ভাষার কি কখনও মৃত্যু হয়। ভাষা কি চিরতরে হারিয়ে যায়। হ্যাঁ এইরকমই একটা কাহিনী উঠে এসছে, এখানে একটি বিশেষ ভাষার মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। ভাষাটি হল আন্দামানিক ভাষা সারে। মূলত ছয়টি ভাষা পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় ভারতে। ইন্দো-আরিয়ান, দ্রাবিড়, টিবেতো-বর্মান, অস্ট্রো-এশিয়াটিক, তাই-কাদাই এবং গ্রেট আন্দামানিক এই ছয়টি ভাষার উল্লেখ পাওয়া যায় ভারতে। এর মধ্যে সারে হল গ্রেট আন্দামানিক ভাষা। আর সেই ভাষার একমাত্র বক্তা ছিল লিচো। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় লিচোর আর তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে চিরতরে হারিয়ে গেল গ্রেট আন্দামানিক ভাষা সারে। এই গ্রেট আন্দামানিক ভাষা নেগ্রিট ও ওগান ভাষার সংমিশ্রনে গঠিত।
এর মধ্যে আন্দামানের প্রাচীন চারটি ভাষা মিশে রয়েছে। জেরো, সারে, খোরা এবং বো। এর আগে ২০১০ সালে খোরা এবং বো ভাষা হারিয়ে গিয়েছে। আর এই সারে ভাষার একমাত্র বক্তা ছিলেন রাজা জিরাকের প্রথম সন্তান লিচো।তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি যক্ষ্মা ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন, এর সাথে তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে আন্দামান থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল সারে ভাষাটি। এখন একমাত্র প্রাচীন ভাষা হিসাবে অস্তিত্ব রয়েছে জেরো র। মাত্র তিন জন আদিবাসী বাঁচিয়ে রেখেছে এই ভাষাটিকে। অবশ্য তাঁদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে বিস্তর। যেকোনো মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে। আর সেই কারণে জেরো ভাষাটির অস্তিত্ব সংকটে।
আরও পড়ুন মুম্বাইয়ের ৯৯ বছরের এক বৃদ্ধা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালেন দেখে নিন ভিডিওটি
তবে ‘সারে’ ভাষা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গেলেও লিচোর কাজের মধ্যে দিয়েই তার অস্তিত্ব রয়ে গেছে খানিকটা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শিক্ষাদপ্তরে কাজ করতেন লিচো। ভাষাবিদ অনবিতা আব্বিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সারে ভাষার। এই ভাষার ব্যাকরণের নিয়ম এবং অভিধান তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন লিচো। অনবিতা আব্বির সেই গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৩ সালে। একমাত্র এই গ্রন্থই ইতিহাসের দলিল হয়ে ‘সারে’ ভাষার নথি বাঁচিয়ে রাখল। কিন্তু কথা বলার মত কেউ থাকল না।