TheBangaNews.com | Read Latest Bengali News | Bangla News | বাংলা খবর | Breaking News in Bangla from West Bengal

মায়ের ভাগ তাহলে কার? 

প্রতি বছরই নতুন রকম ভাবনার চমক থাকে বেহালার বড়িষা ক্লাবের পুজোয়। বড়িষা ক্লাবের পুজোতে পুজোর মণ্ডপ ভাবনা, পরিকল্পনা, সৃজনে রয়েছেন শিল্পী রিন্টু দাস আর মৃৎশিল্পী দেবায়ন প্রামাণিক। দেবায়ন প্রামাণিক যাদবপুরের বাসিন্দা। তিনি গভর্মেন্ট কলেজের আর্টের ছাত্র। দুজনেরই হাতের ছোঁয়ায় মা দুর্গার আদল হয়েছে অন্যধারার।

বড়িষা ক্লাবের এবার থিম “ভাগের মা”। অর্থাৎ ‘৪৭ এর দেশভাগের সময় নিজের ভিটে মাটি নিজের শিকড় উপড়ে চলে আসার যন্ত্রণা ধরা পড়েছে তার সৃষ্টিতে, তার শিল্পকর্মে। এ যেন দেশ জমি মাটি ছিঁড়ে আসা নয়, নিজেকেই নিজের থেকে আলাদা করে বেরিয়ে আসা। এ যন্ত্রণাই ধরা পড়েছে শিল্পীর গড়া মাটির তালে। মাটির তাল যখন রূপান্তরিত হয়েছে মায়ের মূর্তিতে তখন এ মা যেন আমাদের প্রতিদিনকার জলজ্যান্ত মা – ভাগের মা। উদ্বাস্তু হওয়ার ছিন্নমূল হওয়ার যন্ত্রণা বেদনা সে যেন আজও বয় বেড়াতে হয় তাদের। সে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে মায়ের মুখে।

আরো পড়ুন 

করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে এবার থিমপুজো উত্তর দিনাজপুরে

এছাড়াও এই থিমের পিছনে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাভাবনা কাজ করেছে। ১২০০ সালে ধর্মপ্রাণ রাজা বল্লাল সেনের রাজত্বকালের সময়ে এ ঘটনা। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, বল্লাল সেন  এক রাতে মহিষমর্দিনী দশভূজার স্বপ্ন দেখেন । স্বপ্নের আদেশ মতো ঢাকার (অধুনা বাংলাদেশ) নিকটবর্তী এক জঙ্গল থেকে দেবী দশভুজার একটি বিগ্রহ উদ্ধার করেন তিনি। বিগ্রহটি আচ্ছাদিত বা ঢাকা ছিল বলে তিনি এর নামকরণ করেন “ঢাকেশ্বরী” এবং প্রতিষ্ঠা করেন “ঢাকেশ্বরী” মন্দিরের। ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকায় অবস্থিত হলেও দেবী ঢাকেশ্বরীর আদি বিগ্রহটি এখন কলকাতার কুমোরটুলির অঞ্চলে দুর্গাচরণ স্ট্রিটে ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন । ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অন্য সবকিছুর সঙ্গে মায়ের আদি বিগ্রহটি চলে আসে এখানে। কয়েকলক্ষ মানুষের সঙ্গে মা-ও উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। এই কনসেপ্ট থেকেই তৈরি হয়েছে এই বড়িষা ক্লাবের মায়ের ছবিটি।

আজ এত বছর পরে এসেও ছিন্নমূল হওয়ার হতাশা, যন্ত্রণা, কষ্ট সাথে নিয়েই চলেছেন মানুষ। মাও আজ শিকড় ছিড়েখুঁড়ে চলে এসেছেন এখানে। এবার মা তো ভাগের মা – কোথায় তার ঠিকানা, কোথায় তার বাসভূমি – এসব প্রশ্ন কে জিইয়ে রাখতেই, এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই বড়িষা ক্লাবের ভাগের মা থিম।