শুধু খুন নয়, নৃশংসভাবে খুনের পরে যৌন নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বর্ধমানের চেন কিলারকে ফাঁসি দিল কালনার আদালত। সোমবার কালনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মণ্ডল খুনি কামরুজ্জামানকে এই সাজা শোনান। অপরাধীর এই চরমতম শাস্তিতে খুশি নির্যাতিতা ও মৃতদের পরিবার। বিলেতের ‘জ্যাক দ্য রিপার’ থেকে শুরু করে, কলকাতার ‘স্টোনম্যানে’র আতঙ্ক ঘুম কেড়েছিল অনেকের। এই ঘটনার নেপথ্যে কে তার হদিশ পেতে নাজেহাল হয়েছিল পুলিশ, কার্যত একইভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে পূর্ব বর্ধমান ও সংলগ্ন কয়েকটি জেলায় ধারাবাহিকভাবে খুনের ঘটনা ঘটছিল।
আরও পড়ুন তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে
এই খুন হচ্ছিল অভিনব উপায়ে। এই সিরিয়াল কিলার মহিলা সদস্য বাড়িতে একা রয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই বিদ্যুতের মিটার দেখার অছিলায় গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকত। তারপর অসতর্ক মুহূর্তে চেন দিয়ে পেঁচিয়ে খুন করত মহিলাদের, এবং এখানেই শেষ নয় এরপর তাদের মৃত দেহের সঙ্গে মেতে উঠত যৌনতায়। একই রকমের একাধিক বিভৎস খুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল পুলিশ। এরকম মৃতদেহের সঙ্গে যৌনসংসর্গ বা নেক্রোফিলিয়া এক ধরনের বিশেষ মানসিক বিকৃতি। আততায়ী এই মানসিক রোগে আক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
আগের বছর ৩০ শে মে কালনা থানার সিঙ্গেরকোণ গ্রামের এক কিশোরী সর্বপ্রথম চেন কিলারের বিকারগ্রস্ত লালসার শিকার হয়। তবে এক্ষেত্রে খুনের পর নয়, আগেই কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতন চালায় কামরুজ্জামান। বিকেলে তার মা ঘরে ফিরে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মেয়ে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও নির্যাতিতাকে বাঁচানো যায়নি।
আরও পড়ুন ভুটানের সঙ্গে চীনের নতুন সমস্যা ভারতের অরুণাচল প্রদেশ
১২ই জুন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নিস্পাপ কিশোরীর। তখনও পর্যন্ত খুনি কামরুজ্জামানের নাগাল পায়নি পুলিশ। ঘটনার মোড় ঘুরে যায় ওই বছরেরই ২২ জুলাই। পুলিশ চেইন কিলারকে ধরতে নানা জায়গায় যখন অনুসন্ধান চালাচ্ছিল তখনই কালনার কাঁকুড়িয়ার রাস্তা থেকে সন্দেহ হওয়ায় কামরুজ্জামান সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেরা করতেই কিশোরীকে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় অপরাধী। এরপর ওই বছরের ২৫ শে আগস্ট পুলিশ আদালতে চার্জশিট পেশ করে, আর ৭ ই সেপ্টেম্বর চার্জ গঠন হয়। কালনা মহকুমা আদালতে শুরু হয় বিচার। এই মামলায় সবমিলিয়ে মোট ৩৫ জন সাক্ষী বয়ান দেয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। গত ২ রা জুলাই, বৃহস্পতিবার কামরুজ্জামানকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক ও সোমবারের শুনানিতে অপরাধীকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক ।