বড় মা। শুধু নৈহাটি নয়, সারা বাংলা চেনে এক ডাকে। নৈহাটি মূলত মা কালীর নিজস্ব ক্ষেত্র। চন্দননগর যেমন জগদ্ধাত্রীর, নৈহাটি তেমনই কালীপুজোর জন্য বিখ্যাত।
আর সেই কালীক্ষেত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত কালী বড় মা। রবিন্দ নগর রোডের পঁয়ত্রিশ ফুট কালী বরাবর এই নামেই পরিচিত। নৈহাটির সবচেয়ে দীর্ঘ, সবচেয়ে প্রাচীন আর সবচেয়ে শ্রদ্ধার কালীপুজো।
এতটাই শ্রদ্ধার যে, বড় মা বিসর্জনের আগে শহরের আর কোনও ঠাকুরের বিসর্জনই হয় না। সবার আগে পথ ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
তবে আশ্চর্যের কথা হল, এত জনপ্রিয় আর এত আড়ম্বরের পুজোয় কোনও চাঁদা নেই কিন্তু। বড় মা পূজো কমিটির কেউ কোনওদিন চাঁদার রসিদ হাতে বেরোননি। তাহলে পুজোর খরচা সম্পন্ন হয় কী করে?
যে যার ইচ্ছামতো প্রণামী দান করে বড় মায়ের বাক্সে। প্রণামীর টাকা পাঠায় কমিটিকে। এই স্বেচ্ছা দানের ওপর নির্ভর করে প্রতি বছর হয়ে আসছে বড় মায়ের পুজো। গত বিরানব্বই বছর ধরে এটাই রীতি।
কালীঘাটের বস্তিতে আগুন, মৃত এক বৃদ্ধা
মানুষ দেয়ও। বড় মা যে খুব জাগ্রত। মানুষ শ্রদ্ধাভরে যা কিছু চাইবে, মনস্কামনা পূরণ হবে। বড় মা কাউকে ফেরান না। এই জনশ্রুতি আর বিশ্বাস সারা বাংলার। হাতে হাতে ফল পাওয়া মানুষজন ভালোবেসে বড় মায়ের একের পর এক অলঙ্কার গড়িয়ে দিয়ে যায়। সোনা আর রুপোর।
এই তো, গত বছরেই মোট দুশো কেজি ওজনের রুপোর গয়না পরেছিলেন বড় মা। তাই তো পুজো কমিটি থেকে যথার্থ শব্দকটাই স্লোগান করে রেখেছে—ধর্ম হোক যার যার/বড় মা সবার।
দীপাবলীতে বাজি রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা লালবাজারের, জেনে নিন কি সেই ব্যবস্থা
বড় মায়ের কাছে তাই ধর্মবর্ণনির্বিশেষে ভিড়। ভিড়ে ভিড়াক্কার। এ ভিড় বেশ ঐতিহাসিক। এবছরটায় সেই ভিড় সামাল দেওয়াই কর্তৃপকঃষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বড় মায়ের পুজো এবং অঞ্জলি সবটাই ডিজিটাল আর লাইভ করে দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে আগেই। পুজো প্রাঙ্গনের পাঁচ মিটার দূরত্ব অবধি ফাঁকা রাখার ঘোষণাও হয়েছে। এমনকী হোয়াটসঅ্যাপে নাম-গোত্র লিখে পাঠানোর নিদানও দেওয়া হয়েছে। প্রণামী পাঠানোর জন্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ।
তবু সাধারণ পল্লিবাসীকে সত্যিই বড় মা‘র থেকে কতটা দূরে রাখা যাবে, তা নিয়ে একেবারেই নিশ্চিত নয় পুজো কমিটি। বড় মায়ের আকর্ষণ যে অনেক বড়!