TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

যিনি অপু তিনি ফেলুদা, মানিকবাবুর সৌমিত্র তাঁর কাছেই চলে গেলেন

বঙ্গ নিউস, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ঃ  ‘অপু’ তাঁর সংসার ছেড়ে চলে গেছেন, আর ফিরবেন না। হীরক রাজার অন্যায়ের প্রতিবাদও করবেন না। লালমোহন বাবুর সঙ্গে আর কোনো রহস্যের সমাধান করবেন না। আপামর বাঙালির অপু চিরবিদায় নিয়েছেন, মানিকবাবু তাঁর ফেলুদাকে নিয়ে গেছেন। যদি বলা শুরু করা যায় শেষ হবে না। সৌমিত্র-সত্যজিৎ জুটি এক ও অদ্বিতীয়। ১৯৫৯ সালে অপুর সংসার দিয়ে পথ চলার শুরু। এরপর বাংলা চলচ্চিত্র জগতে অপু-মানিক জুটির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। অপুর সংসারের পর অপুর ট্রিলজি ‘অপরাজিত’ র কথা আগেই ভেবে নিয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়। এক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘অপরাজিত’ ভেনিস ফ্লিম ফেস্টিভ্যালে সেরা ছবির পুরস্কার পায়। প্রাপ্তবয়স্ক অপুর চরিত্রে কে অভিনয় করবে তাও ঠিক করে রেখেছিলেন মানিকবাবু তবে তাঁর মাথায় যে আমি ছিলাম তা আমি জানতাম না। পরে সেকথা জানতে পারি আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর অপুর ট্রিলজির চরিত্রের কথা তিনি ভেবে রেখেছিলেন।

আরও পড়ুন শঙ্খবাবুকে শেষ বই উৎসর্গ করবেন? সে কি দ্বিধা…

সৌমিত্রবাবু নিজেই বলতেন তাঁর সঙ্গে মানিকদার সম্পর্কের কথা। বাবা ও ছেলের মধ্যে যেমন পজেসিভ কিন্তু স্নেহমাখানো সম্পর্ক থাকে, অপুর সঙ্গেও মানিকবাবুর সেই সম্পর্ক ছিল। মানিকবাবুর পরিচালনায় চারুলতা, নষ্টনীড়, যা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের মাইলস্টোন। এরপরে ষাটের দশকে মানিকবাবুর পরিচালনায় অভিযান, কাপুরুষ, অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতেও সমান দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই কিংবদন্তী। এমনকি রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে যখন সত্যজিৎ রায় কাজ করেছেন তখনও তাঁর মনে সৌমিত্র। রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোট গল্প অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় বানালেন তিনকন্যা। রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে বানালেন নষ্টনীড় যেখানে স্বমহিমায় অভিনয় করেছেন বাঙালির হার্টথ্রব সৌমিত্র। তবে এমনটা কিন্তু নয় মানিকবাবুর ছবির মুখ্যচরিত্র মানেই সৌমিত্র। গুপিগাইন বাঘাবাইনে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সৌমিত্র, তাঁকে সরাসরি না করে দিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু হীরক রাজার দেশে উদয়ণ পন্ডিতের চরিত্র তাঁকে ছাড়া ভাবতেই পারলেন না। এমনই ছিল সৌমিত্র-সত্যজিৎ জুটি। মানিকবাবু তাঁর ছবির চরিত্রায়ন নিজেই করতেন। তিনি ভাবলেন ফেলুদা বানাবেন। সেই ভেবে কিছু ছবি আঁকলেন, ছবি গুলি দেখে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানতে চাইলেন কিভেবে তিনি এই ছবি আঁকেন। তখন মানিকবাবুর উত্তর ছিল ‘লোকে তো বলে আমি তোমায় দেখে ছবি আঁকি’ ।

আরও পড়ুন বাংলা সিনেমা জগতে তাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে : প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়

সৌমিত্রবাবু বুঝলেন তিনি মানিকবাবুর মনে আছেন। শুরু হল ফেলুদার যাত্রা, যথারীতি ডাক পড়ল সৌমিত্রের। ১৯৭৪ সালে তৈরি হল ‘সোনার কেল্লা’। এইভাবেই বাঙালির অপু হয়ে উঠলেন ফেলুদা। পাঁচ বছর পর তৈরি হল ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ । জীবনের শেষ পর্যন্ত সত্যজিত-সোমিত্র জুটি ছিল অটুট। মানিকবাবুর জীবনের শেষের দ্বিতীয় ছবি ‘শাখা প্রশাখা’ ও তৃতীয় ছবি ‘গণশত্রু’তেও নিজের রাজত্ব বজায় রেখেছিলেন সৌমিত্র । শুধু তাই নয় সত্যজিতের শেষ ছবি উত্তরণেও ছিলেন সেই সৌমিত্রই, যা পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সন্দীপ রায় শেষ করেন। এর মাঝেই সৃষ্টি হয়েছিল আরেক কালজয়ী ছবি ‘ঘরে বাইরে’ সেখানেও মানিক-অপুর জুটিকে দুহাত ভরে আর্শীবাদ করেছেন দর্শক। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে সত্যজিৎ -সৌমিত্র জুটি বাঙালির মননে ততদিন থাকবে। মহারাজা ও তাঁর সুযোগ্য যোদ্ধাকে ততদিন মানুষ সেলাম করবে।