বেলুড়, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ঃ কাল মহাষ্টমী। দেবী দুর্গাকে কুমারী রূপে আরাধনা করবে বেলুড় মঠ। যদিও কুমারীপুজো দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ অঙ্গ এবং বহু জায়গায় মহা আড়ম্বরে পালিত হয়; তবে বেলুড় মঠের কুমারীপুজো অগণিত মানুষের কাছে সবিশেষ আগ্রহের কেন্দ্র। প্রতি বছর এই পুজো দেখতে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমে মঠপ্রাঙ্গনে।
এবছরের পুজোর প্রেক্ষাপট একেবারে আলাদা। এবছর মঠের পুজো লাইভ দেখা ছাড়া গতি নেই। তা বলে রীতিনীতিতে কোনও ছেদ নেই কিন্তু। নিখুঁত নিয়ম মেনেই চলছে মাতৃআরাধনা।
আরও পড়ুন ফের বদল মেট্রোর সময়সূচী, দেখে নিন সপ্তমী থেকে দশমী মেট্রো পরিষেবা
নিয়ম মতোই আগামীকাল মহাষ্টমীতে হবে কুমারীপুজো। সকাল ন‘টায়। প্রতিবছরই বেলুড়ের কুমারীপুজো হয় এই একই সময়ে।
কুমারী হিসেবে সাত বছরের মধ্যের যে বালিকাটিকে মনোনীত করা হয়, পুজোর দিন তাকে একেবারে উপবাসী অবস্থায় আনতে হয়। আগের দিন তার নিরামিষ খাওয়ার বিধি। পুজো চলাকালেই নৈবেদ্য নিবেদনের সময় কুমারীর চিহ্নিত করা ফল দিয়েই উপবাস ভঙ্গ হয় তার। ষোড়শপোচার পুজোয় শাড়ি, ফলমিষ্টি সহ স্বর্ণালঙ্কারও উৎসর্গ করা হয় কুমারীকে।
ব্রাহ্মণঘরের এই সুলক্ষণা কুমারীকে আগে আগে কিন্তু প্রেসিডেন্ট মহারাজরাই চোখে দেখে মনোনীত করতেন। তাঁরা বলে দিতেন, কোন মেয়েটি কুমারী হওয়ার যোগ্য। প্রভু মহারাজ বা স্বামী বীরেশ্বরানন্দজির সময়কাল অবধি এমনটাই হত। তারপর চেনাজানার সূত্রে কুমারী নির্বাচনের রীতি তৈরি হয়। মঠের ম্যানেজার মহারাজই এই মনোনয়নের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে দুটি শর্ত পালন করা হয় এখনও। প্রথমটি, কুমারী মনোনীত হবে ব্রাহ্মণ বংশ থেকে। দ্বিতীয়টি হল, মেয়েটির সর্বার্থে নিখুঁত এবং মনোরম কান্তি হতে হবে।
আরও পড়ুন ঘরে বসে লাইভে দেখুন বেলুড়মঠের পুজো
ব্যাত্যয় ঘটেছিল একবারই। প্রথমবার। স্বামী বিবেকানন্দের সময়কালে। সেবার মঠে ৯জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন স্বামীজি। সেই কুমারীদের মধ্যে একটি জেলেঘরের বালিকাও ছিল। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরে এক মুসলিম ঘরের বালিকাকেও কুমারীরূপে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
তবে ওই ব্যাত্যয় শুধুমাত্র স্বামী বিবেকানন্দের ক্ষেত্রেই। তার পর থেকে বেলুড়ের ১১৭ বছরের দুর্গাপুজোর ইতিহাসে কুমারী আসছে একেবারে শাস্ত্রের পাতা থেকে।
স্বামীজির নিজস্ব দুর্গা আরাধনায় শাস্ত্রের সঙ্গে মিলেছিল অন্তর্দৃষ্টিও।