Home পুজোর গল্প হাতে হাত রাখা থাক

হাতে হাত রাখা থাক

by banganews

ধর্মে ধর্মে সম্প্রীতি। এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের কোনো বিভেদ নয়। ভালোবাসায় বাঁধা থাক সব ধর্মের মানুষেরা। এরকমই এক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত গড়ে উঠছে বাংলাদেশে । সম্প্রীতির এই নিদর্শন গড়ে উঠছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে। একই দালানে অবস্থান করছে মন্দির ও মসজিদ। আলাদা আলাদা দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ে কয়েক দশক ধরে চলছে এক সাথে প্রার্থনার রেওয়াজ। শহরের পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই উঠোনে রয়েছে। যে যাঁর মতো ধর্মীয় আচার পালন করে চলেছেন। দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে ওই এলাকা।

১৮৩৬ সালে কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ি এলাকার পুরান বাজারে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ পাঠের জন্য মন্দিরের পাশেই একটি ছোট ঘর তৈরি করেন। আর সেটির নামকরণও করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। ওই সময় থেকে এক জায়গায় চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ।

আজ পর্যন্ত এই উপাসনাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটেনি। মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে সাধারণ মানুষ। এমনকি কয়েক দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ দর্শন করেছেন। উপাসনার অভ্যেস এখানে খুবই শৃঙখলিত ভাবে হয়। এখানে আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোল-সহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামাত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।

আরো পড়ুন

সংরক্ষিত হচ্ছে “ভাগের মা” প্রতিমা

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মহম্মদ আলাউদ্দিন কথা থেকে জানতে পারা যায় যে, এই পুরান বাজার মসজিদের পাশেই একসঙ্গে দু’টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে ঘুরতে আসে। সবাই সবার সাথে সহযোগিতা করেই একসাথে চলেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ যুগ ধ এ সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত গড়ছে এরা।

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন এই মসজিদ।

সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। সামান্য বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। লালমনিরহাট জেলা শাসক আবু জাফরের কথামত, এখানকার মানুষ সব ধর্মের মানুষের একসাথে থাকাতেই বিশ্বাস করেন। যার প্রমাণ এক উঠানে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির ও পুরান বাজার জামে মসজিদ। ধর্মে ধর্মে কোনো বিভাজন এখানে নেই। প্রতিদিনের তাদের এই সাধনাই আসলে প্রমাণ করে এই চিরসত্যটি “আয় আরো হাতে হাত রেখে আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”।

You may also like

Leave a Reply!