Home পাঁচমিশালি দু তক্তা শ্রীরামপুরী কাগজ লম্বালম্বি চার টুকরোয় কেটে গদের আঠা দিয়ে জুড়ে রাখা হয়েছে। জিনিসটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্নের মোড়ক’।’ : ঠাকুরবাড়ির গল্প

দু তক্তা শ্রীরামপুরী কাগজ লম্বালম্বি চার টুকরোয় কেটে গদের আঠা দিয়ে জুড়ে রাখা হয়েছে। জিনিসটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্নের মোড়ক’।’ : ঠাকুরবাড়ির গল্প

by banganews

দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পাঁচ নম্বর বাড়িটা আর নেই। সময় সেটাকে খেয়েছে না জীবন বলা মুশকিল। তবে এই পাঁচ নম্বর বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় যারা থাকতেন তারা ছিলেন ঠাকুর পরিবারের অন্যতম নক্ষত্র। আমরা ঠাকুরবাড়ি বলতেই প্রথমে নাম মনে করি গুরুদেবের অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের। আজকে আমাদের অন্য ঠাকুরের গল্প।

একটি ছেলে দৌড়ে দৌড়ে আসছে নিজের দাদা মশাইয়ের কাছে। সে ছেলেবেলা থেকে দেখেছে অনেক লেখক। তাই নিজের ভীষণ শখ। লিখবে। প্লট খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই সে এসেছে দাদামশাইয়ের কাছে। এখনকার যে কোন বাপ জেঠু হলে তাড়িয়ে দিতেন সন্দেহ নেই। ছেলের কপালে মারও জুটতো বিস্তর। কিন্তু ছেলেটির দাদামশাই-এর মুখ একটু হাসি হাসি হলো। তিনি বললেন এতে আর কঠিন কি আছে। স্বপ্ন তো সকলেই দেখে। সেই স্বপ্ন লিখে ফেলা হোক। তাহলেই গল্প হয়ে যাবে। ছেলেটি ভাবলো সত্যিই। স্বপ্ন তো অনেক দেখি। গল্প তো হতেই পারে। ছেলেটি খুব উৎসাহে সে খবর বাকি ভাইদের দিল। পরদিন সকালে ছেলেটির মাস্টারমশাই এসে চমকে উঠলেন। ছেলেটার ভাষাতেই বলি, ‘দু তক্তা শ্রীরামপুরী কাগজ লম্বালম্বি চার টুকরোয় কেটে গদের আঠা দিয়ে জুড়ে রাখা হয়েছে। এতেই স্বপ্নের পর স্বপ্ন লেখা হবে।আর যেমন যেমন লেখা হবে তেমনি কোষ্ঠীর মত গুটিয়ে রাখা হবে । জিনিসটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্নের মোড়ক’।’

ছেলেটি আর তার দাদামশাইয়ের এই শখ থেকে সেদিন পার পাননি স্বয়ং মাস্টার মশাই ও। তাকেও লিখতে হয়েছিল স্বপ্নের কথা। দাদামশাইটি হলেন প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ছেলেটি হলেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়। দক্ষিণের বারান্দায় সেদিন পড়ার ঘন্টা বাজেনি। বেজেছিল স্বপ্নের ঘন্টা। মোহনলাল জানিয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ নিজেও লিখেছিলেন স্বপ্নের কথা। অবনীন্দ্রনাথ বলতেন , ‘আমি যে জেগেও স্বপ্ন দেখি’।

আরো পড়ুন – “মনে রেখো আমায়।” রবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিই ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ফেসবুক পোস্ট ।

স্বপ্নের মোড়কের কিছুদিন চলবার পর সেই স্বপ্নের মোড়কের থেকে বেরিয়ে ভাবা হল এক হাতে লেখা পত্রিকা বানানো হবে। অবনীন্দ্রনাথ নাম ঠিক করে দিলেন দেআলা। প্রথম গল্প সেখানে রাখা হল তারই। আরো জানা কয়েকের থেকে লেখা নেওয়া হল। নেওয়া হলে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে। শেষ পর্যায়ে অবন ঠাকুর এলেন আবার। বললেন, পত্রিকা হলো, ধাঁধা থাকবে না? লিখে দিলেন ধাঁধা।
‘হবুচন্দ্র ঘুম ভেঙে গবুচন্দ্রকে হাঁক দিলেন-মন্ত্রী ,ও মন্ত্রী!দেখো সে পশ্চিমে সূর্যোদয় হচ্ছে। মন্ত্রী ভাল, রাজা দেয়ালা করছেন, তাই পাশ ফিরে নাক ডাকিয়ে চললেন। রাজা আবার ডাকলেন- মন্ত্রী, দেখো সে আশ্চর্য ব্যাপার পশ্চিমে সূর্য উঠছে। এমন বার বার তিন বারের পর মন্ত্রী এসে বললেন, মহারাজা, এ কি প্রলাপ বকছেন? রাজা বললেন , বিশ্বাস হলো না ? এই দেখো। এ দিকে ঘড়িতেও ঠিক সকাল ছ-টা বাজলো।গবুচন্দ্র ভাবতে ভাবতে চললেন- এ আশ্চর্য ঘটনা কেমন করে ঘটলো?’

ধাঁধা তো বললেন। উত্তর বললেন না অবনীন্দ্রনাথ। একটু দয়া হওয়ায় একটা খাম নিয়ে সেই খামে উত্তর লিখে আঠা দিয়ে সেঁটে দিলেন ভিতরে। মাসের শেষে খোলার নির্দেশ রইলো।
কেউই সে উত্তর দিতে পারেনি। মোহনলাল জানিয়েছেন পরে তারা হইহই করে সে খাম খুলেছিলেন। তাতে লেখা ছিল রাজার ঘরে পশ্চিম দিকের দেয়ালে ঠাকুরদাদা আমলের এক মস্ত আয়না ছিল। পরবর্তী সময়ে দেয়ালাতে লিখেছেন অনেকেই। মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের পারম্পৰ্য বা অবনীন্দ্রনাথের সহজ চিত্রশিক্ষা সবই বেরিয়েছে সেই হাতে লেখা পত্রিকায়।অরুনেন্দ্রনাথের একটি মাত্র ছোট গল্প ফিরনি খাওয়ার গল্প সেটাও প্রথম বেরিয়েছিল এই পত্রিকায়। পরে রংমশাল এ ছাপা হয় সেটা। দেয়ালা র জন্য আরো একজনের কাছে গল্প চান মোহনলাল। তিনি বড় দাদামশাই, অর্থাৎ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনিও জীবনে একটিই রচনা করেছেন। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দাদাভায়ের দেয়ালা’। দেয়ালা তে এই রচনা যায়নি। গিয়েছিল শারদীয়া বসুমতী তে। পরবর্তী সময়ের পাঠক এই গল্পটিকে চেনেন ‘ভোঁদড় বাহাদুর’ নামে।
এরকম ভাবেই বিস্মৃত হয়ে থেকে যায় কত পত্রিকা। কত স্মৃতি, কত স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখা লেখা হয়ে ধরা দিয়েছিল প্রথম যে পত্রিকায় তাতে জুড়ে ছিল ঠাকুরবাড়ির নাম।জুড়ে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ, এই তথ্যও অনেকেরই অজানা। আজ তাই শুধু স্বপ্নের গল্প নিয়ে সে পত্রিকার কথা রইলো।

You may also like

Leave a Reply!