TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্টের মৌলিকত্ব নিয়ে আলাপচারিতায় সঙ্গীত যুগল উপমন্যু কর ও বিপাশা ভট্টাচার্য্য

উপমন্যু কর ও বিপাশা ভট্টাচার্য্য, সংগীত যুগল দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীতজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছেন। গানের সৌন্দর্য্যকে তুলে ধরতে উপমন্যু অসধারণ বৈচিত্র্যময় সুর সৃষ্টি করে চলেছেন। অন্যদিকে বিপাশা, একজন প্রতিভাবান এবং বহুমুখী গায়িকা, তাঁদের সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্টগুলিতে উপমন্যুর সাথে বিবিধ যন্ত্রশিল্পী ও কণ্ঠশিল্পীদের সাথে পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন। উপমন্যু এবং বিপাশার সাথে আড্ডায় ওনারা সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট সম্পর্কে বিশদে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
উপমন্যু বলেন,
1. গানের জগতের সঙ্গে জুড়ে থাকা কতদিনের?
আমি মোটামুটি 2015 থেকে কাজ করছি কিন্তু আমার প্রথম ব্রেক 2016 সালে। ক্যালকাটা স্কুল অফ মিউজিক প্রতিষ্ঠানের ক্যালকাটা চেম্বার অর্কেস্ট্রার প্লেয়ারদের মিউজিক থিয়োরির দিকটা ট্রেন করার জন্য 2015 সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। 2016 সালে টালিগঞ্জ ক্লাবে ক্যালকাটা চেম্বার অর্কেস্ট্রার একটা কনসার্ট হয়েছিলো। সেই প্রথম কলকাতায় হলিউডের কিছু গান নিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানের গান গুলোর মিউজিক ডিজাইন এবং অর্কেস্ট্রেশন আমি করেছিলাম। এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিদেশি গায়ক ছিলেন। যেমন, জ্যাকারি রে, ডিন মার্টিন। আমি প্রফেশনাল কাজ শুরু করেছি লাইভ পারফরম্যান্স দিয়ে। আর তারপরে পরপর আরো তিনটে অনুষ্ঠান করেছি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সরোদ প্লেয়ার ডঃ রাজীব চক্রবর্তী 2018 সালে “Tagore on Soul and Strings” বলে মিশিগানের টাউসলে অডিটোরিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে ‘পাইওনিয়ার হাই স্কুল সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা’ নামের একটি আটবার গ্র্যামি আওয়্যার্ড প্রাপ্ত সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা অনেকগুলি রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজায়। অর্কেস্ট্রা দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত পারফর্ম করা সহজ নয়। এই ধরনের অনুষ্ঠানের প্রচুর চাহিদা বিদেশে আছে কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতকে অর্কেস্ট্রাল ফর্মে অ্যারেঞ্জ করার মত শিক্ষিত অ্যারেঞ্জার পাওয়া খুব সহজ নয়। তাই উনি কলকাতা থেকে কয়েকজন মিউজিক অ্যারেঞ্জারকে সিলেক্ট করেছিলেন। এদের মধ্যে একমাত্র আমি স্টাফ নোটেশন লিখতে পারতাম। একজন অর্কেস্ট্রাল মিউজিশিয়ান যখন বাজায় তখন তারা পাশ্চাত্য সঙ্গীতের রীতি অনুযায়ী নোটেশন দেখে বাজায়। একটা অর্কেস্ট্রার সমস্ত ইনস্ট্রুমেন্ট এর প্রতিটা নোটেশনের পার্টকে আলাদা করে হাতে লেখা হয় বা নোটেশন সফটওয়্যারে টাইপ করা হয়, যেটা খুব চ্যালেঞ্জিং। এই কনসার্টটা হওয়ার পরে মনে হয় এটাকে প্রোডাকশনে নিয়ে এলে কেমন হয়। কারণ মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট অনেকদিন ধরে হলেও ঠিক এই ফরম্যাটে হচ্ছিল না, কিন্তু আমি দীর্ঘদিন ধরে এটার প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। তখন সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট কনসেপ্টটাকে ধীরে ধীরে ডেভেল্যাপ করছি। এই ফরম্যাটে করলে জিনিসটাতে একটা অভিনবত্ব, মৌলিকত্ব চলে আসে। তারপরেই দেবাশিস রায়চৌধুরীর ডিরেকশনে ‘Numerous Strings’ বলে একটি প্রজেক্ট আসে। উনি আমার কাজ দেখে একটা পুরো অ্যালবাম অ্যারেঞ্জ করতে দিলেন, করলাম। এরপর শ্রী সঞ্জীব মণ্ডলের পরিচালনায় কলকাতা ইউথ অর্কেস্ট্রা কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে এটি লাইভ পারফর্ম করে। এই অনুষ্ঠানগুলি প্রচন্ড প্রশংসিত হয়। এরপর 2019 সালে বুডাপেস্টে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ইউথ অর্কেস্ট্রার জন্য তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে একটি মেডলী অ্যারেঞ্জ করি যেটির পরিচালনা করেন অর্কেস্ট্রাটির কন্ডাক্টর মাইকেল মাখাল। এটি এককথায় একটি ঐতিহাসিক কনসার্ট কারণ এর আগে কোনো ইন্ডিয়ান অর্কেস্ট্রা এখানে পারফর্ম করেনি। এবং, এই কনসার্টটির মিউজিশ্যানদের মধ্যে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য – এই দুই থেকেই প্লেয়াররা ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আমার অর্কেস্ট্রেশন দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। এই হল আমার চারটে কনসার্ট। এছাড়া, আমি আর বিপাশা আমার নিজের স্ট্রিং কোয়ার্টেট ‘Tagore and the West’ শুরু করেছি, যাদের প্রথম পারফরম্যান্স হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে, এই বছরেরই ফেব্রুয়ারী মাসে, ‘মুক্তছন্দ’ বলে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতিযোগীতার পার্ট হিসেবে। ধীরে ধীরে তৈরি করছি। আমার একটি অ্যালবাম ‘নবরূপে রবীন্দ্রনাথ’ হিন্দুস্তান রেকর্ড গতবছর প্রকাশ করে, যেটিতে আমি এই কনসেপ্টটাকে ঢেলে সাজিয়েছি। এখন আমি যে গানগুলো রিলিজ করছি সেগুলোতে সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্টকে আরও ঢেলে সাজাচ্ছি। সারা পৃথিবী জুড়ে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে। ‘Numerous Strings’ আগে আমেরিকায় পরে ইন্ডিয়াতে রিলিজ হয়েছিল। আমি অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে আমার লেখা একটি বই ‘Tagore On Keys’ কয়েকমাস আগেই অ্যামাজন কিন্ডেলে প্রকাশ করেছি। এই বইটিতে যারা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর শিখতে চায়, পিয়ানোতে বাজাতে চায় তাদের জন্য ছোটো ছোটো রবীন্দ্রসঙ্গীতের পিয়ানো অ্যারেঞ্জমেন্ট করা আছে।

আরও পড়ুন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দির

2. অর্কেস্ট্রা জিনিসটা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এখনো খুব যে ভালোভাবে জানেন সেটা নয়, সেটা নিয়ে কখনো ভয় হয়নি? যে জিনিসটা নিয়ে কাজ করছেন সেটা মানুষের কাছে কম পৌঁছতে পারে?
না, সত্যি ভয় করেনি। এই জিনিসটা আমি দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করে আসছি, শুনে আসছি, কম্পোজিশন নিয়ে শিক্ষাটাও আমার পাশ্চাত্যের ধাঁচেই হয়েছে। আমি বিভিন্ন কম্পোজারদের অর্কেস্ট্রাল মিউজিক স্টাডি করেছি। কম্পোজিশন নিয়ে আমি পড়াশোনা করেছি। পুরো জিনিসটা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা ছিলো। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে এই ধরনের মিউজিকের প্রশংসা শুনেছি, ওখানে এটাই স্বাভাবিক। এখানে এই জিনিসটা অ্যাকসেপ্টেড হবে কিনা সে ভয়টা আমি কোনোদিনই পাইনি। আর পাইনি বলেই 2015 সালের আগে থেকেই এটা নিয়ে আমি এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করেছি। আমাকে প্রচুর লোকে ডিমোটিভেট করেছে। বলেছে, এখানে এইভাবে কাজ হয়না। এখানে কমার্শিয়াল কাজ ছাড়া সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। এই জিনিস এখানে জনপ্রিয়তা পাবে না। আমি হাল ছাড়িনি। নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসিনি। আমি জানতাম এই জিনিসটার মধ্যে একটা কোয়ালিটি আছে। এই জিনিসটা অভিনব, মৌলিক এবং একটা ভালো কাজ করতে গিয়ে আমি যদি সেই কাজটা থেকে সরে আসি, ভাবি যে আমার যথেষ্ট ইনকাম হবে না, তাহলে কোনোদিনই আমি সেই কাজটা করতে পারবো না। জীবনে এসেন্সিয়াল বলে কিছু হয় না। হয়তো এমন হতে পারে, আমি করতে পারলাম না, কিন্তু পাঁচ বছর পরে আর একজন কেউ সেই কাজটা করে দিল। তখন আমি আফসোস করব। সেই সুযোগ আমি কাউকে দিইনি। আমি প্রতি মুহুর্তে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছি। লোকের উৎসাহের পরোয়া করিনি। এবং অনেকবার ব্যর্থ হওয়ার পরে আজকে আমার কাজগুলো বিপুল ভাবে অ্যাকসেপ্টেড হচ্ছে।

দেখুন ভিডিও 

3. বিদেশেও কাজ করেছেন আপনি এদেশেও, কোথায় কাজের সুবিধা কেমন?
এই ধরনের কাজের সুবিধা বিদেশে অবশ্যই বেশি। তার কারণ একটাই, এখানকার লোকজন এই ধরনের মিউজিক শুনতে অভ্যস্ত নয়। আর একটা অর্কেস্ট্রার কাজ হোক বা প্রোডাকশনের কাজ হোক সেক্ষেত্রে টাকার পরিমাণটাও কম নয়। এদেশে এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হচ্ছিল, সেটা হলো এখানে মানুষ এই ধরনের কাজ নিয়ে এগোতে খুব ভয় পায়। আর বিদেশে লোকে এই ধরণের কাজই করে। এই ধরণের কাজ করে আমি বিদেশেই আগে প্রশংসিত হয়েছি, জনপ্রিয়তা পেয়েছি। এদেশের মানুষ অর্কেস্ট্রা বা সিম্ফনির নাম শুনলেই আগে ভাবে, এটা কি লোকে শুনবে যে আমি এটার জন্য পয়সা খরচ করব? এখানে কমার্শিয়াল জিনিসটাই চলে বেশি। সবাই ভাবে লোকে তো শুধু গানটাই শুনবে। মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট আর কে শুনবে? এই গতানুগতিক জাঁতাকলে এতদিন সবাই পড়ে ছিল। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে মানুষের পরিবর্তন হচ্ছে। এখন এখানকার মানুষেরাই আমায় বলছে উপমন্যু এই কাজ গুলো অত্যন্ত ভালো। বিদেশে এই কাজগুলো সবসময়ই প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু এখন এখানকার মানুষেরাও বুঝতে পারছে যে এই জিনিসটা সুন্দর। এর সৌন্দর্য্যবোধের প্রতি এখানকার মানুষের যে অনুরাগ আছে, আগে সেটা খুব একটা খেয়াল করিনি। আগে সবাই কমার্শিয়াল জিনিসটাকেই বেশি সার্পোট করত।

আরও পড়ুন বড়পর্দায় এই প্রথম একসঙ্গে অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা

4. বাইরের দেশের জন্য যে arrangement গুলো করেছেন সেটা করার সময় প্রস্তুতি কি অন্যরকম কিছু নিয়েছিলেন?
খুব যে আলাদা তা বলবো না। বেসিক জিনিসটা একই। তবে এখানে যেহেতু অনেকদিন কাজ করছি তাই সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্টের ফর্মটাকে ডেভেল্যাপ করেছি। আমার রিসেন্ট কয়েকটা কাজে ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ঢোকাতে শুরু করেছি। সন্তুর, সেতার ইত্যাদি ইনস্ট্রুমেন্ট সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট এর মধ্যেই অ্যাডাপ্ট করতে শুরু করেছি কারণ তাহলে এখানকার লোকেদের কানেক্ট করতে সুবিধা হবে। লোকেরা এইগুলির সাথে বেশি পরিচিত। অনেকদিন একই জিনিস নিয়ে কাজ করতে আমারও ভালো লাগেনা, তাই মাঝে মধ্যে নতুন কিছু করার চেষ্টা করি।
5. সিম্ফোনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট সম্পর্কে কিছু বলুন?
‘সিম্ফনি’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো একটা লার্জ-স্কেল অর্কেস্ট্রাল কম্পোজিশন, যেটা একটা বিশেষ ফর্মে লেখা হয়। সেই ফর্মটার নাম হলো সোনাটা ফর্ম। ‘সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট’ – এই কথাটা এমন একটা স্টাইলের অ্যারেঞ্জমেন্টের বিবরণ দেয় যেটা শুনতে অনেকটা সিম্ফনির মত লাগে। অর্থাৎ, একটা অর্কেস্ট্রায় যে ইনস্ট্রুমেন্টগুলি সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়, সেই ইনস্ট্রুমেন্টের শব্দগুলোকে ওয়েস্টার্ন হার্মোনির ধাঁচে ফেলে ব্যবহার করা হয়। কোনো সিম্ফনি যখন কম্পোজ করা হয় তখন খেয়াল রাখা হয় যাতে পুরো জিনিসটা শুনতে সুন্দর লাগে। সৌন্দর্য্যের উপর জোর দেওয়া হয় বেশি। সিম্ফনিতে সাধারণত তালবাদ্য থাকেই না। যদি তালবাদ্য রাখাও হয় তাহলেও খুব সাবধানে অন্যভাবে ব্যবহার করা হয়। সিম্ফনির ভেতরে একটা গল্প থাকে। গল্প ছাড়া সিম্ফনি হয় না। অনেকগুলো ঘটনার ছবি পরপর সাজানো হয়। আমি আগে একটা গান পড়ে গানের কথাগুলোকে পরপর সাজিয়ে একটি ছবি তৈরি করি। যেমন ‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে’। এই গানটা শুনলেই মনের মধ্যে একটা ছবি ভেসে উঠছে। কেন ‘আনন্দ’ করতে বলা হচ্ছে, সেটা জানার জন্য গানটা লেখার প্রসঙ্গটা জানা খুব প্রয়োজন। গানটির প্রতিটি লাইন, যেমন ‘কে আছো জাগিয়া পূরবে চাহিয়া’ – এই লাইনগুলি শুনলেই চোখের সামনে একটা ছবি ভেসে উঠবে। কি ধরণের অর্কেস্ট্রাল ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করব, কিরকম হার্মোনি ব্যবহার করব, সেগুলো পুরোটাই আমার হাতে থাকে। আমি একটা পুরো গল্প তৈরি করছি। একজন কম্পোজার হিসেবে আমি ভেবে দেখলাম এই ছবিগুলিকে যদি আমি অ্যারেঞ্জমেন্ট এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারি, তাহলে সেই কাজটির মধ্যে অভিনবত্ব আসবে। এই ধরণের কনসেপ্টকে ‘টেক্সট-পেন্টিং’ বলে। পাশ্চাত্যের ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই ‘টেক্সট-পেন্টিং’। এর অর্থ হলো একটা গানের কথাকে সেই গানের সুর বা হার্মোনির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করা। এটি কিন্তু পাশ্চাত্যের ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতের একচেটিয়া নয়। কিন্তু পাশ্চাত্যের মিউজিক কম্পোজিশন স্টাডিতে এগুলো পড়ানো হয়। এই জিনিসটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যেও আছে, কথা ও সুরের মেলবন্ধন। সেই কারণেই সুরগুলো চিরকালীন। সলিল চৌধুরীর গানে ও সুরে ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানটার সুরটা যেভাবে উঠছে নামছে তা অসাধারণ। উনি যেভাবে পুরো গানটা সৃষ্টি করেছেন, তা শুনেই বোঝা যায় যে সেটি একজন শিক্ষিত কম্পোজার খুব যত্ন করে তৈরি করেছেন। গানটার মধ্যে যে ছবিটা আছে তা কথায়, তালে, সুরে এমনকি অ্যারেঞ্জমেন্টের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। এই পুরো জিনিসটাকে আমি আবার ফিরিয়ে আনছি। সেইসময়কার সুর শুনলে কেউ ভুলতে পারেনা, এবং এগুলোই তার প্রধান কারণ। মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টটাকে নিয়ে সেভাবে এতদিন কেউ ভাবেনি। কিন্তু আমি এটাকে নিয়ে খুব সচেতন ভাবে ভাবার চেষ্টা করি।
6. ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আপনার কি মত?
এইটা নিয়ে বলতে গেলে যুগ অনুযায়ী ভাগ করতে হবে। বর্তমান সময় নিয়ে সত্যি বলতে কি আমার কিছুই বলার নেই। এটা যদি আগের সময় হতো তাহলে হয়তো আমার প্রয়োজনই পড়ত না। আমার ভালো কাজ করার দরকার হতো না। কিম্বা ভালো বা খারাপের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনাই হতো না। এখনও কেন আমরা সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্তের গান শুনে বলি আহা সেইসময়কার গান, ভোলা যায় না। স্বর্ণযুগ বলা হয় যখন, তখন নিশ্চয়ই কাজগুলো সোনার মতোই দামী, এবং সত্যিই তাই। কমার্শিয়াল গান তখনও ছিলো, কিন্তু এখন কোয়ালিটি কমে গেছে। এখন আর সেভাবে কেউ ভাবে না। অত খাটে না। কারণ এখন এই ধরনের গানেরই বাজার। আগের মতো ভালো কাজ তৈরি হলে এবং সেটার বাজার থাকলে আমার কাজের স্বীকৃতি পেতে এতো সময় লাগতো না। আমাকে অনেকেই উৎসাহ দেয়নি। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দিইনি, কারণ আমি জানতাম একটা সময়ে মানুষ এগুলো বুঝবে।
7. নতুন যে যে কাজ আসছে সেটা নিয়ে কিছু যদি বলেন।
আমার অনেকগুলো নতুন কাজের পরিকল্পনা আছে। মিউজিক থিওরি এবং অ্যারেঞ্জমেন্ট এর ওপর আরো নতুন নতুন বই আসবে। কয়েকটা নতুন অ্যালবাম করার ইচ্ছে আছে। নতুন গানের দিকে যাওয়ার আগে পুরোনো যে গানগুলো আছে সেগুলির নতুন সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে চাই। তারপরে আমি ভাববো যে অ্যারেঞ্জমেন্টের দিকেই থাকবো না নতুন সুর তৈরি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করব।
বিপাশা বলেছেন,
1. সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়াটা গর্বের বিষয় … আপনার কি প্রথম থেকেই মাথায় ছিল এইজাতীয় বড় কোন প্রতিযোগিতার কথা না পুরোপুরি ভালোবাসার জায়গা থেকে এসে এই জয়?
প্রতিযোগিতা আমি নিজে খুব একটা পছন্দ করিনা। কারণ, প্রতিযোগিতার মানে হচ্ছে কোনো একটা কিছুর পেছনে দৌড়ানো। এই দৌড়ানোটা আমি খুব একটা পছন্দ করিনা। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই আমি পুরোপুরি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, প্রত্যেক শিল্পীই নিজগুণে সমৃদ্ধ। আমি ঠিকই করে রেখেছিলাম, কম্পিটিশন-এ যাবোনা। গান শেষের পরে প্রত্যেক মানুষের ভালোলাগা এবং তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করা, এবং সেই রেশ তাদের মধ্যে রয়ে যাওয়া – এটাই আমার কাছে চরম প্রাপ্তি। আমার মনে হয়, প্রতিযোগীতা শিল্পের ক্ষেত্রে মানায় না। এবং, জীবনটাই একটা শিল্প। আমি আজ পর্যন্ত যতগুলো প্রতিযোগীতায় গিয়েছি, সেখানে অনেকের আশীর্বাদ পেয়েছি। এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। আমি এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম আমার ভাই চিন্ময় এবং উপমন্যুর অনুপ্রেরণায়।

2. দুজনেই যে একসঙ্গে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই পরিকল্পনাটা কি প্রথম থেকেই ছিল নাকি হঠাৎ করে হয়ে গেছে?
না, এটা প্রথম থেকেই ছিল; আগাগোড়াই ছিল। আমরা আস্তে আস্তে বিষয়টাকে গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছুটা আফশোষের বিষয়, যেহেতু উপমন্যু মিউজিক্যাল ফ্যামিলিতে বিলং করে না, সেক্ষেত্রে আমরা দুজনেই ওর পারিবারিক দিক থেকে অনেকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি। সেক্ষেত্রে আমাদের শিল্পজীবনে সাফল্য আসতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে, যা হয়তো আরো আগে আসা উচিত ছিলো। এটা আমাদের সমাজের একটা চরম সত্য, যে বহু গুণী শিল্পী পারিবারিক সমর্থনের অভাবে হারিয়ে যায়। কিন্তু, অনেকেই ঠিক সময়মতো সামলে নেয়, এবং নিজেকে দেরীতে হলেও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। আমাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ব্যক্তিগতভাবে এব্যাপারে আমি আমার বাবা, শ্রী প্রবীর ভট্টাচার্য্যের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। উনি যদি সময়মতো বুঝতে পেরে পাশে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো আমরা আজকেও এই জায়গাতে পৌঁছতে পারতাম না। এর মধ্যেই, অনেকগুলো কাজ আমরা করেছি একসঙ্গে। আরো নতুন কাজ আমরা অদূর ভবিষ্যতে নিয়ে আসতে চলেছি। পরিকল্পনাটা আগাগোড়াই ছিল, নতুন কিছু নয়।

দেখুন ভিডিও 

3. একসাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কীরকম?
বেসিক্যালি, ও যে মিউজিক্যাল স্টাইল নিয়ে কাজ করে, ও যে সাবজেক্টটা নিয়ে কাজ করতে চাইছে সেটা নিয়ে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন। তার কারণ, ওর মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো অন্যদের থেকে পুরোপুরি আলাদা। এবার, আলাদা অন্য একটা কিছুর সাথে, নতুন একটা কিছুর সাথে কাজ করতে চাইলে, প্রথম প্রথম প্রচণ্ড সমস্যা হয়, বিশেষতঃ, রেকর্ডিং এর সময়ে। বেশ কয়েক বছর আমাকে প্রচুর অধ্যাবসায় করে রপ্ত করতে হয়েছে পুরো ব্যাপারটা। আজকাল আমি বুঝতে পারি, যে কোথা থেকে কী করতে হবে বা পুরো কনসেপ্টটার এক্সপ্রেশনটা কীরকম হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উপমন্যুই আমাকে তৈরী করে দিয়েছে। কমার্শিয়াল মিউজিক আর সিম্ফনিক অ্যারেঞ্জমেন্ট – এই দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
4. আপনার গানের জগতের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমি খুব ছোটবেলা থেকেই গানের জগতে প্রবেশ করেছিলাম। আমার ছোটবেলাটা কেটেছে বহরমপুরে। প্রথমে বহরমপুর রেডিও সেন্টারে আমি চান্স পাই রেগুলার আর্টিস্ট হিসাবে ‘সবুজের মেলা’ অনুষ্ঠানে। সেখানে আমার নামটা রাখা হয় ফার্স্ট লিস্টের একদম ফার্স্টে। এটা আমার কাছে খুব বড় একটা প্রাপ্তি। রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা শুরু হয় তখন থেকেই। তারপর বাবা-মার অনুপ্রেরণায় আমি কলকাতায় আসি। এই ক্ষেত্রে একজনের নামটা না বললেই নয়। তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় সুশান্ত তালুকদার, যিনি আমাকে দেবারতি ম্যাম এর কাছে গান শেখার সুযোগ করে দেন। আজকালকার দিনে সুশান্তদার মত করে মনে হয় কেউ ভাবে না। আমি এখনো ওনার মতামত নিয়ে এগোই। ‘দেবারতি’ নামের কাছে আসার পর আমি একজন প্রকৃত গুরুর যে রূপ দেখেছি, আমি জানিনা সেটা কজন পায়।

দেখুন ভিডিও 

প্রথম বছর যখন এলাম, তখন আমি খুব ছোট। ম্যাম আমায় একটা গান দিয়ে বললেন এটা রবীন্দ্রসদনে আমাদের নেক্সট অনুষ্ঠানে গাইতে হবে। রবীন্দ্রসদন এর স্টেজ, যাকে একবার স্পর্শ করার জন্য প্রচুর গুণী শিল্পীরা স্বপ্ন দেখে, সেটা এত সহজে আমি পেয়ে যাব আমি ভাবতেও পারিনি। ম্যাম আমায় বললে্‌, খুব ভালোভাবে গাইতে হবে কিন্তু। আমার মনে আছে প্রথম গান ছিল “এরে ভিখারি সাজায়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে”। তার আগে আমাদের বৈতালিক এর কোরাস গান ছিল, আমরা সবাই খুব আনন্দ করে গানগুলো গাইতাম। অনেকের ধারণা আছে যে কোরাস গাওয়া মানে নিজস্বতা থাকে না। আমি ছোটবেলা থেকে শিখেছি ম্যামের কাছে। এবং বুঝেছি কোরাস গান গাওয়া সবথেকে কঠিন আর আনন্দের। এই যে সবার সাথে সুন্দর ভাবে একটা গানকে প্রেজেন্ট করা ,সবাই মিলে মিশে গাওয়া এটা খুব কম লোকই পারে, এবং আমাদের গুরু আমাদের ছোটবেলা থেকেই সেটা শিখিয়েছেন। আমি যখন স্টেজে গানটা গেয়ে শেষ করতাম সবার আগে ম্যামের দিকে তাকাতাম। ইভেন গান গাওয়ার সময়ে ম্যাম পাশে বসে হারমোনিয়াম বাজাতেন, এবং সেটা আমার কাছে এতটাই মূল্যবান মুহূর্ত ছিল, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমরা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে গান গাইতাম এবং সবাই প্রাণ ভরে গাইতাম। ওই বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রত্যেকটা বছর আমরা ওয়েট করতাম। গান শেষে যখন সব শ্রোতারা কাছে এসে তাঁদের ভালো লাগার কথা জানাতেন, তখন এতো ভালো লাগতো! তবুও আমি ম্যাম আর আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। একবার হ্যাঁ বলা বা না বলা – এটার মধ্যে একটা মানসিক শান্তি ছিল, যেটা এখনও আমার কাছে অনেক মূল্যবান। আমি কলকাতায় ম্যামের কাছে আসার পরেই এগুলো পেয়েছি। ম্যামের হাত ধরে কলকাতায় রবীন্দ্রসদনে, কখনো বা শিশির মঞ্চে, আবার কখনো বা গিরিশ মঞ্চে – বিভিন্ন জায়গায় আমার গান গাওয়া শুরু হয়েছে। হাজার কন্ঠের কথা আমি এখানে বলব। আমরা বৈতালিক এর ছাত্র-ছাত্রীরা হাজার কন্ঠে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি এক্ষেত্রে দুবার অংশগ্রহণ করেছি। একবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আর একবার দিল্লির ‘আর্ট অফ লিভিং’ এর প্রোগ্রামে। এই স্মৃতিগুলো আমার কাছে সারা জীবনের জন্য একটা মধুময় মুহূর্ত তৈরি করে। আমাদের গান যখন প্র্যাকটিস করাতেন ম্যাম তখন এতটাই ভাল লাগার জায়গা ছিল, যে সেটা মনেই হতো না যে আমরা কোন প্রোগ্রামের জন্য প্র্যাকটিস করছি। কারণ আমাদের বৈতালিক এ এই গান গাওয়া ব্যাপার টা নিয়মিতভাবে চলতো। এটা আমাদের নিত্যসঙ্গী। এখনো বৈতালিক এর প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম দেখলেই এই গানকে ভালোবেসে যাওয়া ব্যাপারটা সহজেই বোঝা যায়। আমার মনে হয় বৈতালিক মানে ভালোবেসে প্রাণ দিয়ে গান গাওয়ার একটা জায়গা, যেটা সেখানকার প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রী ভীষণভাবে বজায় রেখে চলেন। যার অনুপ্রেরণা আমরা ম্যামের থেকে পেয়েছি। এরপর আমি রবীন্দ্রভারতীতে আসি এবং রবীন্দ্রসংগীত বিভাগে পড়াশোনা শুরু করি। এবং সেটাও আমার মা এবং ম্যাম এর অনুপ্রেরণায়।

দেখুন ভিডিও 

উপমন্যুর সাথে একজন আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করা ছাড়াও আমি আমাদের বিভিন্ন প্রজেক্টে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এর কাজ করি যখন বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে আমরা কাজ করি। আমাদের অ্যালবাম ‘নবরূপে রবীন্দ্রনাথ’ রেকর্ডিংয়ের সময়ে আমরা বিভিন্ন কয়্যার আর্টিস্টদের নিয়ে কাজ করেছিলাম। তাতে আমি শিল্পী হিসেবে কাজ করা ছাড়াও ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। এবং আমাদের সহকারী হিসেবে বাণীব্রত, আমার সহপাঠী একটা অন্যতম ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এবং আমাদের প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে বাণীব্রত সবসময়ে আমাদের সহকারী হিসেবে আমাদের সাথে থাকে এবং ভবিষ্যতেও আমাদের প্রত্যেকটা কাজেই বাণীব্রত থাকবে। ওর সহযোগিতা এবং কাজের প্রতি লয়ালটি সত্যিই আমাদের দুজনকে মুগ্ধ করে। গান অনেকেই গায়, গাইতে জানে। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে বাণীব্রত যেভাবে এগিয়ে আসে আমাদের পাশে থাকে সেটা কখনোই হয় না।
মোটকথা আমার জীবনে সঙ্গীতের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা শ্রীমতি অনন্যা ভট্টাচার্য্য যে অবদান রেখে গেছেন, তার পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ হয়তো আমি আমার গানের মধ্য দিয়ে করতে পারবো।

5. আপনার গানের গুরু সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
আমার গানের গুরুদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় শ্রীমতি দেবারতী সোম। যিনি আমার জীবনে একটা অনেক বড় জায়গায় রয়েছেন। উনি শুধু গুরুই নন উনি আমার গুরুমা। আমি আর যাদের কাছে শিখেছি তাঁরা হলেন শ্রদ্ধেয় শ্রী তৃষিত চৌধুরী, আচার্য্য জয়ন্ত বোস, শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতি মৌমিতা মিত্র, শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতি শ্রাবণী সেন, এবং শ্রদ্ধেয় শ্রী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
আমি শ্রদ্ধেয় শ্রী পলাশ রায়, এবং শ্রদ্ধেয় শ্রী স্বপন অধিকারী স্যারের কাছে তবলার তালিম নিয়েছি।

6. আপনি রেডিয়োতেও গান গেয়েছেন আর ক্যামেরার সামনেও। তফাৎ কীরকম?
রেডিয়ো সেন্টারের মেমারিগুলো খুব সুইট মেমারি। বিশেষকরে বহরমপুরের রেডিয়ো সেন্টারে। ওখানে যে মিউজিশিয়ানরা ছিলেন, ওখানে ভেতরকার যে অ্যাটমোস্ফিয়ারটা ছিল সেটা অসম্ভবরকম ফ্রেন্ডলি ছিল। খুব ছোট ছিলাম তো যখন আমি যখন রেডিয়ো সেন্টারে চান্স পেয়েছিলাম। বহরমপুর রেডিয়ো সেন্টারে আমার ফার্স্ট লিস্টে নাম বেরিয়েছিলো। আর আমার প্রথম গান ছিলো রবীন্দ্রসংগীত। ওখানে বাচ্চা হিসেবেই ঢুকেছিলাম, ধীরে ধীরে বড়ো হলাম সবার সাথে, আলাদাই একটা রিলেশন ছিলো সবার সাথে। যখন ক্যামেরার সামনে আসি তখন প্রথম প্রথম আড়ষ্টতা চলে আসতো। কিন্তু এখন যেটা দেখি যে, ক্যামেরার সামনে আসতে পারলে ভালো লাগে কারণ সবাইকে গান শোনাতে পারি, একটা আলাদা অনুভূতি সেটা। দুটোর মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে। কারন ক্যামেরার পেছনে যা করা সম্ভব তা ক্যামেরার সামনে তো করা যাবেনা। যেমন মহাতীর্থ কালীঘাটে যখন আমাদের মিউজিক রেকর্ডিং হলো তখন একটা আলাদা পরিবেশ ছিল। যখন দেখলাম ভিডিয়োটা রিলিজ হল, তখন দেখলাম গানটা কত অন্যরকম লাগছে।
একসাথে, উপমন্যু-বিপাশা উদ্ভাবনী সঙ্গীত প্রযোজনা, পরিচালনা এবং সুর সৃষ্টি করেন যা একাধারে শৈল্পিক অন্যদিকে নান্দনিক। এভাবেই বৈচিত্র্যময় এবং উদ্ভাবনী সঙ্গীত তৈরির মাধ্যমে তাঁরা শ্রোতাদের জন্য ক্রমাগত বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন।