যতীত আচার্য আর কে? লিখছেন মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কার কাছে যাবেন কৃষ্ণ-বলরাম?

বসুদেব তাঁদের পাঠালেন সন্দীপনি মুনির আশ্রমে। অধুনা যেখানে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী, সেখান থেকে আরও দু কিলোমিটার দূরে এই আশ্রম।

সন্দীপনি মুনি সে সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। সম্ অর্থে সম্পূর্ণ, দীপন অর্থে উদ্ভাসিত। জ্ঞানালোকে যিনি উদ্ভাসিত, তিনিই সন্দীপনি। এমন মুনিরত্নের কাছে ছাত্র হয়ে এলেন কৃষ্ণ, বলরাম আর তাঁদের সখা সুদামা।

মুনিবরের অসম্ভব খ্যাতি। দেশবিদেশ থেকে তাঁর কাছে বহু ছাত্রের মেলা বসে যায়। তাঁর ছাত্রেরা একেকজন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত। দিবারাত্র অধ্যয়ন আর পুঁথিপাঠেই তন্ময় থাকেন সন্দীপনি।

তবে এতদিনের চেনা ধারায় এবার যেন বড়সড় ব্যাত্যয়। এই তিন নতুন ছাত্রের অতুলনীয় মেধা। বিশ্বে এমন হয় নাকি! মাত্র একবার বলতে হয় তাঁদের। তাতেই গোটা বিদ্যা কণ্ঠস্থ হয়ে যায়। মাত্র চৌষট্টি দিনে চৌষট্টি বিদ্যা শিখে রপ্ত করে ফেললেন কৃষ্ণ বলরাম। সে বিদ্যায় বেদ, জ্যোতিষ, ব্যাকরণ যেমন আছে, তেমনি আছে রাজনীতি, অর্থনীতির পাঠও। ছাত্র কৃষ্ণের আসনটি যে জায়গায় পাতা হয়, সেই ‘অঙ্কপাতা’য় যেন নিশ্চল বসে থাকেন বিদ্যামূর্তি স্বয়ং। গুরু দেখেন আর বিভোর হয়ে যান।

গুরুর প্রতি টান ছাত্রেরও বড় কম নয়। প্রবীণ মানুষটিকে যাতে পুণ্যার্জনে তীর্থ ভ্রমণ করতে না হয়, তার জন্য কৃষ্ণ কতই না উন্মুখ। তাঁর প্রয়াসে সমস্ত তীর্থের সমস্ত পবিত্র জলধারা এসে একত্রিত হল আশ্রম সংলগ্ন গোমতি কুণ্ডে। গুরুদেব প্রত্যহ তীর্থস্নান সারবেন এই কুণ্ডের জলেই।

দেখতে দেখতে আশ্রমবাসের পর্ব শেষ। এবার ঘরে ফিরবেন কৃষ্ণ বলরাম আর সুদামা। তার আগে গুরুদক্ষিণা অর্পণ করতে হবে গুরুচরণে।

কী হবে দক্ষিণা?

করজোড়ে সন্দীপনি মুনির কাছেই প্রার্থনা করেন কৃষ্ণ—আপনিই বলে দিন গুরুদেব।

আরো পড়ুন – তাঞ্জাভুরের বৃহদেশ্বর মন্দির : মন্দিরের ভেতর আছে ৫ মিটার লম্বা নৃত্যরত শিবের মূর্তি।

এমন দিব্য সত্তার কাছে পার্থিব কী আর চাইবেন মুনিবর! ভেবেই পান না। যত ভাবেন, ততই তাঁর বুকে মুচড়ে ওঠে যন্ত্রণা। সে যন্ত্রণা বোঝেন মুনীপত্নী সুমুখীদেবী। যন্ত্রণাটা যে তাঁরও।

একমাত্র পুত্র মধুমঙ্গল সেই যে প্রভাসে গেল, সমুদ্রস্নানে, আর ফিরল না। কোথায় যে তলিয়ে গেছে, খোঁজ দিতে পারেনি কেউ। কত চেষ্টা হয়েছে তাকে পাওয়ার। সব ব্যর্থ।

এই অতিলৌকিক সত্তা পারবেন কি মধুমঙ্গলকে উদ্ধার করতে?

গুরুদেবের যন্ত্রণায় কাতর কৃষ্ণ বলরাম চললেন প্রভাস। সমুদ্রতটে এসে জানলেন, মধুমঙ্গলকে মেরে ফেলেছে শঙ্খাসুর। সমুদ্রের গভীরে এখন সেই অসুর পাঞ্চজন্য রূপে অবস্থিত।

জলে ঝাঁপিয়ে শঙ্খাসুরের সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ হল। শঙ্খাসুর নিহতও হল। কিন্তু পাঞ্চজন্যের খোলে মিলল না মধুমঙ্গলের অস্তিত্ব।

আরো পড়ুন – রহস্যময় কৈলাস মন্দিরের কিছু অজানা কাহিনি

পাঞ্চজন্য হাতে নিয়েই দু ভাই এবার সোজা পাড়ি দিলেন যমলোকে। মৃত্যুর রাজার দরবারে প্রবল নিনাদে পাঞ্চজন্যে ফুঁ দিলেন কৃষ্ণ। সন্ত্রস্ত যমরাজের আদেশে তৎক্ষণাৎ অলক্ষ্য থেকে মধুমঙ্গলকে এনে উপস্থিত করল তাঁর অনুচরবৃন্দ।

মহা উল্লাসে মধুমঙ্গলকে নিয়ে দু ভাই এবার ফিরলেন সন্দীপনি মুনির আশ্রমে। মুনিবর আর সাধ্বী মায়ের হাতে তুলে দিলেন তাঁদের হারানিধি। মুনিকন্যা নান্দীমুখির হাসিকান্না একাকার হয়ে গেল হারানো দাদাকে ফিরে পেয়ে।

অধ্যয়ন ও গুরুদক্ষিণা সম্পূর্ণ। কৃষ্ণ বলরাম এবার ফিরে চললেন মথুরার পথে। কৃষ্ণবিদ্যার সিদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে উজ্জয়িনীতে উজ্জ্বল হয়ে রইল সন্দীপনি মুনির আশ্রম।

You may also like

Leave a Reply!