Home পাঁচমিশালি দেশে বিদেশে পুতুলনাচ দেখাচ্ছেন বাংলার দুই মেয়ে

দেশে বিদেশে পুতুলনাচ দেখাচ্ছেন বাংলার দুই মেয়ে

by banganews

ছোটো বেলায় পুতুল নিয়ে খেলেননি এমন মানুষ বোধ হয় খুবই কম আছেন। মাটির, কাঠের, কাপড়ের বা তুলোর উপকরণ যাই হোক না কেন, মানুষের অনুরূপ গড়তে পারলেই হল। আর সেই পুতুলই যখন তারের টানে কিংবা হাতের যাদুতে হাত পা নাড়ায়, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দেখায়, তখন আট থেকে আশি সকলের মধ্যেই হুড়োহুড়ি লেগে যায় সামনের লাইনে বসা নিয়ে।

জয়নগরের মন্দির বাজারে বসেছে গোষ্ঠ মেলা। কাঁচের চুড়ি থেকে নাগরদোলা সবই আছে মেলাতে৷ কিন্তু সকলেই বাদাম ভাজা কিনে দৌড়ে যাচ্ছে মেলা মাঠের এক কোণে। সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে চলছে পুতুল নাচ।টিকিট কেটেই দর্শক ঢুকে পড়ছে আসরে। সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে, আর সেই গানের তালে তালেই নেচে উঠছে পুতুলের কোমর, কখনও আবার ঝগড়া করছে দুই সতীনে। আবার ভাব পাতাচ্ছে সইয়ের সঙ্গে। অন্যদিকে দর্শক থাকতে থাকতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে, পড়ছে হাততালি।

এই রকমই জমজমাট পুতুল নাচের আসর করে বেড়াচ্ছে দুই বোন স্বর্ণশ্রী ও রাজশ্রী। দক্ষিণ দব্বিশ পরগনার জয়নগর ব্লকে বকুল তলা থানার মঙ্গলহাট এলাকায় বাড়ি এই দুই বোনের। বাবা নিরাপদ মন্ডল পেশায় একটি অবৈতনিক স্কুলের শিক্ষক। বড় মেয়ে স্বর্ণশ্রী কলকাতা গর্ভমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর ছোটো মেয়ে রাজশ্রী পড়ছে পশ্চিম গাববেড়িয়া হাই স্কুলের নবম শ্রেনিতে। পুতুল নাচের ব্যবসাটি ছিল নিরাপদ বাবুর, এখন স্বর্ণশ্রী ও রাজশ্রী দুই মেয়ে জাঁকিয়ে ধরেছে ব্যবসার হাল।

মন্ডলহাট এলাকার স্বর্ণশ্রী ও রাজশ্রীদের বাড়ি এক ডাকে পুতুল বাড়ি নামে পরিচিত৷ বংশ পরম্পরায় চলে আসছে তাদের এই ব্যবসা। প্রতি রবিবার নিয়ম করে বসে রিহার্সাল পালা। গ্রামের সব লোক মহা আনন্দের জড়ো হয় পুতুল নাচ দেখতে। পুতুল নাচের সুবাদেই দুই মেয়ে ইতিমধ্যেই পারি দিয়েছে ভিন রাজ্যেও। বাবার সঙ্গে দিল্লি, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ, মুম্বাইও পাড়ি দিয়েছে তারা। ছোটোবেলা থেকে বাবাকে দেখেই তাদের পুতুল নাচের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
পুতুল নাচকে আধুনিক যুগের সমসাময়িক করে তুলতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। যেমন কাঠের পুতুলের মাথার ওজন হত ২৫ অথবা ৩০ কিলো। যা বইতে কষ্ট হত তাই এখন থার্মোকলের পুতুল তৈরির ওপরে জোর দিচ্ছেন। রড, পাপেট, গ্লাভস ও শ্যাডো, এই চার প্রকারের পুতুল নিয়ে নাচ দেখানোর প্রচলন থাকলেও তাঁরা রড ও পাপেট নিয়েই শো করে থাকেন।

পুতুলনাচের সঙ্গে পালা অনুযায়ী গানও বাঁধতে হয় দুই বোনকে। রাজলক্ষ্মী, হরিশচন্দ্র, গুপি গায়েন, অরণ্যে রোদন, কাবুলিওয়ালা, বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর পালা করেন৷ কন্যাশ্রী প্রকল্পের বৃত্তান্তও পুতুল নাচের মাধ্যমে তুলে ধরেছে দুই বোন। বাংলার এক লোকসংস্কৃতির ধারাকেও টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেছেন।

You may also like

Leave a Reply!