সায়নী মুখার্জী
বঙ্গ নিউজঃ ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
সাইবারক্রাইম এই শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত কিন্তু ঠিক কোনগুলো সাইবারক্রাইম সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের তেমন কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। বর্তমান সময়ে সাইবার ক্রাইম এবং সাইবার স্পেস এই দুটো বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি৷ ভার্চুয়াল জগতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমরা যা কিছুই দেখতে পাই পুরোটাই সাইবার স্পেস। যেসব ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, ডিভাইস যা ডেটা ট্রান্সমিট করে সবটাই সাইবার স্পেস৷ হতে পারে আপনার ফোন কিংবা ব্যাঙ্কের সার্ভার কিংবা সরকারি কোনো ওয়েবসাইট সবটাই সাইবার স্পেস এবং আমরা প্রত্যেকে সাইবার স্পেসের সঙ্গে যুক্ত৷ এবার প্রশ্ন আসে সাইবার ক্রাইম কী?
সাইবার স্পেসে ঘটে যাওয়া যাবতীয় অপরাধমূলক কাজ হল সাইবার ক্রাইম৷ নানা রকম সাইবার ক্রাইম, তার শাস্তি আইন সমস্ত কিছু সম্পর্কে আমরা কথা বলেছিলাম কলকাতা উচ্চ আদালতের আইনজীবী শুভ্র প্রকাশ লাহিড়ী সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন সাইবার ক্রাইমের অনেক রকমফের আছে৷ মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়৷
• ব্যক্তিকেন্দ্রিক – সাইবার বুলিং, ফিশিং, সাইবার স্টকিং, ব্যাঙ্ক ফ্রড, আইডেনটিটি থেফট, সাইবারএক্সটরশন, সাইবার ডিফামেশন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কাউকে আঘাত করে অপমান করে কথা বলা হতে পারে সামনাসামনি বা সোশ্যাল মিডিয়ায়।
• কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে – যখন কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম হয় তখন তার একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে এবং তা ransomware attack, hacking, cryptojacking, virus installation, espionage ইত্যাদির মাধ্যমে করা হয় । সরকার এর বিরুদ্ধে বা দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার চেষ্টা হলে তা cyber terrorism এর আওতায় পড়ে যখন দেশের সুরক্ষা বিঘ্নিত হয়। এক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি বা দেশের সুরক্ষা নষ্ট হতে পারে। আইনি পরিভাষায় বলা হয় সাইবার টেররিজম৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক করা হতে পারে। ভাইরাস ঢুকিয়ে স্প্যাম করা হয়৷ জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে এইসমস্ত সাইবার ক্রাইম সম্পর্কিত৷ বিভিন্ন সরকারি গোপন তথ্য ফাঁস করা হয়। আবার কখনো চরবৃত্তি করা হয়।
• সমাজের বিরুদ্ধে – ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ দ্রব্য বিক্রি করা হয় গোপন কোডের মাধ্যমে। হিউম্যান ট্র্যাপ- এক্ষেত্রে মহিলাদের নানারকমভাবে বাধ্য করা হয় দেহব্যবসা করতে৷ ভেদনীতি ছড়ানোর জন্য কখনো কখনো উস্কানিমূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷
সম্পর্কে কনসেন্ট কী? সাইবার ক্রাইম এর সঙ্গে কনসেন্ট এর সম্পর্ক কী?
• সম্পত্তির ক্ষেত্রে – ডিজিটাল প্রপার্টিতে বিশেষত ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিতে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়, কখনো কখনো চুরি করে নিজের কাজে ব্যবহার করা হয়৷ কপিরাইট আইন না মানা, ট্রেডমার্ক নকল করা এইসব কিছুই ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ডেমলিশিং বা বৌদ্ধিক সম্পত্তির অপব্যবহার এর আওতায় আসে এবং এগুলি সাইবার ক্রাইম।
প্রসঙ্গত ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন কোনো ধারণা না থাকায় আমরা অনেকেই ফেসবুকে অন্যের কোনো শিল্পকর্ম, লেখাকে সংগৃহীত আবার কখনো কোনোরকম ক্রেডিট না দিয়েই নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করি৷ এমনকি ব্যবসায়িক পেজের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অন্যের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি নিজের টাইমলাইন হোক বা ব্যবসায়িক পেজ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত অপরাধ৷
কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে৷ ধরা যাক একটি কবিতা লিখলেন৷ কবি তার পেজ বা প্রোফাইলে কবিতার সঙ্গে শেয়ার অপশন দিলেন এবং এটা তার অনুমতি ব্যতীত শেয়ার করা যাবে না এমন কোনো ঘোষণা করলেন না, তখন পাঠক বা শিল্পানুরাগী মানুষ এর অনুমতি নেওয়ার দায় অনেকটাই কম থাকে। কিন্তু ব্যবসায়িক পেজের ক্ষেত্রে কোনো লেখা বা শিল্পকর্ম ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন৷