Home দেশ হিন্দী কি সত্যিই ভারতের রাষ্ট্রভাষা?

হিন্দী কি সত্যিই ভারতের রাষ্ট্রভাষা?

by banganews

মানুষে মানুষে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই হল ভাষা। ভাষা ধারণাটির কোনো সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক ও অবিতর্কিত সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। এখানে মূল বক্তব্য হল আদেও কি হিন্দি ভারতবাসীর রাষ্ট্রভাষা? আসলে রাষ্ট্রভাষা কি? রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারের জন্য কোনো দেশের সংবিধান স্বীকৃত ভাষা হল রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রের সর্বাধিক মানুষের বোধগম্য ভাষা হিসেবে সাধারণত রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃত হয়ে থাকে। কিন্তু 2011 সালের জনগণনা অনুসারে 120 কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র 32 কোটি মানুষের মাতৃভাষা হিন্দি। 2010 সালে গুজরাট হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। সেখানে মামলাকারীরা বলেন যে সমস্ত পণ্যের ওপর তার তৈরির তারিখ, উপকরণ ও দাম হিন্দিতে লিখতে হবে কিন্তু হাইকোর্ট রায় দানের সময় জানায় যে হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা নয়। ভারত বহু ভাষাভাষীদের দেশ। ভারতীয় সংবিধানে সমস্ত ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে সমান অধিকার ও সম্মান প্রদর্শন করার কথা বলা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে মোট বাইশটি ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই শুধু হিন্দিকে ভারতবাসীর রাষ্ট্রভাষা বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সংবিধানের 343 নম্বর ধারায় দেবনগরী হরফে লেখা হিন্দিকে সরকারি কাজের ভাষার মর্যাদা দেওয়া হলেও রাষ্ট্রভাষা বলে কোথাও উল্লিখিত নেই।

কোনো একটি দেশ চালাতে গেলে ভাষার প্রয়োজন। তাই ত্রিভাষা নীতি মেনে কোনও অ-হিন্দি রাজ্যের মধ্যে হিন্দি ইংরেজী ও রাজ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়। হিন্দি ইংরেজীর মতো এবং ইংরেজীর সঙ্গে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসের কাজকর্ম করার জন্য অফিসিয়াল ভাষা। হিন্দি যদিও কখনোই রাষ্ট্রভাষা ছিল না তবুও ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে হিন্দি ভাষাকে বারবার ভারতবাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এইভাবে কোনো একটি ভাষাকে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সংবিধানের অসম্মান সাধন।

আরো পড়ুন – “মনে রেখো আমায়।” রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ফেসবুক পোস্ট ।

তবুও বাঙালিরা হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বলতে দ্বিধাবোধ করে না। বাঙালিরা বাংলা ছেড়ে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে এগিয়ে যায়। মাতৃভাষার প্রতি বাঙালির ভালোবাসা ও গৌরববোধ হারাতে বসেছে। তাই যেই ত্রিভাষা নীতির জন্য বাংলা ভাষা আজও টিকে আছে তাও তামিলদের অর্জিত। 1963 সাল পর্যন্ত 70 জন তামিল প্রাণ হারিয়েছিলেন এই সংগ্রামে। আজও আমরা ভাষা আন্দোলন ভুলে যায়নি। তবুও বাঙালিরা বাংলার পরিবর্তে হিন্দি বলতে প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ করে।আজও “আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা” বলার জন্যই বাংলা ভাষা বিলুপ্তির পথে।

ভাষা মানুষের ভালোবাসা। জোর করে ভাষা চাপিয়ে দিলে ভাষার মাধুর্য নষ্ট হয়ে যায়।কেউ গালিব পড়তে চাইলে সে উর্দু শিখবে, লাল্লেশ্বরীর কাশ্মীরি কবিতা কিম্বা অভিজ্ঞানশকুন্তলম পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ ভুলে যেতে হবে এরকম তো নয়। ভাষা আমাদের বাধ্য করবেনা আমরা ভাষার রূপ রস গন্ধ তে নিমজ্জিত থাকব। এখানেই ভারতবাসীর ঐক্য। তাই আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এর রচয়িতা একজন বাঙালি। জাতীয় পাখি ময়ূর যেটা পশ্চিমবঙ্গের থেকে গুজরাটে বেশি দেখা যায়।আমাদের ছোট্ট পুকুরে ফোটে আমাদের জাতীয় ফুল পদ্ম। আর আমাদের ন্যাশনাল প্লেজ যেটা তেলেগুর মতো একটি আঞ্চলিক ভাষায় লিখেছিলেন পিভি সুব্বারাও যার বঙ্গানুবাদ হল, ভারত আমার দেশ।সব ভারতবাসী আমার ভাই বোন।আমি আমার দেশ কে ভালোবাসি।

আরো পড়ুন – রঙিন জগতে এবার বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী

আমার দেশের বিবিধ সংস্কৃতিতে আমি গর্বিত।আমি, আমার দেশের সুযোগ্য অধিকারী হওয়ার জন্য সদা প্রচেষ্টায় থাকবো।আমি নিজের মা, বাবা, শিক্ষক এবং গুরুজনদের সদা সম্মান করবো।এবং বিনীত থাকবো।আমি আমার দেশ ও দেশবাসীদের প্রতি সত্যনিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
এঁদের কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি তেই আমার সুখ বিলীন।

You may also like

Leave a Reply!