TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

শঙ্খবাবুকে শেষ বই উৎসর্গ করবেন? সে কি দ্বিধা…

সুবীর মিত্র, ম্যানেজিং ডিরেক্টর—আনন্দ পাবলিশার্স

অভিনয়ে তিনি কিংবদন্তি। তবে আমার মনে হয়, অভিনয়টা তাঁর পেশা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মানুষটি নিজে কিন্তু সাহিত্যের। কবিতার। গদ্যের। নাটকের।
কথা হত প্রায়ই। একবারও সৌমিত্রদা অভিনয় নিয়ে কথা বলেননি। শুধুই লেখা নিয়ে গল্প করেছেন। এই যেমন, হঠাৎ একদিন বললেন—পরপর অনেকগুলো কবিতা লিখে ফেলেছি। কবিতা লিখে মানুষটির কি আনন্দ! আমি বললাম—তাই নাকি! দারুণ ব্যাপার তো। তিনি আরও খুশি। হইহই করে তাঁর কবিতার বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিলেন।
আবার কখনও বললেন—নতুন নাটক অনুবাদে হাত দিয়েছি। শোনাব।

আরও পড়ুন ‘বর’ছেলেটি কী নরম আর লাজুক

অভিনয়ে এত ব্যস্ততা, তবু ওর মধ্যেই তাঁর লেখার সময় ঠিক বার করে নিতেন। কেউ লিখতে বললে কি খুশি, কি খুশি! অনুরোধে পড়ে কত যে গদ্য লিখেছেন!
আনন্দ পাবলিশার্স থেকেই তো পাঁচটা কবিতার খই। একটা অখণ্ড কবিতা সংকলন। অনুবাদ আর মৌলিক মিলিয়ে নাট্য সংকলন। গদ্য সংকলন। এই বইগুলো ওঁর প্রাণ তো বটেই। সেই সঙ্গে সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এগুলি।
পয়লা বৈশাখ আনন্দ পাবলিশার্সের অফিসে সাহিত্যিকদের আড্ডায় আসতেন সৌমিত্রবাবু। একমাত্র অভিনেতা যিনি সাহিত্য আড্ডার মধ্যমণি। অবশ্য অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো আসতেন না। আসতেন সাহিত্যিক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি সুনীল, শীর্ষেন্দু প্রমুখ সাহিত্যসেবীর অভিন্নহৃদয় বন্ধু।
সৌমিত্রবাবু পড়তেন সবার লেখা। রবীন্দ্রনাথ ধ্যান জ্ঞান হলেও জয় থেকে সুবোধ হয়ে শ্রীজাত—সকলের কবিতা খুব মন দিয়ে পড়তেন। ফোনে আলোচনা করতেন।

 

 


শঙ্খবাবু সম্পর্কে অত্যুচ্চ শ্রদ্ধাবোধ। আমি দেখেছি, শঙ্খবাবুরও ঠিক ততটাই। ২০১৯ সালে তাঁর লেখা শেষ কবিতার বই ‘ভাঙা পথের রাঙা ধূলায়’। উৎসর্গ করলেন শঙ্খ ঘোষকে। তার আগে সৌমিত্রবাবুর সে কি দ্বিধা—আমার মতো একজন সামান্য লেখক শঙ্খবাবুকে উৎসর্গ করতে পারবে! তাঁকে অসম্মান করা হবে না তো!
শঙ্খবাবু এই উৎসর্গপত্র দেখে কত যে আপ্লুত হলেন, কী বলব!
নার্সিংহোমে ভর্তির সময়ও মেয়ে পৌলমীকে বললেন কাগজ কলম দিয়ে যেতে। নিশ্চয়ই কিছু লিখতেন। সে লেখা আর পেলাম না। এটাই সবচেয়ে বড় না পাওয়া।