মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
‘জ্যান্ত দুর্গার পুজো দেখাব। তবে আমার নাম!’ কথাটা নিজের ভেতরমন থেকে কতবার যে বলেছেন, ইয়ত্তা নেই। মনপ্রাণ সব নিয়ে ওই একই দিকে মগ্ন। দুর্গাপুজো। দুনিয়াজুড়ে কাজ করে চলেন অক্লান্ত পরিশ্রমে। মাতৃপুজোর সম্বলটুকু তবু জোগাড় হয় কই! সাধের বেলগাছটার নীচে আনমনে বসে থাকেন বিবেকানন্দ!
দেখতে দেখতে সাল গড়াল ১৯০১। বিধি জানেন, বিবেকানন্দ আর শুধু এ বছরটাই। বিবেকানন্দ জানেন, পুজোটা এখনও হল না!
মে-জুন মাস এসে গেল। শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে হঠাৎই রঘুনন্দনের অষ্টবিংশতি তত্ত্ব আনতে বললেন গুরু বিবেকানন্দ। অবাক শিষ্যের কৌতূহলের উত্তরে জানালেন, খরচ সঙ্কুলান হলে মঠে এবছরই দুর্গাপুজো করবেন তিনি।
আরও পড়ুন মাদককাণ্ডে গ্রেপ্তার অর্জুন রামপালের প্রেমিকা গেব্রিয়েলারের ভাই
দিন যায়। মাস যায়। রঘুনন্দন তো পড়ে ফেলেছেন কবেই। তবু দুর্গাপুজো নিয়ে আর একটিও শব্দ বলেন না যে। নিশ্চয়ই বাধ সেধেছে সেই খরচ।
দেখতে দেখতে পুজোর আর দিন চারেক মোটে বাকি। কলকাতা থেকে নৌকোয় করে একদিন বেলুড়ে এসেই হন্তদন্তভাবে গুরুভাইকে ডাকলেন তিনি—রাজা, রাজা।
বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট স্বামী ব্রহ্মানন্দ। রাজা মহারাজ।
দুই নক্ষত্রখচিত সন্ন্যাসী মগ্ন হলেন দুর্গাপুজোর আলোচনায়। মা এসেছেন মঠে। ভাবচক্ষে দেখেছেন মায়ের বিবেক-ছেলে। আর দেরি নয়। এবছরই।
কি আশ্চর্য! রাজা মহারাজও স্বপ্ন দেখেছেন যে। দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে মা দুর্গা এসে মঠের বেলগাছতলায় উঠেছেন।
অতএব আর দেরি নয়। এবছরই। যেমন করে হোক।
কিন্তু এই শেষবেলায় মূর্তি কোথায় মিলবে? ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল ছুটলেন কুমোরটুলি। অবাক কাণ্ড! একটিই মূর্তি সেখানে অবশিষ্ট। যিনি বায়না দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি ফিরে আসেননি আর।
সেই প্রতিমাই বায়না হল। বিবেকানন্দ নিজে ছুটলেন বাগবাজারে। সারদামায়ের অনুমতি নিতে হবে যে! সংঘজননীর সম্মতি মিলল। তবে এক নির্দেশও এল সঙ্গে—চলবে না পশুবলি।
আরও পড়ুন পুজো মণ্ডপে প্রবেশ নয়, রায় কলকাতা হাইকোর্টের
দিন তিনেকের যোগাড়যন্ত্রেই শুরু হল মহাপুজোর আয়োজন। সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের পুজোয় অধিকার নেই। তাই সঙ্কল্প হল সারদাজননীর নামে।
১৮ই অক্টোবর ১৯০১। বেলুড়মঠের প্রথম দুর্গাপুজো, কুমারীপুজো। দরিদ্রনারায়ণ সেবা। বিবেকানন্দের ‘জ্যান্ত দুর্গা’ সারদাদেবীর উপস্থিতিতে পুজো পেলেন মৃন্ময়ী মহিষাসুরমর্দিনী।