TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

শোভাবাজার রাজবাড়ির উমার দূত ভেসে যায় জলে…

বঙ্গ নিউস, ২৬ অক্টোবর, ২০২০ঃ যাও, পাখি, বলো…পাখি উড়ে যায়। পাখি গিয়ে বসে সেই সুদূর কৈলাশে। মহাদেব সেখানে প্রেয়সীর বিরহে কাতর। সন্তানদের শোকে মুহ্যমান। মাত্র তো চারটে দিন। এই চারটে দিনও অদর্শন সয় না তাঁর। ষষ্ঠীর বোধন থেকে সংসারের দুর্গা সেই যে গেছেন বাপের ঘর, তারপর একাকী ভোলানাথ মূহূর্ত গুনে চলেছেন। কবে যেন ফেরা তাঁর!
দুর্গা জানেন। ভোলা স্বামীটি বড়ই কাতর। চোখে হারান প্রতি পলে। তাই তো নীলকণ্ঠ দেবাদিদেবের ছায়াকে বাপের বাড়ির পথটা চিনিয়ে রেখেছেন।

আরও পড়ুন বিসর্জনে বিষাদ নেই, সন্ন্যাসীরা নাচছেন—উৎসে সারদাদেবীর বিধান

সেটিও নীলকণ্ঠ। দুই ডানায় ভেসে শ্বশুরঘর থেকে বাপের ঘর অবধি পাড়ি জমিয়েছে দুর্গার সঙ্গে। চিনে রেখেছে পথ। পাখি যে। আসাযাওয়া বড় সহজ। তাঁর ফিরতি যাত্রার লগ্ন এলেই উড়ে উড়ে যায় কৈলাশে। খবর শোনায়—মা ফিরছেন ওই। রওনা দিয়ে দিয়েছেন।
আহ্লাদে জেগে ওঠেন মুহ্যমান মহেশ্বর। আর কয় মুহূর্তের প্রতীক্ষা!

বিজয়া দশমীর সঙ্গে নীলকণ্ঠ পাখির সম্পর্কটা অতি প্রাচীন। পৌরাণিক বা ধর্মীয় ভিত্তি থাক, কিংবা না থাক, যা আছে—অতি সরল আর আটপৌরে এক বিশ্বাস। শিব-দুর্গার সংসারের মতোই।

শোভাবাজার রাজবাড়ির বড়-ছোট, দুই তরফই নীলকণ্ঠের বিষয়টি মেনে চলেন বরাবর। দুর্গা তাঁদের কন্যা রূপে পূজিতা। চারদিন পর কনকাঞ্জলি উজাড় করে পতিগৃহের পথে যেই না পা রাখতেন উমা, রাজবাড়ির ছাদ থেকে ওড়ানো হত নীলকণ্ঠ পাখি। ঝাঁক বেঁধে। কৈলাশেই হয়তো যেত তারা। কে জানে! মায়ের ফেরার সংবাদ নিয়ে উড়তে উড়তে কোন বাঁকে যেন মিলিয়ে যেত!
পুজোর ক‘দিন আগেই পাখিবাজার থেকে বেছেবুছে কিনে আনা হত নীলকণ্ঠ।

এখন সে দিন আর নেই। তারপর আইনেরও ফিকির বেড়েছে। তা বলে রীতি অস্বীকার করা যায় নাকি! নীলকণ্ঠ পৌঁছয় ঠিকই। তবে উড়ে নয়, ভেসে। নীলকণ্ঠ পাখির মূর্তি তৈরি হয়। দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গেই ভাসিয়ে দেওয়া হয় সেই নীলকণ্ঠ মূর্তিও। কৈলাশে যাবে সে, মায়ের খবর নিয়ে।
আকাশগঙ্গা পথে পাড়ি জমায় মাটির নীলকণ্ঠ—শোভাবাজারের উমার দূত।