ঋত্বিক ঘটক আর উত্তমকুমার। দুজনের সখ্য আর শ্রদ্ধা গভীর। তবু সম্পর্কটা জুড়ে শুধুই দীর্ঘশ্বাস
উত্তমকুমার সেদিন শুটিং করছেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে। এর মধ্যেই এল খবর। ঋত্বিক ঘটক হাসপাতালে। শুটিং ফেলেই দেখতে যাওয়ার জন্য তৈরি মহানায়ক। কিন্তু দিনের বেলা এভাবে হাসপাতালে তিনি যাবেন কী করে! লোক ভেঙে পড়বে যে!
উত্তমকুমার বেপরোয়া। ঋত্বিক ঘটক হাসপাতালে, আর তিনি শুটিং করবেন! ছুটলেন দেখতে।
অসুস্থ ক্লান্ত ঋত্বিক উত্তমকে দেখেই বলে বসলেন সেই চিরকেলে কথাটাই—পরের ছবিটাই তোমায় নিয়ে করব। ডেট ফাঁকা রেখো।
উত্তমও বরাবর যা বলেন, তাই বললেন—আপনার জন্য আমার সমস্ত ডেট ফাঁকা। আপনি সুস্থ হোন তো আগে।
আসলে এটা তাঁদের একরকম অভ্যাসের মতো ছিল। দুজনে একসঙ্গে কোনও কাজ করেননি। কিন্তু করতে চাইতেন ভীষণভাবে। এতটাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দুজনের মধ্যে। সব পেরিয়ে বরং নিখাদ সখ্য বলা ভালো।
উত্তমকুমারকে নিয়ে শেষ অবধি আর কাজ করে উঠতে পারলেন না ঋত্বিক। তবে উত্তম এগিয়ে এলেন কিন্তু। ঋত্বিককে নিয়ে কাজ করতে। বনপলাশীর পদাবলী। পরিচালনা করবেন ঋত্বিক ঘটক। প্রযোজক উত্তমকুমার আর কারও দিকে তাকাননি। অগ্রিমও দেওয়া হয়ে গেছে ঋত্বিককে। ঋত্বিক ঘটক সে সময় অসুস্থ। টাকাটারও দরকার ছিল খুব।
‘একটু সেরে উঠি। তারপরেই কাজটা ধরছি’—শীর্ণ আঙুলগুলো দিয়ে উত্তমকুমারের হাতদুটো ধরে আছেন ঋত্বিক। তাঁর মাথায় যত্ন করে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন মহানায়ক।
না। বিছানাটা আর উঠতেই দিল না ঋত্বিককে। অসুস্থ থেকে আরও অসুস্থ হয়েই চললেন ঋত্বিক ঘটক। অনন্ত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসে রইলেন উত্তমকুমার।
হল না! আর হল না!