Home কলকাতা শহর কলকাতার এই চিন সীমান্তের মর্যাদাটা জানে

শহর কলকাতার এই চিন সীমান্তের মর্যাদাটা জানে

by banganews

লাদাখে যখন অপরাধের পাহাড় গড়ছে আগ্রাসী চিন, শহর কলকাতার এই চিনখণ্ডের একটাও অপরাধ নেই। ব্যতিক্রমী এক চিনের কথায় মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।

লাদাখের গালওয়ান থেকে বৌবাজারের বো ব্যারাকের দূরত্ব কত, সঠিক জানা নেই। সীমান্ত সংকটের নেপথ্য নায়ক চিনদেশের সঙ্গে বো ব্যারাকের কেক ব্যবসায়ী চিনা মানুষটির মানসিক দূরত্ব কতটা, তাও জানা নেই।
জানা আছে, লাদাখের গালওয়ানে ‘আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি’র ফয়সালা হলেও চিনা বাহিনীর ষড়যন্ত্রে একজন ভারতীয় মেজর আর দুই ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। পাল্টা প্রতিরোধ শানাতে হয় ভারতকেও।
জানা আছে, গালওয়ান বিশ্বাসভঙ্গের এক টাটকা নজির।
জানা আছে, কলকাতার চায়না টাউনের নামী রেস্তোরাঁ নয়, বরং গলির গলি তস্য গলির চিনা বাড়ির হেঁশেল থেকে মেলে চাইনিজের আসল সুবাস। অতিথি সৎকারের মুড থাকলে সেই প্লেটের জন্য একটি পয়সাও নেয় না ‘চিন’।
কি আশ্চর্য বৈপরীত্য, না!
ভারতীয় তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসে যখন চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা কৌশল ঠিক করছে ভারত সরকার, তার মাত্র কয়েক মাস আগেই দেখা হয়েছিল বউবাজারের সেই ‘নিশ্চিন্ত’ পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। ‘নিশ্চিন্ত’, কারণ তাঁর দায়িত্ব বো ব্যারাক-এর। চাঁদনি আর সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের মাঝবরাবর এক ফালি চাঁদের মতো বো ব্যারাক। ব্যারাক নামে স্পষ্ট, সেনাছাউনি। এককালে ছিল তাই। সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। ব্রিটিশ সৈন্যদের এই ছাউনি বা মেস এর পরে জলের দরে কিনে নেয় এলাকার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবাররা। কেউ বা বলেন, হস্তান্তর ঘটেছে বিনা পয়সায়। তারপর থেকে এই ফালি অংশে ভারতীয় বা বাঙালি নেই। শুধুই অ্যাংলো।

আরও পড়ুন দুই ভারতীয় দূতাবাসকর্মীকে মুক্তি দিল পাকিস্তান

বর্তমানে বদল ঘটেছে আরও একটু। বো ব্যারাক এলাকার পঁচানব্বই শতাংশ বাসিন্দা চিনা। খুঁজলে হয়তো খানকয়েক অ্যাংলো পরিবার মিলবে। তবে চিনাদের সংখ্যা এখানে চোখে পড়ার মতো। এখানকার মানুষজন প্রধানত ব্যবসা করেন। খুব বড় কিছু নয়। ছোট বা মাঝারি। গোটা দুই করে খুপরি ঘর মিলিয়ে একটা করে পরিবার। আছেন জনা পাঁচশোর মতো মানুষ।
না, বেপাড়ার কারও সঙ্গে মেলামেশা বিশেষ নেই। তবে অতিথি আপ্যায়নের হাসিটুকু দিতে ভোলেন না।
কলকাতা পুরসভার খাতে তিরিশ টাকা করে ভাড়া জমা করেন মাসে মাসে। যদিও এই ভাড়া নিতে পুরসভা নারাজ। সময়ের নিরিখে বর্ধিত ভাড়া মেটাতে আবার বো ব্যারাক নারাজ।
তবে ওই অবধিই। কোনও মুখোমুখি সংঘর্ষ নেই কোনওদিন। বললাম না, বউবাজার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই অফিসার ভদ্রলোক খুব নিশ্চিন্ত!

আরও পড়ুন অস্ট্রেলিয়ার রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে টেন্ডুলকার ড্রাইভ কিংবা কোহলি ক্রিসেন্ট

বো ব্যারাকের জনা পাঁচশো মানুষ, অথচ একটাও কোনও রিপোর্ট নেই। ছুটকো ছাটকা নালিশ, তাও কালেকটালে। এই চিনা প্রজন্মর এলাকা থেকে শেষ বড় রিপোর্ট কবে দায়ের করা হয়েছিল?
নাহ। ভেবেচিন্তেও বলতে পারলেন না বউবাজার থানার অফিসার। শুধু বললেন—‘এরা খুব শান্ত। অপরাধপ্রবণ নয়। নিজেদের নিয়ে নিজেরা থাকে। তাও ভদ্রভাবে। কেউই বিরাট তালেবর কিছু নয়। জীবন মোটামুটি কঠিন। সেই জীবনটাকে বইতেই এদের দিন চলে যায়।’
সুর আছে, সুরা আছে, ছোটখাট উৎসবও আছে। তবু সে সবের ঠেলায় কোনও তাণ্ডব নেই।
নিজেরা আর নিজেদের কষ্টার্জিত জীবন। এই চেনা সীমান্তের বাইরে কক্ষণও পা রাখে না শহর কলকাতার এই চিন-ভূমি।
দুনিয়ার সব ফিতে জড়ো করলেও গালওয়ানের সঙ্গে এর দূরত্বটা বোধহয় মেপে ওঠা সম্ভব নয়!

You may also like

Leave a Reply!