Home পাঁচমিশালি রামকিঙ্কর বললেন হয়তো কাউকে চুমু খেতেই সে মুখ নামিয়েছে, বলেই একটু চুপ করে গেলেন কারণ যাকে বলছেন কথাটা তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।

রামকিঙ্কর বললেন হয়তো কাউকে চুমু খেতেই সে মুখ নামিয়েছে, বলেই একটু চুপ করে গেলেন কারণ যাকে বলছেন কথাটা তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।

by banganews

রামকিঙ্কর বললেন হয়তো কাউকে চুমু খেতেই সে মুখ নামিয়েছে, বলেই একটু চুপ করে গেলেন কারণ যাকে বলছেন কথাটা তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কথা হচ্ছিল শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্করের বানানো নতুন মূর্তি নিয়ে। স্বপ্নে সেই মূর্তি পেয়েছিলেন রামকিঙ্কর। রবীন্দ্রনাথ মনে করেছিলেন যে কোন নারী, যে মুখ নামিয়ে বসে আছে। শিক্ষক নন্দলাল বলেছিলেন স্বপ্নের কথা মনে রাখতে। কারণ স্বপ্নে ছবি আসে, প্রতিমা আসে। স্বপ্ন আঁকতে বলেছিলেন তিনি। সেই রকম কথালাপ আরো হয়েছে রবীন্দ্রনাথ আর রামকিঙ্করের। দুই শিল্পীর কথায় কেটে গেছে কতটা সময়।
‘‘রবীন্দ্রনাথ রামকিঙ্করকে ডেকে বললেন, শোন, কাছে আয়। তুই তোর মূর্তি আর ভাস্কর্য দিয়ে আমাদের সবখানে ভরে দে। একটা শেষ করবি আর সামনে এগিয়ে যাবি— সামনে।’’

আরো পড়ুন – কলেজের ইংরাজি শিক্ষক বেঁচে থাকার লড়াইতে বেছে নিয়েছেন মিস্ত্রির কাজ

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সাগরময় ঘোষ জানিয়েছেন এই খবর। জীবনে অনেক দুঃখ ছিল, তবু তাই নিয়েই এগিয়ে গেছেন তিনি। থামেননি কখনোই।
দু’চার আনার বিনিময়ে নিষিদ্ধ পল্লীর রমণীদের মূর্তি গড়া দিয়ে তার হাতেখড়ি ভাস্কর্যের। কুমোরপাড়ার অনন্ত নামের এক বয়স্ক মানুষের থেকে ছোট বয়সেই মূর্তি গড়া শেখা রামকিঙ্করের।ম্যাট্রিক না দিয়েই 1925 সালে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শান্তিনিকেতন চলে এসেছিলেন কিঙ্কর।
নন্দলাল বুঝেছিলেন সবই জানে ছেলেটি। তবু বলেছিলেন দু তিন বছর থেকে যাওয়ার কথা। সেই দু তিন বছর শেষ করতে পারেননি রামকিঙ্কর আজীবন।শান্তিনিকেতন তাকে সমালোচনা করেছে জীবনচর্যার জন্য। অথচ তিনি জীবনের সাধক। তাই তিনি সহজিয়া হাওয়ায় উড়ে বেড়াতেন। তার জীবনে নারীসঙ্গ এসেছে বহুবার। প্রতি নারীকে তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজের ভাস্কর্যে। শিল্পে। অথচ তিনি বড় সত্যি কথা বলে গেছেন ‘রিয়ালিটির সবটুকু কপি করতে নেই।’

আরো পড়ুন – গীতিকার জাভেদ আখতার ট্যুইটারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কটাক্ষ করেন।

‘কুঁড়েঘরের মতো একটা ঘর। ভিতরে একটা চৌকি। চৌকির উপর অতি সাধারণ বিছানা। দেয়ালে দেয়ালে ঠেসান-দিয়ে-রাখা দরজা-সমান অয়েল পেন্টিং। এদিকে সেদিকে ভাস্কর্যের টুকরো-টাকরা। জনৈকা স্বাস্থ্যবতী যুবতীর মুখ। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে চোখটা চলে গেল চৌকির নীচেয়। সেখানে মেঝের উপর ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে হাজার খানেক কিংবা তারও বেশী চিঠিপত্র, খাম-পোস্টকার্ড-পার্সেল-প্যাকেট সব মিলিয়ে। মনে হল, অনেক চিঠির গায়ে প্রাপকের হাতের ছোঁয়াটুকুও পড়েনি এখনও।’’ পূর্ণেন্দু পত্রির চোখে এভাবেই ধরা পড়েছে রামকিঙ্করের ঘর। মানুষটাও ধরা পড়েছেন অন্যভাবে। ‘‘কালো পাথরের একটি জীবন্ত ভাস্কর্য। খালি পা। পরনে আধময়লা লুঙ্গি কিংবা খাটো-ঝুলের পাজামা, যে রকমের পাজামা পরে টোকা মাথায় নন্দলাল হেঁটে যান শালবীথির ছায়ায়। শক্ত চোয়াল। সামনে এগিয়ে আসা ঠোঁট। পেশীবহুল আঁটসাট শরীর। চোখ দুটো যেন বুঁদ হয়ে আছে কিসের নেশায়। যে-রকম রোজ দেখা যায় সে রকম কোনও মানুষ নয় যেন।’’

মৃত্যুকে চিরকাল উদাসীন চোখে দেখেছেন রামকিঙ্কর। নেশাকে দেখেছেন জীবনের অঙ্গ রূপে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সমীর সেনগুপ্তের সাথে বসে খেয়েছেন অকুন্ঠ মদ, গেয়েছেন অক্লান্ত রবীন্দ্রনাথের গান, আবার সকালে সব ভুলে খুঁজে নিয়েছেন নিজের ভাস্কর্য।
গুরুদেবের মত তিনিও চাননি কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা হোক তাঁর। স্বয়ং সত্যজিৎ দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে। তিনি চেয়েছিলেন রিকশা করে বাড়ি যেতে। রবীন্দ্রনাথ ফেরেননি। রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর ও এর ফিরলেন না শান্তিনিকেতন। স্মরণ সন্ধ্যায় মোহর গেয়েছিলেন ‘ও চাঁদ চোখের জলের লাগলো জোয়ার,দুখের পারাবারে।’শিল্পী থেকে যান স্বপ্নে, কল্পনায়, শিল্পে।রামকিঙ্কর থেকে জান সহজ জীবনের মূর্তি হয়ে।

You may also like

Leave a Reply!