Home বিনোদন টিভির পর্দায় নয়, ৭৫ হাজার রহস্যের পর্দা সরিয়েছেন বাস্তবের গোয়েন্দাগিন্নি

টিভির পর্দায় নয়, ৭৫ হাজার রহস্যের পর্দা সরিয়েছেন বাস্তবের গোয়েন্দাগিন্নি

by banganews

গোয়েন্দা শব্দটা উচ্চারণ করলে বাঙালির মনে আসে ধুতি চশমা পরা বুদ্ধিদীপ্ত যুবক ব্যোমকেশ নয়ত জিনস আর পাঞ্জাবি পরা তপসের ফেলুদা। সাহেব সাজা কিরীটীও আসতে পারেন কল্পনায়। কিন্তু গোয়েন্দা যদি হন মহিলা! আরে দাঁড়ান, শাড়ি পরা এক মধ্যবয়সিনী একের পর এক রহস্যের সমাধান করে চলেছেন। ভাবতে পারছেন?

বইয়ের পাতায় হয়ত আগাথা ক্রিস্টির মহিলা গোয়েন্দা মিস মার্পলের কাহিনি পড়েছেন , অথবা মনে পড়তেই পারে, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি শুভ মহরৎ (২০০৩), যেখানে এক নিতান্ত বাঙালি বিধবা মহিলার গোয়েন্দাগিরিতে উঠে আসে এক জটিল হত্যা মামলার সমাধান-সূত্র।

কিন্তু এসব তো গল্প কথা! সিনেমা আর বাস্তবের গল্প এক নাকি? ডেলিশোপে যতই একজন গৃহবধূ গোয়েন্দাগিন্নি সাজুন না কেন, গোয়েন্দা হিসেবে মেয়েদের এখনো তেমন ভাবার পরিসর হয়নি।  তবে রহস্য উন্মোচনে মেয়েদের যারা আনফিট মনে করেন না, বই এর পাতা ছেড়ে তাদের কাছেও কিন্তু বাস্তবের উদাহরণ প্রায় নেই। আমাদের দেশে প্রাইভেট ডিটেকটিভ ব্যাপারটাও ঠিক অন্য পেশার মত নয় ।

আরও পড়ুন অন্ধকার শৈশবে শুধুই পাউরুটি আর পেঁয়াজি, নিজের অতীত নিয়ে অকপট বলিউডের একমাত্র মাস্টারজি সরোজ খান

কিন্তু এমন একজন আছেন, যে গোয়েন্দাগিরি করে চলেছেন প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে। রজনী পণ্ডিত। জন্ম মহারাষ্ট্রের থানে জেলার পালঘর নামের এক মফস্‌সল শহরে। তাঁর বাবা ছিলেন শান্তারাম পণ্ডিত মুম্বই পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটর ।

মুম্বইয়ের রুপারেল কলেজে মারাঠি সাহিত্য নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করার সময়েই রজনী আগ্রহী হয়ে পড়েন গোয়েন্দাগিরিতে। কলেজে পড়ার সময়েই তাঁর প্রথম ‘কেস’টি সমাধান করেন রজনী।

ক্লাসের মধ্যেই তিনি লক্ষ করেন তাঁর এক সহপাঠিনী অদ্ভুত আচরণ করছে। সে তার বাবা-মাকে ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলছে এবং মাঝে মাঝেই কিছুক্ষণের জন্য উধাও হয়ে যাচ্ছে। রজনী মেয়েটিকে অনুসরণ করা শুরু করেন। এবং আবিষ্কার করেন, মেয়েটি কুসঙ্গে পড়েছে। তিনি মেয়েটির বাবা-মাকে বিষয়টি জানান। কিন্তু তাঁরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাননি ব্যাপারটা। তখন তিনি লুকিয়ে মেয়েটির কিছু ছবি তোলেন এবং সেগুলি তার বাবা-মাকে দেখালে তাঁরা বুঝতে পারেন, কী ঘটে চলেছে। তারা রজনীকে হয়ত কিছু অবজ্ঞা করেই স্পাই বলে সম্বোধন করেছিলেন।

ক্রমশ তাঁর এই ‘স্পাই-গিরির খবর ছড়াতে শুরু করে। ক্রমে প্রতিবেশীদের মধ্যে থেকেও আসতে তাকে কেস। এক মহিলা রজনীর কাছে আসেন, তাঁর স্বামীর অস্বাভাবিকতার কারণ জানতে। সেই ভদ্রলোক ভালই আয় করতেন। কিন্তু বাড়িতে প্রায় কিছুই এসে পৌঁছত না। রজনী অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, ভদ্রলোক মদের পিছনেই সব টাকা খরচ করে ফেলছেন। আর বাড়িতে জানাচ্ছেন, টাকা পকেটমার হয়ে গিয়েছে।

 

আরও পড়ুন রামলীলা বাজিরাও মস্তানিতে সুশান্তকে নিতে পারেন নি যশরাজের জন্যই – জানালেন সঞ্জয় লীলা বনশালি

রজনী বুঝতে পারেন, এই অনুসন্ধানবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেওয়াই যায়।এর থেকেই জন্ম হয় ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ’ রজনী পণ্ডিতের।

৫১ বছর বয়সের রজনী অসংখ্য কেসে সফল। এর মধ্যে অনেকগুলিতেই প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল। এমন অপরাধীকেও তিনি ধরেছেন, যার অপরাধের প্রমাণ পাওয়াই দুরূহ ছিল। এক কেস থেকে আর এক কেস-এ গড়িয়ে গিয়েছে রজনীর গোয়েন্দাগিরি। প্রায়শই ছদ্মবেশ ধরতে হয় তাঁকে। কখনও কাজের লোক, কখনও উন্মাদিনী সেজে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে পারেন রজনী। প্রায় ৭৫,০০০ কেস তিনি সমাধান করেছেন। পুরস্কার পেয়েছেন ৫৭টি।

আজ তাঁর নিজের অফিস রজনী ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো-তে ২০ জনের একটি দল কাজ করে। শুধুমাত্র টাকা নয়, এই পেশার প্রতি প্রেম আর প্যাশনই তাঁকে চালিত করে— জানাতে দ্বিধাবোধ করেন না ভারতের সম্ভবত একমাত্র মহিলা গোয়েন্দা রজনী পণ্ডিত।

You may also like

Leave a Reply!