Home দেশ কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলতে অবিচল ছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নিন সেই অজানা কাহিনী

কুসংস্কারকে দূরে সরিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলতে অবিচল ছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নিন সেই অজানা কাহিনী

by banganews

আজ 16 ই জুন প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। অবিভক্ত বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে 1861 সালের 2রা আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাতা ছিলেন ভুবনমোহিনী দেবী এবং পিতা স্থানীয় জমিদার হরিশচন্দ্র রায়।
পিতার প্রতিষ্ঠিত করা স্কুলে নিজের গ্রামেই তাঁর শিক্ষার সূচনা হয়েছিল। পুঁথিগত শিক্ষার চেয়ে পিতার সঙ্গে কথা বলে অনেক বিষয় শিখেছিলেন তিনি। এরপর 1870 সালে সপরিবার কলকাতায় এসে ভর্তি হন হেয়ার স্কুলে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি নিজের গ্রামে ফিরে যান।1873 আবার কলকাতায় ফিরে ভর্তি হন অ্যালবার্ট স্কুলে। এরপর এন্ট্রান্স পাশ করে ভর্তি হন মেট্রোপলিটনে। এফএ পড়ার সময় থেকেই প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপকদের রসায়ন বিষয়ে বক্তৃতা শুনতে যেতেন তিনি। নিজের অজ্ঞাতসারেই তিনি রসায়নের প্রতি আকৃষ্ট হন। রসায়ন নিয়ে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সিতে।

আরও পড়ুন সূর্যগ্রহণের ফলে হওয়া ধাতব পরিবর্তনেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা -দাবী চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানীর

এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হয়ে 1882 সালে ইংল্যান্ড যাত্রা করেন।এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে 1888 সালে প্রফুল্লচন্দ্র রায় দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় 24 বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। একদিন এক রসায়নের ক্লাসে ছাত্রদের সামনে এক টুকরো হাড় হাতে নিয়ে বুনসেন বার্নারে পুড়িয়ে মুখে পুরে দিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ছাত্রদের শেখালেন, এটা ক্যালসিয়াম ফসফেট আর কিছুই নয়। সেটা কোন প্রাণীর হাড় তা-ও আর চেনার উপায় রইল না। রসায়ন দিয়ে শুধু রসায়ন শিক্ষাই নয়, ছাত্রদের মনে ধর্মান্ধতার মূল উপড়ে ফেলার মন্ত্রটিও প্রবেশ করিয়ে দিতেন তিনি। অল্প সময়েই শিক্ষক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ, পঞ্চানন নিয়োগী, পুলিন বিহারী সরকার, গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী, এ কে ফজলুল হক, রসিক লাল দত্ত তাঁরই ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর গবেষণা।
1895 সালে মাত্র 34 বছর বয়সে

আরও পড়ুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনদাশ আমরা সবাই চিনি৷ কিন্তু কবি চিত্তরঞ্জনকে চিনি আমরা?

1
এক দিন হঠাৎই তিনি আবিষ্কার করলেন রসায়নের এক অতি বিষম বস্তু মারকিউরাস নাইট্রাইট। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। এছাড়াও সমগ্র জীবনে মোট 12 টি যৌগিক লবণ এবং 5 টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন তিনি। পরনে ধুতি, কালো কোট, অবিন্যস্ত চুল, এমন উদাসীন বেশভূষায় আবৃত প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বুঝেছিলেন যে একটা সমগ্র জাতি শুধুমাত্র কেরানী হয়ে টিকে থাকতে পারে না। তাই বাঙালি জাতিকে স্বাবলম্বী করার জন্য তিনি 1901 সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিকল ওয়ার্কস। মূলধন বলতে ছিল, মাত্র আটশো টাকা আর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও তাঁর অবদান ছিল অসীম। তাঁর অর্জিত আয়ের প্রায় সবটুকুই দেশের জন্য দান করে গিয়েছেন। ত্যাগেই ছিল তাঁর তৃপ্তির আনন্দ। 1944 সালে 16 ই জুন কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের দেখানো পথই হোক আমাদের লক্ষ্য। তাঁর আলোকে দূরীভূত হোক কুসংস্কারের অন্ধকার।

You may also like

Leave a Reply!