Home বঙ্গ জঙ্গলমহলের জন্য আদৌ ফ্যাক্টর হবেন শুভেন্দু? প্রশ্ন দলের অন্দরেই

জঙ্গলমহলের জন্য আদৌ ফ্যাক্টর হবেন শুভেন্দু? প্রশ্ন দলের অন্দরেই

by banganews

কৌশিক দত্ত, মেদিনীপুর 

 

মাতব্বরি করতে বিজেপিতে আসেননি। তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রথমেই এই বার্তা দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘ বিসর্জন ‘ দিতে যা করার দরকার তিনি করবেন, কাজ করবেন বিজেপি কর্মী হিসেবে। দীর্ঘদিনের দল ছেড়ে পর মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়ে এই ছিল শুভেন্দুর শপথ।

জঙ্গলমহল বলে পরিচিত এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হিসেবে দাপট ছিল শুভেন্দুর। তিনি বিজেপিতে যাওয়ার পর সেই দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত। তাঁদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের মতোই বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপির ভাল ফল হবে জঙ্গলমহলে। তবে একইসঙ্গে দলের অনেক নেতার মনেই সংশয় রয়েছে যে আদৌ কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন শুভেন্দু অধিকারী।
কারণ ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় আদি বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কোন্দল বেঁধেছে ‘ দাদার অনুগামী ‘ বলে পরিচিতদের। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের মকরামপুরে। শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেও বিক্ষোভ হয়েছে। শুভেন্দুকে মীরজাফর আখ্যাও দেওয়া হয়েছে ।

আরও পড়ুন করোনার নয়া স্ট্রেন নিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক, লন্ডন ফেরত ২০ জন করোনা পজিটিভ

শুভেন্দুর সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের আরও তিন বিধায়ক ( একজন তৃণমূল কংগ্রেসের, দুজন সিপিআইএম -এর) এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের চার জেলা পরিষদ সদস্যও তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন বাঁকুড়ার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা জয়ন্ত মিত্র। এই জয়ন্ত মিত্রর বিরুদ্ধেই শ্লোগান তুলে মিছিল করেছেন বাঁকুড়া জেলার বিজেপি কর্মীরা । যা দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই দলবদলে উল্টে লাভ হবে তাদের দলেরই। এমনকি বর্ষীয়ান বিজেপি নেতাদের একাংশও নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে বলছেন, এতে তাঁদের দলেরই ক্ষতি হবে।

পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা জঙ্গলমহল এলাকা বলে পরিচিত। এই চার জেলার ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে ২০১৯-এর ভোটে জিতেছিল বিজেপি । পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই এলাকায় বেশ ভাল ফল করে পদ্ম শিবির।

এবার বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর দু’পক্ষেরই প্রেস্টিজ ফাইট। তাই জিততে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দু’পক্ষই।

এই এলাকায় গত দশ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তাই তাঁদের প্রচারের হাতিয়ার হবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। ” এই এলাকায় ভোটে একটাই ফ্যাক্টর কাজ করবে। সেটা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর উন্নয়নমূলক কাজ” , জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরী। ” শুভেন্দু ফ্যাক্টর” কোনও কাজ করবে না বলে দাবি তৃণমূলের।

যদিও বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের দাবি, শুভেন্দু যে একটা বড় ফ্যাক্টর সেটা বিধানসভা নির্বাচনে টের পাবে তৃণমূল। ” শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দলে আসার সুফল আমরা পাব। জঙ্গলমহলকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। নিশ্চয়ই তার প্রভাব পড়বে”, জানিয়েছেন বিজেপি নেতা অরূপ দাস।

পূর্ব মেদিনীপুরে 2016 সালে বিধানসভা নির্বাচনে 16টির মধ্যে 13 টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। তিনটি আসন জেতে বামফ্রন্ট। এদের মধ্যে দুজন এখন শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপিতে। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় চোদ্দটি আসনে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। এই জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা বিধায়ক অখিল গিরি বলছেন, শুভেন্দু চলে যাওয়ার পর ফের সক্রিয় হচ্ছেন নিষ্ক্রিয় কর্মীরা। এমনকি যারা চলে গিয়েছিলেন তাদের অনেকেও তৃণমূলে ফিরছেন।

আরও পড়ুন ব্রেকিং! মহারাষ্ট্রের পর এবার এই রাজ্যেও চালু নাইট কারফিউ

বিজেপিতে যোগ দিলেও এখনও কোনও পদ পাননি শুভেন্দু অধিকারী। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শনিবার একটি বৈঠকে বসছেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব । সেখানে শুভেন্দু অধিকারীকে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র জঙ্গলমহলে পদ্ম ফোটাতে পারেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ই দিতে পারবে।

You may also like

Leave a Reply!