TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

মণিপুরের একটি গ্রামে রয়েছে ঐশ্বরিক নুন

সবুজ পাহাড়, জঙ্গলে ঘেরা উপত্যকা বেষ্টিত দেশ মণিপুর। নদী আছে কিন্তু সমুদ্র নেই৷  নদীর জল মিষ্টি, সুন্দরবনের জলের মত নোনা নয়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয়  মণিপুরে নুন তৈরি হয়। স্থানীয় মানুষজন রান্না করেন এই নুন দিয়ে৷ এমনকি  বিশেষ বিশেষ সময়ে, পুজো-পার্বণের ভোগ প্রসাদে এই নুন ব্যবহার করেন৷  উপবাস-ব্রত উপলক্ষ্যে যেমন আমরা  সৈন্ধব লবণ ব্যবহার করি মণিপুরের মানুষ ব্যবহার করেন এই নুন৷

মণিপুরের রাজধানী  ইম্ফল থেকে ৩৫ কিমি দক্ষিণে লাইমাটন পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত নিঙ্গেল জনপদ। সেখানেই কয়েকটি পরিবার সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে নুন তৈরি করেন৷ তাঁরাই  মণিপুরের সুপ্রাচীন এই নুন তৈরির পদ্ধতিকে এতকাল সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন৷

 

 

 

 

দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি এই নুন তাদের কাছে শুভ৷  মণিপুরে এখনও নারীদের গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবের পর সুস্থতা আর পুষ্টির জন্য এই নুন খাওয়ানো হয়। গ্রামের দিকে এই নুনকে ধন্বন্তরির আশীর্বাদ বলে মণিপুরিরা বিশ্বাস করেন।
কথিত আছে পুরাকালে মণিপুরের মহারাজ সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ এই লবণ উপহার দিতেন। এখন বিয়ে, পুজো যে কোন শুভ কাজে এই নুন মণিপুরের সকলে ব্যবহার করেন। তাই পুজো বা বিয়ের মরশুমে  নিঙ্গেল গ্রামে নুন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যান তারা। ইম্ফলের ইমা মার্কেট, থঙ্গল মার্কেট, থোবাল বাজারে নুনের চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

কিন্তু এই নুন আসে কোথা থেকে?  নিঙ্গেল গ্রামে তিনটে  ইঁদারা আছে। তাদের জল সম্পূর্ণ লবণাক্ত। কুয়োগুলি ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। সবচেয়ে প্রাচীন কুয়োটি কাঠের, মোটা গাছের গুঁড়ির ভিতর ফাঁকা করে তৈরি করা হয়েছে।  ছ’ফুট ব্যাসার্ধের কুয়োটি প্রায় পঞ্চাশ ফুট গভীর। অন্য দু’টি পরবর্তী কালে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে । সারা বছরই কুয়োগুলিতে জল ভর্তি থাকে।

নিঙ্গেল থেকে দেড়-দু’কিমি দূরে উখোংসং এবং সিখং-এ নামে আরো দুটি নোনা জলের কুয়ো ছিল৷ আগে এখানেও নুন তৈরি হত। কিন্তু এখন সে দু’টি শুকিয়ে গেছে।

 

ইতিহাসে নাম তুলে ফেললেন পি ভি সিন্ধু ,ভারতীয় হিসেবে এই নজির কারও নেই

 

কীভাবে তৈরি হয় নুন?

নোনা জলের কুয়ো থেকে জল আনা হয়৷  টিনের বড় পাত্রে কাঠকুটো জ্বালিয়ে জ্বাল দিয়ে দিয়ে জলকে ঘন করা হয়৷  একটু তরল অবস্থায় মাটির সরা করে কলাপাতায় ঢেলে দেওয়া হয়। ঘন জল জমে গিয়ে হাতে-গড়া মোটা রুটির মতো সরার আকার নেয়। এক-একটির দাম পড়ে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা।

 

 

নিঙ্গেলকে মণিপুরি ভাষায় বলে— থুং খং। ‘থুং’ মানে লবণ আর ‘খং’ মানে কুয়ো।
নিঙ্গেল এখন ‘নুনের গ্রাম’ বলে পরিচিত। মণিপুরের পর্যটন তালিকায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এই নুনের গ্রাম।
পাহাড়ের পাদদেশে সবুজে ঢাকা ছোট্ট জনপদ। হাজারখানেক লোকের বাস। বাঁধানো রাস্তা, বেশ কিছু ঘরবাড়ি, দোকানপাট, আর সুন্দর একটি মন্দির। মন্দিরে অধিষ্ঠিত প্রাচীন মণিপুরি দেবদেবী— নঙ্গপক, নিংথাও এবং প্যান্থাইবি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস— এই দেবদেবীরা কুয়োগুলি রক্ষা করছেন। এই কুয়োকে এ গ্রামের লোকেরা দেবতা বলে মানেন। শুক্রবার এই কুয়োকে কেউ স্পর্শ করেন না৷তবে এই কাজে সব চেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি সংগ্রহ। তাই এখন অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন৷ এখন মাত্র দশটি পরিবার নুন তৈরির কাজে যুক্ত। প্রচুর জ্বালানি দরকার হয় নোনা জলকে ঘন করতে। পাহাড়-জঙ্গল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করা বর্ষাকালে খুবই দুরূহ।