Home দেশ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের জনক প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশের স্মৃতিতে

ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের জনক প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশের স্মৃতিতে

by banganews
অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ভারতবর্ষের অন্যতম একজন গবেষক ও বিজ্ঞানী। তিনি এই দেশে অ্যাপ্লাইড স্ট্যাটিসটিকস-এর চর্চার অন্যতম প্রাণপুরুষ, এছাড়াও তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিসংখ্যান চর্চার তার ‘মহলানবিশ ডিসটেন্স’ সম্পর্কিত চিন্তা ও আলোচনা সর্বজনবিদিত। তাঁর গভীর প্রজ্ঞা ও পড়াশোনা কেবল অ্যাক্যাডেমিকস এর স্তরের সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সময়ে গৃহীত ভারতবর্ষের দ্বিতীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন প্রায়োগিক পরিসংখ্যান বিদ্যাকে।
এই মহান বিজ্ঞানীর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে শামিল হয়ে আজকের আইটি জগতের অন্যতম হস্তী গুগলও তাদের ব্রাউজিং ইঞ্জিনে মহলানবিশের স্মরণে একটি ডুডল উপহার দেয় ২০১৮ সালে। ২০০৭ সাল থেকে ২৯ শে জুন ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যে ও কেন্দ্রে দিনটি স্ট্যাটিসটিকস ডে বা পরিসংখ্যান দিবস হিসেবে পালিত হয়।
উনিশ শতকের স্বর্ণগর্ভা কলকাতার  বহু নক্ষত্রের একজন ছিলেন প্রশান্তচন্দ্র, সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতের এক শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের উৎসাহে নিজের বৌদ্ধিক আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। স্কুল স্তরের পড়াশুনা শেষ করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য যোগদান করেন। সে সময়ের প্রেসিডেন্সি ছিল ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মেধা বুদ্ধি ও উৎকর্ষের প্রধান কেন্দ্র। তার অত্যুজ্জ্বল প্রতিভাকে আরো তীক্ষ্ণ, ক্ষুরধার করতে তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ, কিংস কলেজ পড়তে যান। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় দক্ষিণ ভারতের ওপর বিস্ময় প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজনের সঙ্গে। রামানুজনের গণিত অনুরাগ তার ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। যে দুই বিরল ভারতীয় প্রতিভা পরিসংখ্যা ও গণিতের অকাট্য যুক্তির আঙ্গিনায় বিশ্বের সকল রহস্যের জট ছাড়াতে চেয়েছিল তাদের বন্ধুত্ব হবার ছিল স্বভাবতই।
পড়ার শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করে সিটিআর উইলসনের ক্যাভেন্ডিস ল্যাবড়ুন : রেটরিতে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হয়ে যোগদান করেন। সেখানেই তিনি পরিসংখ্যান বিদ্যায় আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি দল নির্মাণ করেন যারাই পরবর্তীকালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট নির্মাণের রূপকার হয়ে ওঠে। আইএসআই ১৯৩২ সালে পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ১৯৩৩ সাল থেকে তাদের প্রখ্যাত জার্নাল ‘সংখ্যা’ প্রকাশিত হয়। তার যোগ্য নেতৃত্বে নব প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটটি বিকশিত হয় এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আইএসআই ভারতের জাতীয় মর্যাদা প্রাপ্ত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটির আখ্যা পায়। পরিসংখ্যান বিদ্যায় তার বৃহত্তম অবদান হল- তৎকালীন কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের অ্যান্থ্রোপোমেট্রিক মেসারমেন্টস নিয়ে তার গবেষণা যা মহালনবিশ ডিস্টেন্স হিসেবে সর্বজনবিদিত। তিনি তার তত্ত্বাবধানে ১৯৩৭- ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত বহু বড় মাপের ‘পাইলট সার্ভে’ করান, যা ভারতবর্ষে পূর্বাবধি নজিরবিহীন। স্বাধীন ভারতে তিনি সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অর্গানাইজেশন স্থাপন করে যা দেশের সমস্ত পরিসংখ্যান কোওর্ডিনেট করতে শুরু করে।  তিনি অক্সফোর্ড য়ুনিভার্সিটির ওয়েলডন মেমোরিয়াল পুরস্কারের প্রাপক ১৯৪৪ খ্রী: আর ১৯৪৫ সালে লন্ডলের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। দেশে পরিসংখ্যান বিদ্যায় অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। আজকে এই বিজ্ঞানীর জন্মদিনে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।

You may also like

Leave a Reply!