অলিম্পিক্সে ভারতীয় দর্শক এবং সমর্থকরা ব্যস্ত থাকেন শুটার, তিরন্দাজ, বক্সার, কুস্তিগিরদের নিয়ে। কারণ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ক্রীড়াবিদদের বছরের পর বছর ব্যর্থতা দেশবাসীকে হতাশ করেছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ থাকে না৷
বহু ভারতীয় ক্রীড়াবিদ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের বিভিন্ন ইভেন্টে অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেন নি।
অলিম্পিক্সের ১২৫ বছরের ইতিহাসে এবার চিত্রটাই বদলে দিলেন নীরজ চোপড়া। জ্যাভলিনে তিনি দেশকে করলেন গর্বিত, তাঁর হাত ধরে প্রথম পদক এল দেশে। নীরজ ইতিহাস তৈরি করে ফেললেন।
কিন্তু তাঁর অ্যাথলেটিক্সে আসা একেবারেই কাকতালীয়। ছোট থেকেই খেতে ভালোবাসতেন৷ খাবার পেলেই হল, আর অপেক্ষা না করেই পেটে পুড়ে নিতেন৷ নীরজের পছন্দের খাবার তাজা ক্রিম এবং চুরমা (রুটি, ঘি এবং চিনি দিয়ে বানানো এক ধরনের পঞ্জাবি পদ)।
ঠাকুমা আদর করে নাতিকে চুরমা বানিয়ে খাওয়াতেন। ঠাকুমার আদরে ছোট থেকেই গোলগাল চেহারা ছিল নীরজ এর৷ কিন্তু মুশকিলটা হয় অন্য জায়গায়৷মাত্র ১২ বছরেই ওবেসিটি৷ ওজন হয়ে যায় ৯০ কেজির বেশি।
বাধ্য হয়ে ওজন কমানোর জন্য বাবা-মা জোর করে মাঠে পাঠাতে থাকেন। হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দরা গ্রামের বাসিন্দা নীরজ। বাড়ির পাশেই শিবাজি স্টেডিয়াম। সেখানেই জগিং করতে গিয়ে পরিচয় হয় প্রাক্তন জ্যাভলিন থ্রোয়ার জয় চৌধুরির সঙ্গে।
খেলাচ্ছলেই নীরজকে একদিন জ্যাভলিন ছুঁড়তে বলেছিলেন জয়। প্রথমেই প্রায় ৪০ মিটার দূরে ছুঁড়েছিলেন নীরজ। দেখামাত্রই জয় বুঝেছিলেন নীরজের ওজন বেশি হলেও শরীর নমনীয়।
এরপর থেকেই জ্যাভলিন নীরজের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায়৷ তাঁর ওজনও কমতে থাকে। চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে পড়াকালীন বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন নীরজ চোপড়া৷
২০১৪-য় দক্ষিণ এশীয় গেমসে ৮২.২৩ মিটার ছুঁড়ে জাতীয় রেকর্ড গড়েন। ওই বছরই পোলান্ডের বিডগজে আইএএএফ বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় নীরজ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ ৮৬.৪৮ মিটার জ্যাভলিন ছুঁড়ে জিতে নেন সোনা। বিশ্ব জুনিয়র রেকর্ড গড়েন৷ এর আগে এই প্রতিযোগিতায় কোনও ভারতীয় পদক জেতেননি।
পরের বছর এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৫.২৩ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন। এরপর সোনা জেতেন ২০১৮ তে কমনওয়েলথ গেমসে ৮৬.৪৭ মিটার ছুড়ে। দোহা ডায়মন্ড লিগে ৮৭.৪৩ মিটার ছুড়ে নিজেই নিজের জাতীয় রেকর্ড ভেঙে দেন নীরজ। ৮৮.০৬ মিটার ছুড়ে এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে কনুইয়ের চোট এর জন্য সারা বছর প্রায় কোনও প্রতিযোগিতাতেই অংশগ্রহণ করতে পারেননি নীরজ৷ ২০২০-তে করোনার জেরে গোটা বিশ্বেই খেলাধুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
গ্যারি কালভার্ট হলেন সেই ব্যক্তি যিনি নীরজের ছোটখাটো ভুলত্রুটি, খুঁটিনাটি শুধরে দিয়েছিলেন। তিনি ২০১৮ তে হৃদরোগে প্রয়াত হওয়ার পরে বিখ্যাত জার্মান কোচ উয়ে হনের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন নীরজ। আর এক জার্মান কোচ ক্লস বার্তোনিয়েৎজের কাছে বর্তমানে অনুশীলন করেন নীরজ চোপড়া৷