এ যেন এক অজানা বাংলার ছবি। এক সম্পূর্ণ অন্য পরিবেশের ছবি। খানিকটা ছোটবেলায় শোনা দাদু -ঠাম্মার মুখে গল্পের মতোই। কলকাতার মত ভিড়ে ঠাসা একটি আধুনিক মেট্রোপলিটন শহর শেষ কবে দেখেছে এত হরেক কিসিমের পাখি? শেষ কবে শুনেছেন এত নানা পাখির ডাক? জবাব খুঁজতে গিয়ে মাথা চুলকোবেন অনেকেই।
করোনার-কোপে মানুষ যখন গৃহবন্দি, লকডাউনে বন্ধ কল-কারখানা, তখন নির্মল প্রকৃতির আকাশ-বাতাস জুড়ে, শুধুই শোনা গিয়েছে ‘তাদের’ কলতান। তাদের অর্থাৎ পাখি। পাখিদের কিচিরমিচির। গাছের ডালে, ঝোপের ফাঁকে দেখা মিলেছে চেনা-অচেনা নানা পাখির। যদিও আমফানের পর আবার পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। খানিকটা পাল্টালেও আমফানের পরের ছবিটা চমকে দিয়েছেন কলকাতার পাখি বিশেষজ্ঞদের। এ দৃশ্য যে তাঁরাও কোনোদিন এ শহরে দেখেননি।
আরো পড়ুন:- প্রতিবেশীদের বচসার জোরে মৃত শিশু
কংক্রিট-শহরের ইতিউতি, গাছের ফাঁকে, ঝোপের ডালে দেখা দিয়েছে অসংখ্য বেনেবউ-বুলবুলি। রাজভবনের গাছে ঢাকা বিস্তৃত বাগানে, মৌটুসি-বসন্তবৌরি-কুবোপাখি। লকডাউনে জনজীবন স্তব্ধ। তাই তারা নিরাপদ। শান্ত রাজভবনে দেখা গিয়েছে, ‘রেড থ্রোটেড ফ্লাই ক্যাচার’। যে পাখির দেখা মেলে, সুদূর রাশিয়ার টাইগা অঞ্চলে। শীতের সময় আসে কলকাতায়। এখন এসেছে অসময়। গোটা বাংলা জুড়ে এসেছে আরো বহু পাখি।
এমনিতে মার্চ থেকে মে শহরের আনাচে-কানাচে পাখিদের বিচরণ বরাবর। কারণ এমন সময়ে, গাছে পাকা ফল। পোকা-মাকড়ের প্রাচুর্য। খাদ্য পর্যাপ্ত। ফলে আপন ছন্দে চলে, তাদের ঘর বাঁধার পর্ব। এ বার তাদের সেই ভাগ্যে জুটেছিল ‘উপরি পাওনা’। লকডাউনের কারণে শব্দ-বায়ু দূষণ মুক্ত পরিবেশ। তাই তারা ছিল, অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ-সরব।
আরো পড়ুন:- কেঁপে উঠল গুজরাত : রিখটার স্কেল ৫.৫
অন্যদিকে হঠাৎ হানা দেওয়া এই আমফানের ফলে উড়ে গেছে হাজারো পাখির বাসা। হাজার-হাজার গাছ উপড়ে পড়ায়, আজ আশ্রয়হীন শালিক-কোকিল-পেঁচা-টুনটুনির দল। রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরের টিয়া-বুলবুলি-বসন্তবউরি-ময়না-হরিয়াল-ফটিকজল-বেনেবউরা খুঁজে বেড়াচ্ছে বাসা।
চমকানোর আরো বাকি ছিল পাখি বিশেষজ্ঞদের। আমফান ঝড়ের ফলে মাঝ সমুদ্রে উড়ে বেড়ানো কিছু প্রজাতির টার্ন, সমুদ্রের গভীরে থাকা শিয়ারওয়াটার, আরও গভীরের ফ্রিগেডবার্ড-এর মতো অতি-বিরল পাখিদের একসঙ্গে এত সংখ্যায় দেখা মিলবে, উম্পুনে উড়ে আসা দক্ষিণবঙ্গের বুকে! বাটানগর থেকে দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গাপাড়ে! রূপনারায়ণের চরে! নিউ টাউন-রাজারহাটের গাছে।
এককথায় রূপকথার গল্পের মতোই বদলে যাচ্ছে কংক্রিটের এই শহরের চারপাশ। আনাচে কানাচ।
আরো পড়ুন:- মাস্ক নেই? জেলে যান