Home পাঁচমিশালি ভারতীয় পুরাণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক রত্নভাণ্ডার।

ভারতীয় পুরাণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক রত্নভাণ্ডার।

by banganews

দেবাদিদেব মহাদেব হিন্দু পুরাণের বেশ অনেকটা জুড়ে রয়েছেন কারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা এবং সৃষ্টি-স্থিতি-লয় এই তিন এর নিয়ন্ত্রণকারী। পার্বতী হলেন শিবের দ্বিতীয়া স্ত্রী। কিন্তু পুরাণ মতে তিনি শিবের প্রথমা স্ত্রী সতীরই অবতার। নিজের পিতার দ্বারা স্বামী মহাদেবের অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী আত্মাহুতি দেন পবিত্র আগুনে। এর পর সতী আবার জন্ম নেন পার্বতী রূপে এবং মিলিত হন পরমসত্ত্বা দেবাদিদেবের সাথে।

সতীর দেহত্যাগের পর শিব আবার ফিরে যান তপস্বীর জীবনযাত্রায়। হিমালয়ের যেখানে শিব তপস্যা করতেন, তার থেকে কিছু দূরে বাস করতেন রাজা হিমাবন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন স্বর্গের অপ্সরা মেনকা। বেশ কিছু সময় পর মেনকার কোল আলো করে এলো এক অপূর্ব সুন্দর কন্যাসন্তান। রাজা তাঁর নাম রাখলেন পার্বতী। স্বভাব ও রূপ এই দুই দিয়েই পার্বতী সকলের মন জয় করে নিত। সময়ের সাথে এই ছোট্ট কলি যখন বিকশিত হল, তখন পিতা হিমাবন অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পরলেন। তাঁর সুযোগ্যা কন্যার পাণিপ্রার্থী হিসেবে তিনি কাউকেই বেছে নিতে পারলেন না। এমন সময় রাজ দরবারে এসে উপস্থিত হলেন নারদ্মুনি। পার্বতী যখন দেবর্ষির আশীর্বাদ নিতে এলেন, তখন তাকে দেখা মাত্রই নারদ বলেন পার্বতীর জন্ম হয়েছে মহাদেবের সাথে স্ত্রী রূপে মিলিত হবার কারণে। এসব শুনে একদিকে হিমাবন যেমন উচ্ছসিত হলেন নিজের কন্যার স্বামীভাগ্যের কথা ভেবে, তেমন আবার চিন্তিত হয়ে পড়লেন মহাদেবের কাছে এই প্রস্তাব কীভাবে নিয়ে যাবেন সেই কথা ভেবে। সতীর মৃত্যুর পর শিব তখন ধ্যানে মগ্ন। সেই তপস্বী কোনো নারী সংসর্গের কথা কল্পনাও করেন না। শিবের ধ্যান ভাঙ্গার কোন লক্ষণ না দেখে রাজা হিমাবন তাঁর কন্যাকে নিয়ে শিবের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং শিবকে অনুরোধ করলেন পার্বতীকে তাঁর চরণে আশ্রয় দিতে এবং পার্বতী পরিবর্তে তপস্যার কাজে সাহায্য করবে। মহাদেব এতে রাজি হলেন এবং রাজাকে ধন্যবাদ দিলে রাজা খুশি মনে প্রাসাদে ফিরে গেলেন।

পার্বতী তাঁর কর্মে মনোনিবেশ করলেন এবং সারাদিনের কাজের মধ্যে উপলব্ধি করলেন যে শিবের মাথার অর্ধচন্দ্রের দিকে তাকালেই তাঁর সমস্তক্লান্তি দূর হয়ে যায়। নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় তাঁর মধ্যে। শিবের তপস্যা আগের মতই চলতে দেখে ইন্দ্রদেব বিচলিত হলেন। তিনি গেলেন প্রেমের দেবতা কাম এর কাছে। কামদেব ও তাঁর স্ত্রী রতি ইন্দ্রদেবের কথা মতো শিবের তপস্যাস্থলে পৌঁছালেন। কামদেব তাঁর প্রেমশেল ছুঁড়তে উদ্যত হলেন কিন্তুমহাদেবের তেজের কথা স্মরণ করে তাঁকে দেওয়া কাজ সম্পন্ন করতে পারলেন না। এমন সময় ফুলের মালা নিয়ে আসছিলেন পার্বতী। পত্নী রতির পরামর্শ অনুযায়ী নিজ কর্তব্যে অবিচল থেকে বাণ ছুঁড়লেন কামদেব। বৃথা গেলনা সেই প্রচেষ্টা। চোখ মেলে শিব পার্বতীকে এক অন্য ভাবে দেখতে থাকলেন। কিন্তু তিনি তো দেবাদিদেব মহাদেব! তাঁর তপস্বী মনঃসংযোগের সামান্য চ্যুতি ঘটায় তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাঁর তৃতীয় নয়নের থেকে নিঃসারিত অগ্নি মুহূর্তেই ভস্মে পরিণত করল কামদেবকে। পতির শোকে যখন প্রাণ দিতে গেলেন রতি তখন তিনি দৈববাণী সুনলেন যে শিব পার্বতী এই যুগলের বিবাহ সম্পাদন হলেই কাম ফিরে পাবেন প্রাণ।
ইতিমধ্যে মহাদেবের মন জয় করতে পার্বতী শুরু করলেন কৃচ্ছসাধন। পূজা সেরে প্রতিদিন গলা অবধি জলে ডুবে প্রার্থনা করতেন পার্বতী। অবশেষে তুষ্ট হলেন শিব। তবে পার্বতীকে পত্নী রূপে গ্রহণের পূর্বে তাঁকে পরীক্ষার জন্য কৌতুকের আশ্রয় নিয়েছিলেন। এক সাধুর রূপ ধরে পার্বতীর সামনে এসে তাঁকে বলেন শিব দুর্গন্ধময় বাঘছাল পড়ে , গায়ে ভস্ম মেখে ঘুরে বেড়ায়। এমন এক যোগীকে বিবাহের জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠার অর্থ কি? এর থেকে নিজের যোগ্য কোনো ব্যাক্তিকে খুঁজে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। একথা শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে যোগীকে চলে যেতে বলেন। এরপর স্বরূপে ধরা দেন মহাদেব এবং অল্প সময়ের পর তাদের বিবাহ সম্পাদন হয়। শিব ও পার্বতী বিবাহের পরে চলে যান কৈলাসে । দৈববাণী অনুযায়ী শিব ও ফিরিয়ে দেন কামদেবের প্রাণ।

You may also like

Leave a Reply!