মনের বয়স বাড়ে না যদি সেই মনের অধিকারী ব্যাক্তি না চান। তাই হ্যারি পটারের মতো কিছু চরিত্র আছে যারা কালজয়ী। সময় বা বয়স কোনো বাধার আবর্তেই থেমে থাকেনি এর জনপ্রিয়তা। কল্পনার জগতের সেই যুবরাজের সৃষ্টির ইতিহাস খুবই চিত্তাকর্ষক। লেখিকা জে. কে. রাউলিং হ্যারি পটারের মোট সাতটি সিরিজ লেখেন। শিশু সাহিত্যিক হিসেবে তিনি যে বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করেন তা সত্যি অকল্পনীয়। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতটি বইয়ের প্রথম ছয়টি বই সারা পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন কপিরও বেশি বিক্রী হয়েছে এবং ৬৪টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় রাউলিং এর জনপ্রিয়তা শিশু সাহিত্যের জগতেই থেমে নেই। চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গেমস – সমস্ত জগতেই হ্যারির অবাধ বিচরণ। সাতটি উপন্যাসখ্যাত লেখিকার মুখে প্রাথমিক ব্যর্থতা ও পরবর্তী সাফল্যের কাহিনী শুনলে তা আমাদের অনুপ্রেরণা জাগাতে বাধ্য।
লেখিকা জানিয়েছেন তিনি প্রায় ৬ বছর বয়স থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লিখছেন। অনেক ছোট বয়স থেকেই তাঁর কলম ছিল প্রিয় বন্ধু। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নয় তিনি ঐ অল্প বয়স থেকেই চেয়েছিলেন লেখক হতে। বই পড়তে তিনি এতই ভালবাসতেন যে এক্সিটার ইউনিভারসিটিতে পরার সময় তাঁর পঞ্ছাশ পাউন্ড জরিমানা হয়েছিল অতিরিক্ত সময় বই রাখার জন্য। মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর লেখা প্রথম গল্পের নাম র্যাবিট। তারপর এগারো বছর বয়সে তিনি লেখেন প্রথম উপন্যাস। রাউলিং এর আসল নাম জোনা রাউলিং। ক্যাথলিন তাঁর মাতামহীর নাম। হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম গল্প প্রকাশনার সময় প্রকাশকের মনে হয় মহিলা ঔপন্যাসিক এর লেখা সেভাবে জনপ্রিয় নাও হতে পারে। তাই তিনি লেখকের নাম জে. কে. রাউলিং রাখতে বলেন। হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন অর্থাৎ সিরিজের প্রথম গল্পটি শেষ করতে জোনাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে হয়েছিল। জীবনের এক কঠিন সময় দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ছোট্ট মেয়ে জেসিকাকে নিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করেন সেসময় কিন্তু রাউলিং এর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ঘুমন্ত জেসিকাকে সাথে নিয়ে দিন রাত জেগে শেষ করেন উপন্যাসটি। অক্লান্ত পরিশ্রম তার যোগ্য সম্মান পায়।
কালো চুলের চশমা পরা হ্যারির জন্মের গল্প ও ভারি আকর্ষণীয়। ১৯৯০ সালে ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন কিংস ক্রস আসার ট্রেনটি ভাগ্যিস ৪ ঘণ্টা লেট ছিল। রাউলিং এর কাছে ছিলনা ভালো কোনো পেন। তাই হ্যারি ও তার অভিযানেরপুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা লেখিকার মগজে জমা হচ্ছিল ।কল্পনার অনেকটাই যদিও লেখার সময় বাদ পরে যায়। লেখা শেষ হতে এজেন্টদের কাছে জেতেই যে সাফল্য আসে তা একেবারেই নয়। রাউলিংকে শুনতে হয় শিশু উপন্যাস হিসেবে তার উপন্যাসটি অনেক বেশি দীর্ঘ। অন্য আট প্রকাশক বইটি প্রকাশে অসম্মতি জানানোর পর শেষ পর্যন্ত ব্লুমসবারি রাউলিংকে অগ্রিম £২,৫০০ এর প্রস্তাব দেয়। এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি হ্যারিকে। তার দুই প্রিয় বন্ধু রন উইজলি ও হারমায়নি গ্রেঞ্জারকে সাথে নিয়ে নানা অ্যাডভেঞ্চারে দাপিয়ে বেড়ায় আট থেকে আশির কল্পনার জগত।