মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
‘উহান ভাইরাস’ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিষোদ্গার করছেন, কে জানে কোন গবেষণাগারে ভবিষ্যতের এক সহজ সমাধানের বীজ বোনা হচ্ছে সেই সময়টায়। এমনকী ‘চিনের দালাল’ হুঙ্কার দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া অনুদান বন্ধ করছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন, তখনই হয়তো নিঃশব্দে কিল হজম করে সুদিনের প্রতীক্ষা করছে চিন।
অবশেষে ‘সুদিন’ দরজায়। আমেরিকার মসনদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়। যদিও ট্রাম্প জমানার শুরু হয়েছিল নাকি চিনের সাহায্যে, এমন দাবি আর গোপন নেই। তবুও মধুচন্দ্রিমার ইতি ঘটেছে কবেই। জিন পিংয়ের চিন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ক্রমে দুই মেরুর দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছে নিজেদের। সেখান থেকে তৈরি হয়েছে নানাবিধ ক্ষত।
আরও পড়ুন মার্কিনি কমলা ফিরবেনই, রঙিন হচ্ছে তাঁর ভারতীয় মামা-গ্রাম
তবে ক্ষত তো চিরকাল থাকে না। প্রলেপও পড়ে। মার্কিন-চিন ক্ষতের প্রলেপ হয়ে আসরে এবার জো বাইডেন। আমেরিকার নতুন কর্ণধার।
আজ থেকে অন্তত সাতবছর পিছিয়ে গেলে ২০১৩ সালে বাইডেনের চিন সফরটা দেখতে পাব আমরা। রেকর্ড বলছে, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিনে গেছেন ছেলে হান্টার বাইডেনকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর পরলোকগতা প্রথম স্ত্রী আর জীবিত দ্বিতীয়া, দুজনের সূত্রে চারটি মেয়ে। সবেধন নীলমণি বংশধর এই একটিই। প্রথম স্ত্রী আর একটি মেয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সময় ছেলে হান্টারও গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে আহত ছেলের পাশে বসেই সেনেটর হিসেবে প্রথমবার মার্কিন শপথবাক্য পাঠ করেন বাইডেন।
সে অবশ্য অনেক পুরনো কথা। ২০১৩-য় ফিরলে দেখা যাবে, দুই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজেই চিনযাত্রা করেছিলেন বাইডেন। দক্ষিণ চিন সাগরের দ্বীপপুঞ্জে আচমকা চিনা সৈন্য সমাবেশের সঠিক কারণ জানতে। সেই সঙ্গে মার্কিন ব্যবসার ওপর চিনের চাপিয়ে দেওয়া উচ্চ শুল্ক নিয়ে ইতিবাচক রফা করতে।
আরও পড়ুন মার্কিন নির্বাচনে জিতলেন মীরা নায়ারের ছেলে
এই দুই বিষয়ের অগ্রগতি ঘটল খুব সামান্যই। তবে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হল হান্টার বাইডেনের নিজস্ব কোম্পানি রোজমন্ট সেনেকা প্রাইভেট ইক্যুইটি-র ব্যবসা। যা ওবামা সরকারের কার্যকালের শুরুতেই ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলে, সেক্রেটারি অফ স্টেট জন কেরির সৎ ছেলে এবং তাঁর বন্ধু মিলে তৈরি করে ফেলেছিলেন।
সে যাত্রা তাঁদের সংস্থায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চিন। চিন সফর সেরে বাইডেন ফিরে আসার দু সপ্তাহের মধ্যেই এক বিলিয়ন ডলার চলে আসে। বাকিটা কিছু পরে।
অবশ্য শুধু চিন নয়। রাশিয়া, কাজাখাস্তানের সঙ্গেও বাইডেন আর তাঁর সুহৃদদের ব্যক্তিস্বার্থের লেনাদেনা বড় মন্দ নয়। এমনকী বিন্দুমাত্র বাস্তুজ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্র ইরাকের ভাঙা হাটে লাখে লাখে বাড়ি গড়ে দেওয়ার বরাত পায় ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাইয়ের কোম্পানি।
এসব নিশ্চয়ই ‘ছোটখাট’ ঘটনা। বড়সড় পদাধিকারীদের হয়েই থাকে। কথা এগুলো নয়। কথা হল, ‘উহান ভাইরাস’-এর তৃতীয়/চতুর্থ তরঙ্গের মাঝখানেই চিন-মার্কিন সমীকরণটা বদলাবে কিনা!
বিশ্বের বাকি দেশ, বিশেষত ভারতের পাখির চোখ সেদিকেই। অঙ্কের ফলাফল যে অনেক দূর গড়াবে!