Home ফিচার একান্তে নিভৃতে শান্তির খোঁজে মানুষ আসে নিত্যদিন

একান্তে নিভৃতে শান্তির খোঁজে মানুষ আসে নিত্যদিন

by banganews
গানের সুরেই আছে,”জানি জুই-মালতি হায়,/ কতো গন্ধ যে ছরায়।/তবু ঘরের ফেলে পরের কাছে ,নিজেরে বিলায়”। – চেনা সুর, চেনা গান। “মায়ের পায়ে জবা হয়ে উঠ না ফুটে মন” এর পরিচিত গানের লাইন। প্রতি বাঙালীর কাছেই চেনা জানা ছন্দ এ গানের।
এ বাংলায় কালী মায়ের আরাধনার আরেক পরিচিত জায়গা হুগলীর বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির। হংসেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাসও প্রাচীন। বয়সের ভারেও মলিন হয়নি মন্দিরের জৌলুস।
আরো পড়ুন 
১৮১৪ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ২০৭ বছরের পুরনো মন্দির। একেবারেই স্বতন্ত্র ধাঁচে গড়ে উঠেছে। মন্দিরের কাঠামোও অন্যধারার। রাজা নৃসিংহ রায় দেব মহাশয় এই মন্দিরের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে এ কাজ সম্পন্ন করেন তাঁর স্ত্রী রাণী শঙ্করী। রাজা নৃসিংহ রায় দেবের মা ছিলেন রাণী হংসেশ্বরী। সেই সূত্রেই এই মন্দিরের দেবী মা হংসেশ্বরী দেবী নামে পূজিত হন।
মন্দিরের স্থাপত্যকাজ কয়েকশো বছরের পুরনো। মূল মন্দিরের পাশেই আছে বাঁকুড়ার পোড়ামাটির ধাঁচে তৈরি অনন্ত বাসুদেব মন্দির। মন্দিরের গঠনশৈলী অনেকটা বিদেশী গির্জা ধাঁচের। হংসেশ্বরী মন্দির এবং অনন্ত বাসুদেব মন্দির এই দুটি মন্দিরই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত। মন্দিরটিতে রয়েছে প্রায় ১৩ টি মিনার বা রত্ন। মন্দিরটির চূড়াগুলিতে রয়েছে প্রস্ফুটিত পদ্মের নকশা। আর এই অনন্ত বাসুদেবের মন্দিরটি রাজা রামেশ্বর রায় ১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করেছিলেন। মন্দিরের গায়ের দেওয়ালে রয়েছে পোড়ামাটির কাজ। মন্দিরের সামনেই রয়েছে একটা ছোট বাগান। অদূরে রয়েছে পুরনো জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। ঘুরতে ভালোই লাগবে এই শান্ত ধীর জায়গাটা। ধ্বংসাশেষের গায়ে এখনও পুরনো দিনের সুর লেগে রয়েছে। জুড়ে রয়েছে পুরনো দিনের কথা।
কোনো একদিনের সকালে বেরিয়ে দিব্যি ঘুরে আসা যায় এই দুই মন্দির। বাংলার প্রাচীন মন্দির হিসাবে এই দুই মন্দির ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। পুরনো স্থাপত্য মানেই তাতে লুকিয়ে আছে ইতিহাস। পুরনো দিনের মন্দিরের মূল যে বৈশিষ্ট্য তা শুধুমাত্র দেবীর আরাধনা নয়, পাশাপাশি তার স্থাপত্যকাজও মনোগ্রাহী, আকর্ষণীয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, হংসেশ্বরী মন্দিরের কথা হয়তো অনেক মানুষই জানেন এবং অনেক মানুষেরই নিত্য যাতায়াত এখানে। কিন্তু করোনা কালে যখন দূরত্ববিধিই আসল বিধি তখন বেড়াতে যাওয়াই এখন ভুলবার জোগাড় হয়েছে। তাই এরকম এক সকালে বেরিয়ে হঠাত করে বরং ঘুরে আসাই যায় এই মন্দির।
নিরিবিলি ছিমছাম হাল্কা পরিবেশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর পর আবার এই মন্দির খুলেছে ১৭ আগস্ট থেকে। নিত্যদিনের কাজের থেকে বেরিয়ে একদিন বেরিয়ে আসা যেতে পারে হুগলীর ব্যাণ্ডেল আর ত্রিবেণীর মাঝে উপস্থিত প্রায় শিল্পাঞ্চল বাঁশবেড়িয়ার এক টুকরো এই বেড়াতে যাওয়ার জায়গায়।
ট্রেনে বাঁশবেড়িয়া হয়ে বা কল্যাণী রোড হয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র ঈশ্বরভক্ত নন, যদি ছবি তোলার শখ থাকে, বা নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করলেও ঘুরে আসা যেতে পারে এই মন্দির।

You may also like

Leave a Reply!