রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস শনিবার বলেন কোভিড-১৯ প্যানডেমিক প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করার ফলে দেশের অর্থনীতি ক্রমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার এবং করোনা মহামারী প্রতিরোধ, উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পিত অভিমুখেই সম্ভব। ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কৌশলগত বিভিন্ন পরিকল্পনা আরবিআই কর্তৃক গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও ইকোনমিক মিডিয়াম টার্ম আউটলুক এখনো অনিশ্চিত। দেশজুড়ে দু’মাসের অধিক সময়ব্যাপী লকডাউনের ফলে জাতীয়বাজারে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য পুরোপুরিরকম বিঘ্নিত। গভর্নর করোনা মহামারীর এই সময়কে বিগত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ শান্তিকালীন অর্থনৈতিক অবস্থা বলে বর্ণনা করেছেন। সপ্তম এসবিআই ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড ইকোনমিক কনক্লেভের বক্তৃতায় তিনি বলেন এই আরবিআই’র ভিন্নমুখী সূচক নীতি এখনও পর্যন্ত সংকটকালে দেশকে সঠিক দিশা দেখিয়েছে, আগামীতে আরও গভীর, অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। ফাইনানশিয়াল সেক্টর গুলির অল্প কিছু সময়ের ভিতরে পূর্বের স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসার কথা। তিনি বলেন-
“বিধিনিষেধ শিথিল করার পর থেকে ভারতীয় অর্থনীতি পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশাপ্রদ লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছে।”
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ইকনোমিক গ্রোথ ভারতের কাছে সর্বাগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হবে। তারই সঙ্গে একই সাথে
অগ্রাধিকার পাবে ফাইনান্সিয়াল স্টেবিলিটি বা আর্থিক স্থিতাবস্থা। এই সংকটকাল আমাদের অর্থনীতির দাঢ্য এবং স্থিতিস্থাপকতার পরীক্ষা নিয়েছে, ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য ফাইনান্সিয়াল সেক্টরগুলি আজকে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে তুলে ধরতে সামনের সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন রেলের সুরক্ষায় এবার নজর রাখবে ড্রোন
আরবিআই কাঁচা টাকায় নগদ ৯.৫৭ লক্ষ কোটি মূল্য ফেব্রুয়ারি থেকে লিকুইডিটি মেজারস হিসেবে ঘোষণা করেছে। যা গোটা দেশের ২০১৯-২০ সালের জিডিপির ৪.৭ শতাংশ। এই মহামারী বিশ্ব অর্থনীতির ভিত্তিকে হেলিয়ে দিয়েছে, বৈশ্বিক স্তরে টাকার মূল্য, পৃথিবীব্যাপী শ্রম ও পুঁজির গতি স্তব্ধ। এই আর্থসামাজিক দুরাবস্থার ঢেউ এসে লেগেছে ভারতেও।
এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে বন্ধ থাকা অব্যবহৃত পুঁজির ভাঙনে সহায়তা করবে, যে স্থবির বিপুল অংকের সম্পত্তি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও ছোট বড় ব্যাংকের কাল কুঠুরিতে জমা থাকত তা খোলাবাজারে নিয়োজিত হলে অর্থনীতি গতিশীল হবে অনেকাংশে। সাধারণ মানুষের হাতে খরচের উপযোগী অর্থ পৌঁছে দিতে ব্যাঙ্কগুলিকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য জনগণের স্বার্থে একটি পুঁজির রিক্যাপিটালাইজেশন পরিকল্পনা করতে হবে।
আরও পড়ুন কয়েক কোটির চিনা বাণিজ্য থেকে সরলেন কার্তিক আরিয়ান?
অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পরিকাঠামোগত বিষয়ে জোর দেন আরবিআই-এর গভর্নর। তিনি বলেন রেপো রেটে সর্বমোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট,২.৫ শতাংশ সূচক গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। এটি হলো সেই শতকরা হার যাতে করে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরবিআই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ মুকুবের শর্তে নগদ অর্থ ধার দেয়। এখন এই হার মাত্র ৪ শতাংশ যা ২০০০ সালের মধ্যে নিম্নতম। এই সকল অর্থনৈতিক সংস্কারের হাত ধরে আগামীতে ভারত দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী অনেকেই।