TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

মন্দিরটি এমনভাবে বানানো হয়েছিল যাতে সূর্যের প্রথম আলো মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখা বিশাল সূর্য দেবতার মূর্তিতে পড়ে।

বিশাল রথের আকৃতিতে তৈরি কোণার্ক সূর্য মন্দির একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। ভারতে সাতটি বিস্ময়ের বিভিন্ন তালিকাতেও স্থান পেয়েছে ১৩শ-শতাব্দীতে নির্মিত পুরী জেলার কোণার্ক শহরে অবস্থিত এই মন্দির। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় এই মন্দির সূর্য দেবতাকে উৎসর্গ করে নির্মিত। কোণার্ক নামটি সংস্কৃত কোণ (কোনা বা কোণ) এবং অর্ক (সূর্য) এই শব্দদুটির সমন্বয়ে গঠিত। ইউরোপীয় নাবিকদের কাছে কোণার্ক সূর্য মন্দির ব্ল্যাক প্যাগোডা (কালো পাগোডা) এবং এর বিপরীতে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি হোয়াইট প্যাগোডা (সাদা পাগোডা) নামে পরিচিত ছিল। সমুদ্রপথে দিক নির্ণয়ের জন্য এই দুই মন্দির খুব জনপ্রিয় ছিল।
শোনা যায় পূর্বগঙ্গ রাজবংশের নরসিংহদেব (১২৩৮ – ১২৬৪ খ্রিষ্টাব্দ) ১২৩২ – ১২৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বাংলা জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রাবনে আজকের কোনারকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন পুরাণ মতে এই মন্দিরের সৃষ্টিকর্তা হলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্‍ব ‌। নিজের পিতার দ্বারা অভিশাপ প্রাপ্ত হয়ে বহু বছর সূর্য দেবের সাধনা করে শাম্ব ফিরে পান তাঁর নয়নমোহিনী রূপ। তারপর সমুদ্রতীরে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রাচীন এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক রহস্য। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরের ব্যাপারে অজানা অনেক তথ্য আছে যা আমাদের অবাক করে দেয়।

মন্দিরের দেউলা ও ভিমান অংশ নিয়ে আসল মন্দিরের উচ্চতা ২২৮ মিটারের সমান ছিল যা থাঞ্জভুরের ব্রিহদেস্বরা মন্দিরের থেকেও উঁচু ছিল। কালের করাল্গ্রাসে আজ সেই মন্দিরের অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত। ভুবনেশ্বরে অবস্থিত লিঙ্গরাজ মন্দিরের থেকেও দেড় গুণ উঁচু করে নির্মাণ হবার কথা ছিল। মন্দিরটি এমনভাবে বানানো হয়েছিল যাতে সূর্যের প্রথম আলো মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখা বিশাল সূর্য দেবতার মূর্তিতে পড়ে।

উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরের ভাস্কর্য চমকপ্রদ। সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া। সাতটি ঘোড়া মানে সপ্তাহের সাত দিন। বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। আটটি দাড়ি মানে অষ্টপ্রহর। তাই আজও চাকা দেখে যথাযথ সময় বলা যায়।

আরো পড়ুন – আনারসের ভেতর বাজি পুরে খাইয়ে একটি হাতিকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

ধূসর বেলেপাথরে তৈরি এই মন্দির নির্মাণ করতে লেগেছিল প্রায় ১২ বছর।

মন্দিরের ব্যাপারে একটি আকর্ষণীয় তথ্য হল সূর্য দেবতার বিশাল মূর্তি গর্ভগৃহে হাওয়ায় দদুল্যমান ছিল। এটা অত্যন্ত বিস্ময়ের কারণ ছিল। পরে পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের পর বোঝা যায় চারদিক থেকে ঘিরে থাকা শক্তিশালী চুম্বকের জন্যই এটা সম্ভব হত। অনেকের মতে পর্তুগীজ জলদস্যুদের দস্যুবৃত্তি করতে অসুবিধা হওয়ার জন্য পর্তুগীজ দস্যুরা কোনার্ক মন্দিরের মাথায় অবস্হিত অতি শক্তিশালি চুম্বকটিকে নষ্ট করে দেয়। এর পর থেকে কোনার্কে পূজা ও আরতি বন্ধ হয়ে যায়।

মন্দিরের বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় ফুটে উথেছে আবেদনময় ভাস্কর্য শিল্প যে ছবিগুলি পার্থিব সুখ ও আনন্দকে নিয়ে বেঁচে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে মন্দির প্রাঙ্গনে বসে ডান্স ফেস্টিবল। সেইসময় বহু দূর থেকে ছুটে আসেন বহু নৃত্যপ্রেমী মানুষ।

আরো পড়ুন – PVR এর সম্পূর্ণ নাম কী ? অথবা ICICI এর ? জানেন কী?

আঠারশো শতক নাগাদ কোনার্ক মন্দির তার সকল গৌরব হারিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে প্রত্নতত্ববিদরা কোনার্ক মন্দির পুনঃরাবিষ্কার করেন। ৩০০ বছর ধরে বালিরস্তূপের নিচে অনাদর ও অবহেলায় পড়ে থাকা এই সূর্য মন্দিরটিকে ১৯০৪ সালে বড়লাট লর্ড কার্জন উদ্ধার করেন৷ তবে কোন বিপর্যয় এর কারতে মূল সূর্য মন্দিরটি অবুলুপ্ত হয় এর আগেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এতাই সত্যি যে আমরা যেটাকে মন্দির হিসেবে দেখি সেটা আসলে নাট মন্দির, মূল মন্দির নয়৷