TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

এখন মাস্টারমশাইকে শেখাতে পারবে তুমিও। শিখিয়ে দাও,শিখে নাও নিজেও

ফেসবুক হোয়াটস্যাপ বাজারে দোকানে এখন একটাই খবর৷ করোনা। গ্রাফ উচ্চগামী? মাস্ক স্যানিটাইজার সোশাল ডিসটেন্সিং নিয়ে আমরা জেরবার৷ কিন্তু ভেবে দেখেছি সেই সব মানুষের কথা যারা এই পরিস্থিতিতে আমাদের ভালো রাখতে লড়াই করছেন। করোনা যোদ্ধা ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী এঁদের নিয়ে বহু লেখা হয়েছে৷ কিন্তু করোনা কাব্যে উপেক্ষিতা যারা আজ বরং তাদের কথা বলি। ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী সবাইকে যাঁরা গড়ে পিঠে তৈরি করেছেন, হ্যাঁ শিক্ষকদের কথাই বলছি৷
ফেসবুকে ভাইরাল সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষক বাড়িতেই ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে মোবাইল ফোনকে ঝুলিয়ে অঙ্ক শেখাচ্ছেন। কেন? কী প্রয়োজন এসবের? কারণ আগামীকে সুন্দর করে গড়ে তোলার অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিটি শিক্ষক। আজ অঙ্কে ফাঁকি দিলে জীবনের অঙ্কের হিসেব মিলবে না৷ ভবিষ্যতের ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মী কবি শিল্পী যাদের তত্ত্বাবধানে এই কঠিন সময়ে সিলেবাসের সঙ্গে জীবনের পাঠ নিচ্ছে তাদের কথা ভেবেছি কী?

আরও পড়ুন মঙ্গলগ্রহে এই প্রথম মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে কোন আরব দেশ।

একটা সময় ছিল যখন নির্দিষ্ট বয়সের পর গুরুগৃহে থেকে প্রত্যেক ছাত্রকে শিক্ষালাভ করতে হত৷ চারিত্রিক বিকাশের কথা ভেবে ধৈর্য সংযম ইত্যাদি মানবিক গুণ আয়ত্ত করার জন্য ছাত্রকে গুরুগৃহে থাকাকালীন পিতামাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হত না প্রায়৷ যাতে অতিরিক্ত স্নেহ তার চলার পথকে আচ্ছন্ন করে না তোলে৷ সময় বদলেছে৷ এখন গুরুগৃহে যেতে হয় না৷ তার পরিবর্তে দিনের বেশ অনেকটা সময় স্কুলে যেতে হয়৷ স্কুলে থাকতে হয়৷ রুটিন মত পড়া খেলা নাচ গান। কিন্তু এখন সেসব অতীত। কোভিড ১৯ আমাদের সবার জীবনযাত্রায় বদল এনেছে৷ আমার জীবনের চেনা ছন্দ বদলে গেছে৷ স্কুলে যা কিনা ছাত্রদের দ্বিতীয় বাড়ি সেই বাড়িতে যাওয়া হয় না বেশ অনেকদিন৷ ইচ্ছে করলেও স্কুল বাড়ির মাঠে দুপুর রোদে নেই কুমির ডাঙা লুকোচুরি কিংবা ব্যাট বলে সিক্স ফুটবেলের গোল৷ নেই আলুকাবলি কাচা মিঠে আম কারেন্ট নুন। বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়া সে তো আগামী দিনেও হবে কি না জানা নেই৷ এত সব কিছু নেই এর মাঝে যা রয়েছে তাই বা কম কী! স্কুলবাড়ির অভিভাবক শিক্ষক শিক্ষিকা৷ আধুনিক প্রযুক্তি বহু আগেই সমগ্র বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে৷ আজ সেই মুঠোফোনেই আমাদের স্কুল৷ ছাত্র শিক্ষক বাড়িতে থেকেই চলছে পড়াশুনা৷ লকডাউনে ছুটি মেলেনি পড়ার৷ ইউনিফর্ম পরতে হয় না আর৷ রোজ রোজ একই জামা একই প্যান্ট পরতে কার ভালো লাগে!৷ সারাবছর অপেক্ষা থাকত বিশেষ কিছু দিন কীভাবে সেজেগুজে স্কুলে গেলেও বকুনি খেতে হবে না৷আর আজ সেই একঘেয়ে জামাটার কথা মাঝে মাঝে হয়ত ভীষণ মনে পড়ে৷ অনলাইন ক্লাসে বসতে হলে কম্পিউটার বা ফোনে দেখা যায় কেবল মুখ তাই এলোমেলো চুল কিশোরীর হাতের নেলপলিশ সবকিছুই আজ অনায়াস৷ সেই বাধ্যতা আর নেই৷ আর যাদের হাতে প্রযুক্তির সুবিধেটুকু নেই তাদের কথা আর কী বা বলি? কিন্তু ভেবে দেখেছি সেই সব মানুষের কথা?

আরও পড়ুন বাচ্চাদের শরীরের খেয়াল রাখছেন কিন্তু মনের? সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু উপায়

আমাদের আগের প্রজন্ম। প্রযুক্তিগত ভাবে যারা আমাদের মত হয়ত নয়। স্কুল বলতে চিরকাল কালো ব্ল্যাকবোর্ড এ সাদা চকের লেখা বুঝেছেন আজ তাদের বানাতে হচ্ছে পিপিটি। যে শিক্ষক একবার তাকিয়ে পুরো ক্লাসের সব কচিকাচার মন পড়ে ফেলত আজ ভিডিও কলিং এ ফাঁকিবাজ ছাত্র পড়া না করলে হয়ত টিচারকেই বোকা বানাচ্ছে৷ নেটওয়ার্ক প্রবলেম। বোঝার উপায় নেই। তবু তারা চেষ্টা করছেন৷ জীবন বদলেছে। বদলে যাওয়া জীবনে সবাই চেষ্টা করছি বেঁচে থাকার লড়াইতে টিকে থাকতে৷ সুন্দরবনের যে মায়ের ঘরে খাবার নেই সে মা’ও ছেলে একদিন মস্ত বিদ্বান হবেন স্বপ্ন দেখে। আপাতত তার স্বপ্ন অধরা৷ দুটো ভাতের আশায় সেই মা ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রাণের জন্য৷ তার জন্য খাবার টুকুই থাক৷ কিন্তু যাদের জীবনে খাবারের লড়াই নেই, প্রযুক্তির আলো যাদের ঘরে আছে তাদের পড়াশুনা বন্ধ হয়নি৷ শিক্ষক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বাড়িতেই স্কুল গড়ে তোলার৷ হয়ত কোথাও একটা ভাঙা বাতিল টেবিলেই কালো রঙ করে নিয়ে অঙ্ক শেখাচ্ছেন৷ ছোটবেলায় আমাদের হাতে ধরে লেখা শিখিয়েছিলেন যে মানুষগুলো আজ না হয় আমরা তাদের কিবোর্ড মাউস অনলাইন অফলাইনের গলি খুঁজে পথ বাতলে দিই৷