TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি স্মরণে

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের রত্নখচিত মুকুট’এর অন্যতম মণি হলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। সে যুগের শিক্ষাবিদদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন তিনি, এবং পরপর চারবার ১৯০৬-১৯১৪ সাল পর্যন্ত দু’বছরের প্রতি মেয়াদে তিনি উপাচার্য পদে বহাল হন। এছাড়াও পঞ্চম বার ১৯২১-২৩ সালে আবারও ভাইস চ্যান্সেলর হন। প্রবল জোরালো ব্যক্তিত্ব আর আত্মমর্যাদা ছিল তার বিশেষ চারিত্রিক গুণ, তাছাড়াও তার মধ্যে ছিল অসম্ভব সাংগঠনিক ক্ষমতা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র যিনি একাধিক বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন,যুগপৎ হবে তিনি গণিত এবং পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রথম বাঙালি। তিনি নিজের অমিত যোগ্যতায় প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ স্কলার্শিপ আদায় করে নেন। তিনি বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার অন্যতম রূপকার, মূলত তারই অর্থসাহায্য উদ্যোগে ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন দেশীয় শিক্ষা প্রসারের হেতু তার এই পরিকল্পনা। ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কলেজ অফ সাইন্স নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয় তিলোত্তমা নগরীতে প্রথম ল্য কলেজ স্থাপনেও তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলকাতার আধুনিক শিক্ষার প্রসারে যে ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে তার সবকটিতেই একটি নাম জাজ্বল্যমান। ১৯০৮ সালে ক্যালকাটা ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি, স্থাপিত হয় এবং আশুতোষ মুখার্জী হন তার প্রথম সভাপতি ১৯০৮-১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকেন। ১৯১৪ সালের ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেস সূচনা পর্বের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। কলকাতার ওপর একটি আস্ত কলেজ নির্মাণ করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন এবং তারই নামানুসারে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ কলেজ নির্মিত হয়।

আরও পড়ুন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের জনক প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশের স্মৃতিতে

১৯১১ সালে ভারতবর্ষের শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব দায়িত্ব পালনের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। ব্রিটিশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একরোখা আপোষ বিমুখ সেহেতু প্রায়শই তিনি সাধারণের জবানিতে ‘বাংলার বাঘ’ নামে পরিচিত হতেন। তারপুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ভারতীয় জনসংঘ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। যা পোস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট পলিটিক্স-এর হিন্দু রিভাইভালিজমের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি ২৯ শে জুন ১৮৬৪ সালে কলকাতার বউবাজারে জগত্তারিণী দেবী ও গঙ্গাপ্রসাদ মুখার্জীর সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তৎকালের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন এবং পারিবারিক অর্থে ক্যালকাটা সাউথ সাব আরবান স্কুল খুলেছিলেন।সাহিত্য ও বিজ্ঞানমনস্কতার পরিবারে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। শিশু আশুতোষ ভবানীপুরের চক্রবেরিয়া বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করেন। অল্প বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং এই মনীষীর গভীর প্রভাব তার অন্তরে দাগ কেটে যায়। পনেরো বছর বয়সে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স টেস্ট পাস করেন এবং সেখানে পঠন-পাঠন সমাপনের পর তিনি যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানেই তার সঙ্গে নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে স্বামী বিবেকানন্দের পরিচয় হয়। এরপর তিনি আইনে তার স্নাতক ডিগ্রী সম্পূর্ণ করেন ।

আরও পড়ুন অপারেশন থিয়েটারের মতন করে তৈরি করা হবে রেলের কামরা – করোনা আতঙ্ক দূর করতে 

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করলে লর্ড কার্জন সিডিশন আইন চালু করে। আশুতোষ মুখার্জী তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবংশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অনড় থাকেন। নিজের গোটা কীর্তিময় জীবনে তিনি অনেক পদে ক্ষমতাসীন হয়েছেন স্যাডলার কমিশন থেকে এশিয়াটিক সোসাইটি, ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি কাউন্সিল বিভিন্ন স্থানে সভাপতি পদ অলংকৃত করেন।