Home বিদেশ দত্তকে ডাউন সিনড্রোম ভারতের প্রথম এমন ‘বিশেষ’ দম্পতির গল্প

দত্তকে ডাউন সিনড্রোম ভারতের প্রথম এমন ‘বিশেষ’ দম্পতির গল্প

by banganews
মেয়েটি কেন জানি, একেবারে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল গর্ভস্থ সন্তান তার হবে না। বিয়ে সংসার করবে ঠিকই। তবে সন্তান নেবে দত্তক। কোনও এক অপূর্ণ মনের শিশু তার মধ্যে মা খুঁজে পাবে। সেই হারিয়ে পাওয়াতেই তার পূর্ণতা। কিন্তু স্বামী, শ্বশুরবাড়ি?
কথায় বলে না,,শুভ সঙ্কল্পের পাশে কপাল নিজে বসে থাকে! এই মেয়েটিই তার নজির। মেয়েটিই তো বলব। সঙ্কল্পের সময় বয়স কত তার! মোটে ১৫-১৬। সেই কিশোরীকাল থেকেই কবিতা বালুনির চোখে আশ্চর্য স্বপ্ন। প্রেম হয়নি তাঁর। দেখেশুনে বিয়ে। তবে বিয়ের আগেই হবু স্বামীকে সব বলেকয়ে নিয়েছিলেন। পরে যাতে স্বপ্নভঙ্গ না হয়ে যায়। হিমেশ কাকতওয়ানি কিন্তু এককথায় রাজি। না,শুধু স্ত্রীর মন রাখতে নয়। বরং নারী স্বাধীনতার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এই মানুষটি বুঝতে পেরেছিলেন এমন সঙ্কল্পের তাত্পর্য। বিয়ের আগেই তাঁদের দুজনের সিদ্ধান্ত, কোনও অনাথ শিশুকন্যাকেই দত্তক নেবেন তাঁরা।
বিয়ে হল। বছর পাঁচেক ঘুরলও। সন্তানের জন্য দুই বাড়ির লোকই পীড়াপীড়ি করেন। কবিতা-হিমেশের যুক্তি স্বাভাবিকভাবেই কোনও পরিবার মেনে নিতে পারেনি। যখন দেখা গেল,এ যুক্তিতে তাঁরা অনড়, দুই পরিবারেরই সমর্থন সরল তাঁদের পাশ থেকে। ‘তখনও অবধি জানি কোনও অনাথ বাচ্চা নিয়ে আসব আমরা। পরিবার পাশে নেই তো কি! একজনের পাশে আরেকজন তো আছি! তবে আমাদের সিদ্ধান্তে আরও বড়সড় বদল দেখা দিল আমেরিকায় ঘুরতে যাওয়ার পর’, বলছেন কবিতা।
এই যে বদলটা এল,এই বদলই তাঁদের জুটির ভারতের ‘এক এবং একমাত্র’ বিশেষণটি বসিয়ে দিল বড় যত্ন করে।
কী সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা?
আমেরিকার মাটি তাঁদের এক কঠিন জীবনযন্ত্রণার ছবি দেখাল। ডাউন সিনড্রোম। দেখলেন,এমন শিশুর পাশে সমাজের অবস্থানও কেমন নড়বড়ে।
অমন আধুনিক মাটিতেই যদি এই অবস্থা, তাহলে ভারতের মতো আধা-গরিব সমাজে এমন শিশুদের ঠিক কী অবস্থা! আবার তারা যদি অনাথ হয়!
কবিতা আর হিমেশের সিদ্ধান্ত আবারও বদলাল। শুধু অনাথ নয়, ডাউন সিনড্রোমের লক্ষণ আছে এমন অনাথ শিশুকেই দত্তক নেবেন তাঁরা। অন্তত একটি শিশু তো ভরসা পাবে এ দেশে! পরিবারের সমর্থন পাশ থেকে সরেছে আগেই। কারও অনুমতির কোনও প্রয়োজন নেই। কবিতা আর হিমেশ নিজেরাই নিজেদের পরিবার।
বেদা। সেই পরিবারের সবেধন নীলমণি। ডাউন সিনড্রোমের শিশু। কবিতাদের ঘরে। “কেউ বলে দেয়নি কী করতে হবে। বেদাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিজেরাই নিজেদের সেরা বুদ্ধিমতো পালন করে চলেছি। এ ধরনের শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন, বিশেষ মনোযোগ, বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন। নিজেরাই ঠিক করে নিই, কীভাবে তৈরি করব বেদাকে। ও যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, এ ব্যাপারটা একেবারেই আমল দেওয়া হবে না। বরং যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবেই মানুষ করা হবে বেদাকে। সিঁড়ি ওঠানামার মধ্যে দিয়ে ওর পেশিশক্তি বাড়ানো, জামাকাপড় দেখিয়ে রং চেনানো, খাবারের স্বাদ চেনানোর মতো বিভিন্ন কার্যকরী শিক্ষা আমরা নিত্য যাপনের ফাঁকে ফাঁকে দিতে থাকি। সেই সঙ্গে একেবারে শুরুর দিন থেকে নিয়ে ডাক্তার আর ওষুধের বিষয়টি তো আছেই। যা করি, আমরা দুজনে মিলে শুরু করি। শেষ করি তিনজনে। বেদা-ও হাত মেলায়। কবিতা সত্যিই এখন গর্বিত মা।
তবে সতর্কও। বেদার কোনও বিশেষ লক্ষণ বা বৈলক্ষণ সম্পর্কে তার সামনে যাতে কেউ কিচ্ছু না বলতে পারে, সে সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ তাঁরা। ‘যে যা-ই মনে করুক না কেন, বেদার মধ্যে একেবারে কোনও নেগেটিভ ছাপ পড়তে দেওয়া চলবে না। এটাই আমাদের সম্মিলিত ব্রত” বলছিলেন কবিতা।
এই ব্রত বর্তমানে পা দিল চারবছরে। ছোট্ট বেদা বালুনি কাকতওয়ানের হাই পাওয়ারের চশমায় চাঁদ সূর্য একসঙ্গে খেলা করে। ‘ডাউন সিনড্রোম শিশু দত্তক নেওয়া প্রথম ভারতীয় দম্পতি’ আখ্যায় যতই কবিতা-হিমেশকে ‘বিশেষ’ করে রাখা হোক না কেন, তাঁরা কিন্তু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সংসারের তৃতীয় উপস্থিতিটি মোটেও ‘বিশেষ’ নয়। অত্যন্ত সাধারণ। অত্যন্ত স্বাভাবিক। আজ তাঁদের এই বিশ্বাসের পাশে দুজনেরই পরিবারও এসে দাঁড়িয়েছে যে!

You may also like

Leave a Reply!