বঙ্গ নিউস, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ঃ করোনা জয় করেও ভয় কাটছে না। বরং পরের ক্ষয়গুলো চেপে বসছে এর পরেই। যদিও এই তালিকায় এখনও অবধি ভারত নেই। তবে করোনা-পরবর্তী সংকট নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলোর এবার থরহরি কম্প। আমেরিকার দুই গবেষণা সংস্থা যা খবর দিচ্ছে, তাতে নাভিশ্বাস বাড়ছে বই কমছে না।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি এবং সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, এই দুই সংস্থার সমীক্ষা বেশ কিছু হাড়হিম করা তথ্য জোগান দিচ্ছে।
আরও পড়ুন আরও দু’বছর বাড়ানো যেতে পারে মোরেটোরিয়ামের মেয়াদ
এই দুই বিশ্বখ্যাত সংস্থার রিপোর্ট বলছে, করোনাজয়ী মানুষজনকে পোস্ট কোভিড সিনড্রোমের যে মারাত্মক ঢেউ দ্বিতীয়বার ধাক্কা দিচ্ছে, তার হাত থেকে রেহাই মিলছে না অনেকেরই। সারা জীবনের মতো হৃদযন্ত্রের ক্ষতি, স্ট্রোক, পালমোনারি ফাইব্রোসিস, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম ইত্যাদির ধাক্কায় বড়রা নাজেহাল। শিশুদের দিকে ধেয়ে আসছে মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, এদেশে এখনও পোস্ট কোভিড সিনড্রোমের কোনও খবর নেই।
তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ এখন জরুরি ভিত্তিতে এই নতুন স্বাস্থ্য সংকট রুখতে কোমর বাঁধছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও আধুনিকীকরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে কিছু নমুনা পরীক্ষা চালিয়েছিল আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। সেই পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, ৪০-৫০ বছরের স্বাস্থ্যবান করোনাজয়ীদের হঠাৎ করেই দেখা দিচ্ছে হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা। এমনটা তাঁদের আগে ছিল না। শতকরা হিসেবটাও বেশ কপালে ভাঁজ ফেলার মতো। ৭৮ শতাংশ ক্ষেত্রে এমন নজির স্পষ্ট হচ্ছে।
৬টা মহাদেশের ৬৯টা দেশে সমীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের হিসেব বলছে, ৫৫ শতাংশ করোনাজয়ীদের হৃদক্রিয়ায় গোলযোগ ধরা পড়ছে। তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশের তো আবার গোলযোগটা অতি মারাত্মক।
শুধু তাই নয়, করোনাজয়ীদের মধ্যে পোস্ট কোভিড সিনড্রোম হিসেবে পালমোনারি ফাইব্রোসিসের হারও ঊর্ধ্বমুখী। ফুসফুসের টিস্যু যাচ্ছে বিকল হয়ে। এরপর যখন তখন তাঁদের অক্সিজেনের দরকার পড়ছে। হয়তো সারাজীবনই অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতেই হবে হাতের গোড়ায়।
আরও পড়ুন বিধিসম্মত সতর্কীকরণ মেনে সম্পন্ন হল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির শেষকৃত্য
পোস্ট কোভিড সিনড্রোম হিসেবে হৃদক্রিয়ার সমস্যাটা এখনও অবধি খুব বেশি রকমের। সেই তুলনায় ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম এখনও অবধি ১০ শতাংশ। তবে ছোটদের মধ্যে মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোমের হারও বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত পোস্ট কোভিড গবেষণা সংক্রান্ত পেপারেও অনুরূপ আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা বলছেন, করোনা কাটিয়ে উঠলেও নার্ভ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম ক্ষমতায় স্থায়ী বৈকল্য দেখা দিচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে।
সুতরাং অবস্থা বেশ সঙ্গীন। করোনাকাল কাটলেও পৃথিবী আদৌ তার পুরনো সুস্থতায় ফিরবে কিনা, উত্তর নেই এখনও।