শ্রীচৈতনের হাত ধরে জগন্নাথের আরও এক তীর্থ খুঁজে পেলেন ভক্তরা লিখলেন মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
নীলাচলে আছেনই তো তাঁর জন্য। তাহলে প্রতিদিন জগন্নাথদর্শন করবেন না, তা কি হয়! শ্রীচৈতন্য নিয়ম করে দুবেলা যান জগন্নাথ মন্দিরে।
এদিকে বাধ সাধল নিয়ম। স্নানযাত্রার পর থেকে চোদ্দদিন শ্রীমন্দির বন্ধ। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে সরিয়ে দেওয়া হয় মন্দিরের ভেতর এক গুপ্ত কক্ষে। তাঁদের জ্বর এসেছে যে। দেখাশোনা এ সময় বারণ।
আরো পড়ুন – শ্রীমন্দির কর্তৃপক্ষের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতার জন্য বিশেষ উদ্যোগ
জগন্নাথ-অভিলাষী শ্রীচৈতন্য তাঁর প্রভুকে দেখতে না পেয়ে শোকে মুহ্যমান। কী করেন তিনি? আচমকা শোকাকুল চৈতন্য-কানে ধ্বনিত হল ঐক দৈববাণী—‘অলারনাথ যাও। এই সময়টা আমি ওখানেই বিরাজ করি।’ আবেগে উন্মত্তপ্রায় শ্রীচৈতন্য ছুটছেন এবার অলারনাথের পথে।
অলারনাথ? কোথায় সেই স্থান? পুরী থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মগিরি নামের জায়গা। সেখানেই অলারনাথ মন্দির। এ মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা বিষ্ণু। স্নানযাত্রার পরদিন থেকে রথযাত্রার আগের দিন অবধি শ্রীচৈতন্য এই মন্দিরেই তাঁর প্রভুকে খুঁজে পান। নিত্য সঙ্কীর্তন করেন ভক্তদের সঙ্গে। চোদ্দদিনের এই সময়কালটা যেন উৎসবে উদ্দীপনায় জেগে ওঠে অলারনাথ মন্দির। শ্রীচৈতন্যের হাত ধরে। যে পাথরের ওপর নৃত্যরত চৈতন্য চরণচিহ্ন রয়েছে, পাথরটি আজও বর্তমান।
শ্রীচৈতন্যের কাল পেরিয়ে আমরা পাঁচশো বছরেরও বেশি এগিয়ে এসেছি। তবে তাঁর দেখানো পথ ধরে অলারনাথের এই দু সপ্তাহকালের ‘জেগে ওঠা’ আজও সেই একইরকম। এখনও জগন্নাথমোদী ভক্তগণ স্নানযাত্রা থেকে রথযাত্রা—তাঁদের প্রভুকে খুঁজে পান অলারনাথেই।
আরো পড়ুন – জগন্নাথের ‘কোয়ারেন্টাইন’ কার্টুনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ
কথিত আছে, অলওয়ারের সন্ত রামানুজাচার্য এসেছিলেন এ মন্দিরে। এখানকার বিষ্ণুমূর্তি তাঁর হাতে পূজিত। তাই অলওয়ারনাথ থেকে অপভ্রংশ হয়ে অলারনাথ নামটি এসেছে। অবশ্য রামানুজের এই মন্দিরে আসার কোনও ঐতিহাসিক সাক্ষ্য এখনও মেলেনি।
অলারনাথ মন্দিরে দর্শনের সময় প্রত্যহ সকাল ৬টা থেকে রাত ৯.৩০। এই মন্দিরে ভোগ নিরামিষ। সকালে বাল্যভোগ হয়। দুপুরে ভাত ডালের সঙ্গে নানাবিধ তরকারি আর ক্ষীর। রাতের ভোগে থাকে খিচুড়ি আর নানারকম পিঠে। স্নানপূর্ণিমা থেকে রথযাত্রা অবধি এই মন্দিরের ক্ষীরভোগের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে।