TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

জনাইয়ের বাঁকসার পুজোয় চতুর্ভুজা দুর্গা

জনাইয়ের বাঁকসার চৌধুরী পরিবারের পুজোর বিশেষত্বই হল এই পরিবারের দুর্গা চতুর্ভুজা। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো দালান পুজোর চারটে দিন নানা লোকজনের মিলনক্ষেত্র। পরিবারের সবাই আনন্দে এই কটা দিন একসাথে কাটান।

এ পরিবারের দুর্গা অন্যরকম। চতুর্ভুজা তিনি। চার হাত তাঁর। কথিত আছে, এ পরিবারের এক সদস্যকে মা স্বপ্নাদেশে জানিয়েছিলেন চার হাতের কথা। একই সঙ্গে মুখমণ্ডলে যেন অসুর বধের পর তৃপ্তির হাসি থাকে, তাও বলে দেন।

এ পরিবারেই সদস্য সুশান্ত চৌধুরীয় কথায়, স্বর্গীয় রাজারাম চৌধুরীর হাতে এ বাড়ির পুজোর প্রচলন হয়। তিনি আরো জানান, যে, আমরা আগে হরিপালে থাকতাম। হরিপাল থেকে বাঁকসায় আসার পর উনি কাশী যাবেন বলে ঠিক করেন। এরই মধ্যে মা একদিন রাতে ওনাকে স্বপ্নাদেশ দেন। বলেন, ‘তোমাকে আর কাশী যেতে হবে না। তুমি বাঁকসায় ফিরে যাও’। মা নিজের রূপ বর্ণনা করে বলেন, ‘আমার চার হাত হবে। অসুর নিধনের পর যে মুখের আদল অর্থাৎ এক তৃপ্তির হাসি যেন মুখে থাকে’। প্রতিদিন হোম, যজ্ঞ চণ্ডীপাঠ তো আমাদের পুজোতে চলেই। একই সঙ্গে চাল, বস্ত্র বিতরণও করা হয়।”

আরো পড়ুন 

ফিরছে আবার পুরনো রেওয়াজ

এ পুজো নিয়ে আরো অনেক ইতিহাস রয়েছে। এক সময় এই পুজোয় পশুবলি হতো। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে এক অবাক করা ঘটনা ঘটে সন্ধিপুজোর সময়। সুশান্ত চৌধুরী বলেন, “আমাদের পুজোর শুরু থেকেই বলি প্রথা ছিল। বছর পাঁচেক আগে সন্ধিপুজোর বলির সময় খাড়া আটকে যায়। আমরা ভাবলাম মা আর হয়তো সন্তানের রক্ত চাইছেন না। সেই থেকে পশুবলি বন্ধ। এখন ফল বলি হয়।”

এ পুজোর নিয়ম কানুন আর পাঁচটা পুজোর থেকে আলাদা। পরিবারের সদস্যদের থেকে যা জানা যায়, এই পুজো ব্যতিক্রমী পুজো। মূর্তিও যেমন আলাদা রকম, পুজোর ধর লণ ধারণও অন্যরকম। এই পুজোয় কোনও বোধন বসে না। বেলতলাতে ষষ্ঠাদিকল্প, দেবীর অধিবাস, আমন্ত্রণ হয়। ওই দিন থেকেই পুজো শুরু হয়। তার পর সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নানের পর এখানে ন’টা পরিবার আছে, সেই ন’টা পরিবারের লক্ষ্মীকে এনে এখানে স্থাপন করা হয়। তারপর বাস্তু দেবদেবী, কালী, নারায়ণের পুজো করার পর মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। এটাই এখানকার রীতি।

এক সময় এখানে সন্ধিপুজোর সময় কামানের তোপধ্বনি হতো। সেই ধ্বনি শুনে গ্রামবাসীরা এসে জড়ো হতেন। পুজো শুরু হওয়ার আহ্বান ছিল এটা। এখন আর সেই তোপধ্বনি হয় না, পরিবর্তে সাধারণ পটকা ফাটানো হয়। সেই আওয়াজ শুনে গ্রামবাসীরা আসেন। এ পুজোয় গ্রামবাসীরা আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের কাঁধে চেপেই মা দশমীতে সরস্বতী নদীতে বিসর্জন যান।

এ বাড়ির পুজো সবার কাছেই আনন্দের, গর্বের। এই পুজো সকলের উৎসব। বাঁকসার চৌধুরী পরিবারের পুজোকে কেন্দ্র করে সবাই একসাথে এই কটা দিন আনন্দে মেতে উঠেন।