TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

সম্পর্কে কনসেন্ট কী? সাইবার ক্রাইম এর সঙ্গে কনসেন্ট এর সম্পর্ক কী?

সায়নী মুখার্জী 

বঙ্গ নিউজঃ ২০ ডিসেম্বর ২০২০

একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে অন্য আরেকটি সম্পর্কে গেলে অনেক সময় পুরনো মানুষটি ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন নানাভাবে৷ অতীতের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত সোশাল প্ল্যাটফর্মে দিয়ে দেবেন বলে হুমকি কিংবা মোটা অঙ্কের টাকা অথবা জোর করে সম্পর্কে থাকতে বাধ্য করা হয়৷ এই সমস্যায় পড়লে একটি মেয়ের প্রথম কর্তব্য কী হওয়া উচিত ? আমরা এই বিষয়ে কথা বলেছিলাম কলকাতা উচ্চ আদালতের আইনজীবী শুভ্র প্রকাশ লাহিড়ীর সঙ্গে ।

 

সাইবার ক্রাইমের ভাষায় এই ধরনের অপরাধকে সেক্সটরশন বলা হয়৷ ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং যেহেতু এই ধরনের অপরাধ ডিজিটাল মাধ্যমে হয় তাই তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন এর আওতায় এটি গুরুতর অপরাধ৷ এর শাস্তি হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৭ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে৷ এমন যদি কখনো হয়, কোনো মহিলা এই ধরনের হুমকি বা থ্রেট এর শিকার তখনই তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে জানানো উচিত৷ এক্ষেত্রে লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই৷ এবং একমাত্র এই ক্ষেত্রে কল রেকর্ড করা যেতে পারে অনুমতি ছাড়াই৷ কল রেকর্ড, মেসেজ, এই সমস্ত কিছুই তথ্যপ্রমাণ হিসেবে পেশ করা যাবে৷ সাইবার সেলে অভিযোগ জানানো উচিত। এক্ষেত্রে কিন্তু কল রেকর্ড, মেসেজ মেল সমস্ত রাখা উচিত৷ সেক্সটরশন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো অত্যন্ত জরুরি৷

 

যদি কখনও এমন হয় যে, কোন একটা অচেনা প্রোফাইল থেকে ক্রমাগত কেউ আপনাকে আপত্তিকর মেসেজ বা ছবি পাঠাচ্ছে বা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করে বিরক্ত করছে তাহলে সেই নম্বর কিংবা সে প্রোফাইলের লিংক লোকাল থানায় জানানো উচিত। এই বিষয়ে পুলিশ আপনাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন এবং এই ক্ষেত্রে কোন অর্থ খরচের বিষয়ে নেই। এক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের সাইবের সেল অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন।

 

 

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটা কথা খুবই প্রচলিত সেটা হল স্টক করা। ধরা যাক আপনার কাউকে ভালো লাগলো, হতে পারে তার লেখা, হতে পারে তার ছবি, বা হতে পারে তার কথা বলার ধরন। কোন একটা বিশেষ গুণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আপনি ক্রমাগত তার প্রোফাইল ফলো করছেন তাকে জানিয়ে বা না জানিয়ে, এবং তার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ক্রমাগত তার সমস্ত পোষ্টে কমেন্ট করছেন এটা নিছকই ভালোলাগা কিন্তু যদি এমন হয় যে আপনার কোন বক্তব্যে তিনি বিরক্ত হচ্ছেন, আপত্তি জানাচ্ছেন, তারপরেও আপনি তাকে সেই ধরনের কমেন্ট করে যাচ্ছেন, বারবার মেসেজ করছেন তাহলে সেটা কিন্তু অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

 

 

তবে এক্ষেত্রে দু’পক্ষকেই সমানভাবে বিচার করা হয় কেউ যদি শুধুই আপনার প্রশংসা করে, তার মধ্যে কোনরকম অশালীন মন্তব্য বা কোন রকম আক্রমণাত্মক কুরুচিকর ইঙ্গিত না থাকে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয় না। কারণ অনেক সময় যেকোনো সাধারণ মানুষ আক্রোশের বশে অন্য কোন মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনেন। সেক্ষেত্রেও কিন্তু আইন ব্যবস্থা যথেষ্ট সচেতন। মনে রাখতে হবে, যে কোনো রকমের প্রশংসা কিন্তু সাইবার স্টকিং নয়। বা তা ক্রাইমের আওতায় পড়েনা। এখানে অপরাধ এবং ভালোলাগার মধ্যে যে সূক্ষ্ম লাইন আছে সেই সূক্ষ্ম লাইনকে মাথায় রেখেই বিচার করা হয়।

এতক্ষণ ধরে যে ধরনের সাইবারক্রাইমের কথা বলেছি তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি মেয়ে এর শিকার হন কিন্তু এবার একটু অন্যভাবে ভাবা যেতে পারে৷ এমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কিছুদিন সম্পর্ক রাখার পর একটি ছেলে হয়তো সেই মেয়েটির সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না, বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে মেয়েটি তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে তাকে ভয় দেখাতে থাকে, হুমকি দিতে থাকে বিয়ে করতে বাধ্য করার জন্য।

 

সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া মৌলিক অধিকারঃ সুপ্রিম কোর্ট

 

এক্ষেত্রে একজন ছেলে নিজের সম্মান রক্ষার্থে কী করতে পারে? পারস্পরিক সম্মতিক্রমে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা অপরাধ নয়। তাই একটি মেয়ে যখন একটি ছেলের সম্পর্কে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তোলেন তখন কিন্তু তাদের সম্পর্ক থাকাকালীন তাদের মধ্যকার পারস্পরিক কথাবার্তা ফোন, ভিডিও কল, চ্যাট সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে তবেই আইন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একজন নাবালিকার কন্সেন্ট আইন গ্রাহ্য করে না। তাই একজন নাবালিকার কন্সেন্ট নিয়ে কেউ তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন বললে আইন তাকে ছাড়বে না৷

 

 

 

  আইনজীবি শুভ্রপ্রকাশ লাহিড়ী