Home দেশ “মনে রেখো আমায়।” রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ফেসবুক পোস্ট ।

“মনে রেখো আমায়।” রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ফেসবুক পোস্ট ।

by banganews

“মনে রেখো আমায়।” রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ফেসবুক পোস্ট । তিন সপ্তাহ আগের এই পোস্ট  সাত বছর আগের ৩০ শে মে ভিন্ন তাৎপর্য বহন করেছিল।

ভারতীয় সিনেমা জগতে ঋতুপর্ণ ঘোষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং কাহিনি বুননের ধরণ ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র। তবে  তাঁর ক্ষেত্রে শুরুতেি সিনেমাওয়ালা হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই ছাত্র স্কুলজীবন থেকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তাঁর সহপাঠীদের । চলচ্চিত্রপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে তিনি চলচ্চিত্র পাঠ পেয়েছিলেন বাড়ি থেকেই । কলেজের পাঠ শেষ করে  কর্মসূত্রে একটি  বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি । সিনেমার পর্দায় গল্প বলা হীরের আংটি দিয়ে শুরু হলেও মানুষের নজর কাড়েন ‘উনিশে এপ্রিল’ পর্দায় আসার পর । জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।

আরো পড়ুন –রামকিঙ্কর বললেন হয়তো কাউকে চুমু খেতেই সে মুখ নামিয়েছে, বলেই একটু চুপ করে গেলেন কারণ যাকে বলছেন কথাটা তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।

সিনেমা নির্মাণে তাঁর ঘরানা চিহ্নিত করতে চাইলে একটি ইন্টারভিউতে তিনি বলেছিলেন  – সত্যজিৎ রায়ই তাঁর অভিভাবক।
” উনিশে এপ্রিল মূলত সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করেছি আমি। দূরদর্শনে দেখছিলাম সিনেমাটি, তখনই মাথায় আসে উনিশে এপ্রিলের আইডিয়া। খেয়াল করে দেখবেন, টেলিভিশনে কোনো সিনেমা দেখার সময় সিনেমাটির প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে যাবে। টেলিভিশনে খুব কাছ থেকে চরিত্রগুলো দেখা যায়, পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাদের সাথে নিজেকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করা যায়। টেলিভিশনের পর্দায় জলসাঘর দেখাটা আমার জীবনে বেশ উল্লেখযোগ্য একটা পরিবর্তন আনে। অবসরপ্রাপ্ত এক নাচিয়ের গল্প তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথায় খেলে যায়। মেয়ের চরিত্রটি অবশ্য অনেক পরে ভেবেছিলাম, মাকে নিয়ে গল্প সাজাতে গিয়েই মেয়ের আগমন ঘটে এখানে।”

এরপর একে একে ‘শুভ মহরত’ (২০০৩), ‘রেইনকোট’ (২০০৪), ‘অন্তরমহল’ (২০০৫), ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’ (২০০৭), ‘খেলা’ (২০০৮), ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ (২০০৮), ‘আবহমান’ (২০০৯), ‘নৌকাডুবি’ (২০১০), ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ (২০১১), ‘চিত্রাঙ্গদা’ (২০১২), ‘জীবনস্মৃতি’ (২০১২) মাত্র ২০ বছরের কর্মজীবনে ১২ টি জাতীয় পুরস্কার ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন – কবি হিসাবে নজরুলের জনপ্রিয়তা অনস্বীকার্য তবে আপামর বাঙালি তাঁকে ভালোবেসেছে গানের জন্যই

বাংলা সিনেমাকে বহুদিন পর আবার বিশ্ব সিনেমার পাশে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন  তিনি। বার্লিন, লোকার্নো, শিকাগো, বুসান, বোম্বে প্রভৃতি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন এই নির্মাতা।
ঋতুপর্ণ ঘোষ নামটি একদিকে যেমন মেধা , নির্মাণ , অসাধারণ কিছুর ইঙ্গিত বহন করে তেমনভাবেই সাধারণ মানুষের তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আগ্রহ কখনো কখনো অনধিকার চর্চা এবং আক্রমণের রূপ ধারণ করেছিল । এইসব কিছুর সাথে কেমন ভাবে লড়াই করেছিলেন তিনি তার ঝলক ‘ফার্স্ট পার্সনের’ পাতায় পাতায় মাঝে মাঝে পাওয়া গিয়েছে। ২০১৩ সালে আজকের দিনে বাংলা চলচ্চিত্র জগত কে বিদায় জানিয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে মাত্র ৫০ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন।
তাঁর অকালমৃত্যুতে বলিউড থেকে টলিউড স্তব্ধ হয়ে যায়। অমিতাভ বচ্চন স্মৃতিচারণায় বলেন ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ এমন একজন পরিচালিক যিনি বচ্চন পরিবারের সবার সাথে কাজ করেছেন’। শ্যাম বেনেগাল বলেন ‘ঋতুপর্ণের মৃত্যু এক বিরাট ট্রাজেডি’। কঙ্কণা সেনশর্মা তাঁর মৃত্যুতে বলেছিলেন ‘এটা আমার অপূরণীয় ক্ষতি’।

You may also like

Leave a Reply!