করোনা ভাইরাসের জেরে গৃহবন্দি দেশবাসী। সেই অবসরেই বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা। জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে অভিযোগ জমা পড়ছে। এ রাজ্যেও বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা।
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যের বহু মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। তাঁদের মধ্যে অনেকে মানসিক, অনেকে শারীরিক আবার অনেকে মানসিক এবং শারীরিক দু’ভাবেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা নিগৃহীত।”
মার্চের শেষদিক থেকে লকডাউন শুরু হয়। আর এপ্রিলের শুরু থেকে হিংসার ঘটনা বাড়ছে।
তবে সব ঘটনাই যে লকডাউন শুরুর পরে ঘটতে শুরু করেছে এমন নয়। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নথিভক্ত বহু ঘটনা পুরনো। অর্থাৎ বাড়ির মহিলা সদস্য বহুদিন ধরেই কোনও না কোনওভাবে নিগৃহীত। কিন্তু লকডাউনের ফলে সেই অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আগে শুধুমাত্র মানসিক নিগ্রহের মধ্যে বিষয়টা সীমাবদ্ধ থাকলে, লকডাউনে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শারীরিক নিগ্রহ বা হেনস্থার মতো ঘটনা।
আরও পড়ুন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গে, পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গেও বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ
মূলত হিংসার শিকার হচ্ছেন গৃহবধূরাই। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ জানানোর জন্য কমিশনের একটা ফোন নম্বর সবসময়ের জন্য দেওয়া থাকে। সেখানে ফোন করে অভিযোগ জানান অনেকে। কিন্তু, এমনও অনেকে রয়েছেন বিভিন্ন কারণে তাঁরা জানাতে পারছেন না সমস্যার কথা।
কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “লকডাউন শুরুর আগে যে প্রমাণ অভিযোগ জমা পড়ত, সেই সংখ্যাটা একধাক্কায় বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। মহিলারা ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইলের মাধ্যমে তাঁদের অভিযোগ নথিভুক্ত করছেন।”
টুইটে সুরেশ রায়না লেখেন, ‘‘লকডাউন আমাদের নানা ভাবে আমাদের পরিবারকে ভালবাসতে ও পরিবারের সকলের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকতে শিখিয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শিশু নিগ্রহ ও গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা সারা বিশ্বে বেড়ে চলার কথা পড়াটা অস্বস্তিদায়ক। যাঁরা হিংসার শিকার হচ্ছেন, তাঁদের কাছে আমার আর্জি, আপনারা সাহায্যের জন্য আবেদন করুন। চুপ করে থাকবেন না।”
২০১৬ সাল। সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার রায়দানের সময়ে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন ও দীপক মিশ্রের বেঞ্চ জানায় যে,
১/ বাড়ির বউ পরিবারের অংশ, বাড়ির কাজের লোক নয়।
২/কোনও পরিস্থিতিতেই তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া যাবে না।
যদিও এতে বধূ নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। এখনও সংবাদ শিরোনাম হয়ে চলেছে মারধর-সহ ঘরোয়া হিংসার নানা ঘটনা। এর একটা বড় কারণ মেয়েদের অজ্ঞতা।
আরও পড়ুন গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোভিড টেস্ট শুরু হল গুয়াহাটিতে
আপনার প্রথম অধিকারকটিই হল সসম্মানের মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার।
★ গৃহবধূর উপর পরিবার কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, এছাড়া দুর্ব্যবহার ও ইচ্ছাকৃত মানসিক অত্যাচার করলে তা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স৷
★ কোনো কারণে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গেলে তাঁকে বঞ্চিত করা চলবে না।
★ বিবাহ বিচ্ছেদ এর আগে অবধি স্ত্রী ও তার সন্তানের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত খরচ বহন করা স্বামীর ‘আইনি’ কর্তব্য।
★ বিয়েতে প্রাপ্ত উপহার স্ত্রীধন বা ওম্যান অ্যাসেট হিসেবে বিচার্য। হিন্দু সাকশেসন অ্যক্ট অনুযায়ী, এই সম্পত্তিতে আর কারও অধিকার নেই। বল প্রয়োগ করলে বা সঠিক সময়ে ফেরত না দিতে চাইলে তা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫-এর অন্তর্গত অপরাধ।
★ যতক্ষণ না বিবাহবিচ্ছেদের সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে অন্য কোনও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রাখতে পারেন না কোনও স্বামী।
★ স্বামীর বাসস্থানে নিখরচায় আজীবন থাকার আইনি অধিকার রয়েছে স্ত্রীর।
হিন্দু সমাজে যা স্ত্রী-ধন, মুসলমান সমাজে তাই মেহের । মেহেরের অধিকার একান্তই যিনি পাচ্ছেন তার। তা সঠিক সময়ে না পেলে, রক্ষণাবেক্ষণ না হলে সেকশন ১২৫ এ মামলা রুজু করতে পারেন মুসলিম বিবাহিতা মহিলা।
শরিয়তি আইন বলে মৃত স্বামীর সম্পত্তির আটভাগের এক ভাগ প্রাপ্য স্ত্রীর যদি তিনি সন্তানের মা হন। সন্তান না থাকলে প্রাপ্য হবে চার ভাগের এক ভাগ।